প্রাক্তন অধিনায়ক ও মেলবোর্নের সানি-সঙ্গীর কথায় উগ্র অস্ট্রেলিয়ার বর্ণনা

তিক্ততা বাড়িয়ে দিল কর্তাগুলো

তাঁর অধিনায়কত্বেও ভারত হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে পড়েনি। ফোনে কথা বললেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন।তাঁর অধিনায়কত্বেও ভারত হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে পড়েনি। ফোনে কথা বললেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০৪:২৩
Share:

বিরাট কোহালির মন্তব্যটা শুনে অবাকই হলাম। মাঠের বাইরেও বন্ধুত্ব আর হবে না— এমন কথা সত্যিই কখনও শুনিনি। বলার চেষ্টা করছি না যে, বিরাট সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছে। বরং বিরাটের মনে কী গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে, সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে বিরাটকেও অনেক অন্যায় আক্রমণ সহ্য করতে হয়েছে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার পর্যন্ত দুম করে বলে বসলেন, বিরাট নাকি ‘সরি’ বানান করাও শেখেনি। বিরাট যে বলেছে ‘ওদের সঙ্গে মাঠের বাইরেও আর বন্ধুত্ব নয়’ সেটার জন্য এই সিইও মশাইও দায়ী। এমন কথা কোনও দেশের অধিনায়ককে নিয়ে বলার ধৃষ্টতা হয় কী করে?

আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম, তখনও স্লেজিং হয়েছে। যদিও আমাকে খুব একটা স্লেজ করেনি কেউ। আমিও কখনও খারাপ কথা বলিনি মাঠে দাঁড়িয়ে। ১৯৯৮-এর যে সিরিজটায় আমরা মার্ক টেলরের অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ হারিয়েছিলাম, ওদের সেই দলটায় মার্ক ওয়, স্টিভ ওয়, রিকি পন্টিং-রা ছিল। পরে এই তিন জনই স্লেজ মাস্টার হয়ে উঠেছিল। আমাদের সঙ্গে সেই সিরিজটায় কিন্তু খুব বড় কোনও বিতর্ক হয়নি।

Advertisement

অথবা অ্যাডিলেডের সেই টেস্ট ম্যাচ। চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৩ তাড়া করতে গিয়ে আমরা দারুণ এগোচ্ছিলাম। আমি সেঞ্চুরি করার পরে আউট হয়ে গেলাম। ম্যাচটা হেরে যাই ৩৮ রানে। অমন রুদ্ধশ্বাস টেস্টেও হাতের বাইরে চলে যাওয়া কোনও পরিস্থিতি মনে করতে পারছি না। আর ওই ম্যাচটায় অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসারের নাম ছিল ক্রেগ ম্যাকডারমট, মাইক হুইটনি আর মার্ভ হিউজ। ওরাও উগ্রতা দেখাত। খুব বন্ধুত্বপূর্ণ চাহনি বা কথাবার্তা ওদের কাছ থেকে ব্যাটসম্যানদের জুটেছে বলে কখনও শুনিনি। কিন্তু তিক্ততা কখনও মাঠের বাইরে পৌঁছয়নি।

এই সিরিজে দু’দলের সম্পর্ক এমন নজিরবিহীন ভাবে ভেঙে পড়া নিয়ে আমার আরও একটা কথা মনে হচ্ছে। আইসিসি একেবারেই ব্যাপারটা সামলাতে পারেনি। নাকি সেই তাগিদটাই দেখাল না? বেঙ্গালুরুতে যখন ডিআরএস নিয়ে ঝামেলা বাধল, তখনই দুই ক্যাপ্টেনকে নিয়ে বসে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া উচিত ছিল যে, এ সব চলবে না। লাগাম ধরে রাখতে হবে দুই ক্যাপ্টেনকে।

ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসন নাকি দুই অধিনায়ককে নিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু শুধু ম্যাচ রেফারির ওপর ছাড়াটা ঠিক হয়নি। এ রকম একটা সিরিজে আইসিসি মহাকর্তাদেরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল। শুধু বড় বড় বিবৃতি আর প্রেস রিলিজ দিয়ে তো লাভ নেই যে— এটা করতে হবে, সেটা করতে হবে। ক্রিকেটারদের বুঝিয়ে ঠান্ডা করার দায়িত্বটা এড়াতে পারে না কর্তারাও।

আমার যদিও মনে হয়, সিরিজের এই উত্তপ্ত আবহাওয়ার আঁচ চলছে বলেই এখনও গরম গরম বিবৃতি দিচ্ছে সকলে। মঙ্গলবার ম্যাচ জেতার পরেও তো স্মিথ আর ওকে হাত মেলাতে দেখলাম। তখনও সৌজন্যের অভাব ঘটেনি। আমি নিশ্চিত দুই অধিনায়ক অনেক পরিণত ব্যবহার করবে এবং এই তিক্ততা ছেড়ে বেরিয়ে আসবে।


বিশ্বসেরা: টেস্টে এক নম্বরের স্মারকও হাতে উঠল কোহালির। ছবি: পিটিআই।

সিরিজের সব চেয়ে ভাল ম্যাচ হিসেবে অনেকে বেঙ্গালুরুকে বাছবেন। কারণ, ওই ম্যাচটাতেই দুর্দান্ত ভাবে কামব্যাক করল বিরাটের ভারত। আমার কাছে সেরা টেস্ট কিন্তু শেষেরটা। ধর্মশালায় খুব উপভোগ্য ম্যাচ হল ভাল একটা পিচে। ভাল ব্যাটিং যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই পেস-স্পিন দু’ধরনের বোলাররাই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে নতুন বলে উমেশ যাদবের স্পেলটা ম্যাচের সেরা।

ভারতের এই দলটার আসল সম্পদ হচ্ছে অলরাউন্ড দক্ষতা। তবে ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করা যেতে পারে অনেক। বিশেষ করে স্লিপ ফিল্ডিংয়ে। এখনকার স্লিপ ফিল্ডাররা দেখি নিচু হয় না। ভারতের উইকেটে বল তো আর অস্ট্রেলিয়ার মতো উঁচু বাউন্সে আসবে না! দু’দিকের দুই সেরা ব্যাটসম্যান বাছতে হলে স্টিভ স্মিথ আর কে এল রাহুলের নাম বলব। চেতেশ্বর পূজারা হয়তো বেশি রান করেছে, ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছে। সেখানে রাহুলের একটা সেঞ্চুরিও নেই। কিন্তু ও বোলারদের ওপর বেশি কর্তৃত্ব করতে পেরেছে। তবে রাহুলের মনঃসংযোগটা ঠিক করতে হবে।

রবীন্দ্র জাডেজাও দারুণ উন্নতি করেছে। একটা হিসেব দেখছিলাম যে, দেশের মাটিতে ১৩টা টেস্টে অশ্বিন নিয়েছে ৮৩ উইকেট, জাডেজা ৭১ উইকেট আর উমেশ পেয়েছে ৩০ উইকেট। বিদেশে গেলে স্পিনাররা এত উইকেট পাবে না। তখন উমেশদের ওপর বেশি নির্ভর করতে হবে। বিদেশে গিয়ে জাডেজাকে ফ্লাইটের ওপর জোর দিতে হবে। স্লো বোলিং করলে ওর কার্যকারিতা কতটা থাকে, দেখতে চাই।

তবু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে খামতিগুলোর কথা না হয় থাক। এত ভাল একটা সিরিজ জিতল আমাদের ছেলেরা। তা-ও ০-১ পিছিয়ে পড়ে। আর ভুলে গেলে চলবে না পুণেতে ভারত হেরে গিয়েছিল ৩৩৩ রানে। অগ্রজ হিসেবে ওদের আজ একটাই কথা বলার— ভেরি ওয়েল ডান।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন