‘কপিলের পরে এমন ডাকাবুকো আর দেখিনি’

এজবাস্টনে বৃহস্পতিবার অসাধারণ সেঞ্চুরির পরে দ্বিতীয় ইনিংসেও একা কুম্ভ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিরাটকে দেখতে দেখতে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে  কপিল দেবের কথা।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

কপিল দেবকে মনে করাচ্ছেন বিরাট। ছবি: রয়টার্স।

যে কোনও দলের অধিনায়কের সবচেয়ে বড় গুণ হল তাঁর আত্মবিশ্বাস ও অদম্য মনোভাব। যার প্রভাব দলের উপরেও পড়ে।

Advertisement

যেমন বিরাট কোহালি। এজবাস্টনে বৃহস্পতিবার অসাধারণ সেঞ্চুরির পরে দ্বিতীয় ইনিংসেও একা কুম্ভ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিরাটকে দেখতে দেখতে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে কপিল দেবের কথা।

কপিলের নেতৃত্বে আমি অনেক খেলেছি। ওঁর আত্মবিশ্বাস আর জেদের প্রভাব কী ভাবে দলের শরীরী ভাষাটাই পাল্টে দিত, সেটা সামনে থেকে দেখেছি। এই ভারতীয় দলের উপরেও যেন কপিলের মতোই প্রভাব বিরাটের। এক জন অলরাউন্ডার, অন্য জন প্রকৃত ব্যাটসম্যান। তাই হয়তো তুলনা করা যাবে না পুরোপুরি। তবে দু’জনেই উত্তরাঞ্চলের ক্রিকেটার এবং আমি নিজেও একটা সময়ে ওই অঞ্চলের ছিলাম বলে দু’জনের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছি। সব চেয়ে বড় মিল হচ্ছে, কঠিন পরিস্থিতিতেও হার না মানা মনোভাব। এই অদম্য মানসিকতাই অধিনায়ক কপিলকে দিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের মতো অসম্ভবকে সম্ভব করিয়েছিল।

Advertisement

কপিলের অধিনায়কত্ব নিয়ে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একটা অংশ বরাবরই নাক কুঁচকেছে। খুব বড় কোনও ক্রিকেট মস্তিষ্ক নাকি কখনওই কপিল দেব ছিলেন না। এই সব পন্ডিতরা কখনও মনে রাখেননি যে, কপিল ‘দিল’ দিয়ে ক্রিকেট খেলতেন। এমন ডাকাবুকো ভারতীয় ক্রিকেটার খুব কমই এসেছেন, যিনি লর্ডসে ফলো-অন বাঁচাতে ২৪ রান বাকি থাকা অবস্থায় পর-পর চারটি ছক্কা মেরে সেই রান তুলে দিতে পারেন।

লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালে ১৮৩ অলআউট হয়ে যাওয়ার পরেও কপিল টিমের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর বিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিরাটের মধ্যে সেই ডাকাবুকো ক্রিকেটারকেই দেখতে পাই আমি। এজবাস্টনে যে রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দু’বার কোহালি একা কুম্ভ হয়ে উঠলেন, তাতে আমাদের সেই ‘দিল লগাকে খেলো’ মনোভাব। আর একটা পন্ডিতদের খুব বলতে ইচ্ছে করে, অধিনায়কত্বের মস্তিষ্ক না থেকেও কপিল দেব দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন, ইংল্যান্ডের মাটিতে ২-০ টেস্ট সিরিজ জিতেছেন। কী করে?

কোহালির নেতৃত্বে ভারত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এবং টেস্টে সমান ভাবে সেরা শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অধিনায়ক থাকার সময়ে যেটা শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দেখা যেত। ঠিক যে ভাবে কপিলের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল নতুন ভারত। ১৯৮৩-তে বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিল ভারতীয় দল। সেই সফরে কপিল বারবার আমাদের বলতেন, ‘‘চলো, লড়তে হ্যায়। কখনও হারের কথা ভাবলে হবে না।’’ অনেকেই হয়তো জানে না, বিশ্বকাপ জয়ের বীজ বোনা হয়েছিল ওই ক্যারিবিয়ান সফরেই। সেই সফরেই আলবিয়নে আমরা ওয়ান ডে ম্যাচে হারিয়েছিলাম দুর্ধর্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আমি সেই ম্যাচটায় খেলেছিলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পুরো টিম খেলেছিল। রিচার্ডস, গ্রিনিজ, হেইনস, লয়েড, মার্শাল, রবার্টস, হোল্ডিং। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের মধ্যে বিশ্বাসটা জন্ম নেয় সেই ম্যাচটা জয়ের পর থেকেই। কপিলই আমার দেখা প্রথম ভারত অধিনায়ক, যিনি জেতার কথা ভাবতে শিখিয়েছিলেন। তাঁর পূর্বসূরিদের কাউকে ছোট করতে চাই না। কিন্তু কপিলের আগে ভারত অধিনায়কদের মনোভাবটা ছিল, আগে ম্যাচ বাঁচাই। তার পরে জেতার কথা ভাবা যাবে। তার পর বিরাটকেই দেখছি, যিনি একেবারেই হারের কথা ভাবেন না। কপিলের মতোই সহজাত প্রবণতা দিয়ে ক্যাপ্টেন্সি করেন।

ক্রিকেট বিশ্বে এখন তর্ক চলছে, সচিন তেন্ডুলকরের সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙার যোগ্য উত্তরসূরি কি কোহালিই? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যৎই বলবে। তবে একটা কথা এখনই লিখে ফেলতে আমার দ্বিধা নেই। কপিলের পরে এত ডাকাবুকো ভারতীয় ক্রিকেটার আর দেখিনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন