ফুটে উঠেছে মাস্টারের আবেগটাই

ফিল্মটা দেখার পর আমি সন্তুষ্ট। সচিন এমন একটা নাম যাকে নিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি তথ্য পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। তাই সচিনকে নিয়ে বায়োপিক বানানো খুব সহজ কাজ নয়। তাতেও ‘সচিন আ বিলিয়ন ড্রিমস’ চেষ্টা করেছে কিংবদন্তি এ রকম ক্রিকেটারের জীবনের অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরার।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৭ ০৫:০১
Share:

মুম্বইয়ের ক্রিকেটমহলে একটা কথা খুব প্রচলিত— ‘আপনা সচিন।’ মানে আমাদের সচিন। অনেক প্রত্যাশা নিয়েই মুম্বইয়ের সেই ছেলেটার ফিল্ম দেখতে গিয়েছিলাম।

Advertisement

দেখার ইচ্ছা ছিল কী ভাবে একশো কোটির প্রত্যাশার চাপ সামলে এতদিন শ্রেষ্ঠত্বের শৃঙ্গে থাকতে পেরেছে একজন ক্রিকেটার? অন্ধকার সময় কী ভাবে কাটিয়ে উঠত সচিন? ক্রিকেটের বাইরেই বা ঠিক কেমন আমাদের লিটল মাস্টার?

ফিল্মটা দেখার পর আমি সন্তুষ্ট। সচিন এমন একটা নাম যাকে নিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি তথ্য পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। তাই সচিনকে নিয়ে বায়োপিক বানানো খুব সহজ কাজ নয়। তাতেও ‘সচিন আ বিলিয়ন ড্রিমস’ চেষ্টা করেছে কিংবদন্তি এ রকম ক্রিকেটারের জীবনের অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরার। ফিল্মটা ক্রিকেটভক্তদের ভাল লাগবেই। সচিনের রোম্যান্স দেখে যেমন ভক্তদের মুখে হাসি ফুটবে। পাকিস্তানের স্লেজিং সামলে সচিনের হাফসেঞ্চুরি আবার উঠতি ক্রিকেট তারকাদের উদ্বুদ্ধ করবে।

Advertisement

ধোনি আর আজহারকে নিয়েও তো আগে সিনেমা হয়েছে। তবে তার থেকে এই ফিল্ম আলাদা। কারণ এখানে সচিনের ভূমিকায় কেউ অভিনয় করেনি। প্রথম পনেরো মিনিট সচিনের ছোটবেলাটা শুধু অভিনয় করে দেখানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সচিনের প্রবেশের সময়টা দেখানোর পর থেকে সিনেমাটায় ডকুমেন্টারি দেখানো শুরু। যেখানে সচিনের ক্রিকেট খেলার সত্যিকারের ভিডিওগুলো দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাবা-মায়ের রোমান্সটাই সবচেয়ে ভাল, বললেন সচিন-কন্যা সারা

ছোটবেলার সচিন কতটা দুষ্টু ছিল, নটআউট থেকে আচরেকর স্যরের কয়েন পেয়ে পাও ভাজি খাওয়া, ৭০-৮০ জনের মধ্যে নেট করা— এই সব মুহূর্তগুলো আমার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। প্রথম ট্যুরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সচিনের হাফসেঞ্চুরিও আবার উদ্বুদ্ধ করেছে। গোটা ফিল্মে দাদা অজিত তেন্ডুলকরের প্রতি সচিনের গভীর শ্রদ্ধাটা ভাল ভাবে ফুটে উঠেছে।

সচিন যখন অধিনায়কত্ব হারায় তখন আমিও জাতীয় নির্বাচক ছিলাম। আমরা পাঁচজন নির্বাচক দল মিলেই ঠিক করেছিলাম যাতে স্বাধীনভাবে সচিন খেলতে পারে। অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে ওকে তাই মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। সচিন সেই বিষয়টাও ছুঁয়েছে। কিন্তু তখন আমার উপর একটু হলেও রাগ করেছিল ও।

সচিনের জীবন মানে তো পুরো রোলার কোস্টার। সিনেমা হলে দু’ঘণ্টা কী ভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। কখনও মনে হয়নি একঘেয়ে লাগছে। বরং সচিনের এই যাত্রাটা সত্যিই দারুণ।

এক জন ঠিক কতটা ক্রিকেটপ্রেমী হতে পারে সেটাই বড় পর্দায় ধরা পড়ল। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময় বাবাকে হারিয়েছিল সচিন। মায়ের কথায় আবার ইংল্যান্ডে ফিরেছিল। ২০০৭ বিশ্বকাপে খারাপ ফলের পরে এক সপ্তাহ বাড়ির থেকে বেরোয়নি সচিন। ভাগ্যিস ভিভ রিচার্ডস ওকে ফোন করেছিল। না হলে আরও কত সুন্দর ইনিংস দেখার থেকে বঞ্চিত থাকতে হতো।

ক্রিকেটার সচিনের বাইরেও আর এক অচেনা লিটল মাস্টারও প্রাপ্তি এই ফিল্মের। প্রথম দেখায় সচিনকে চিনতে পারেনি অঞ্জলি। ধীরে ধীরে সচিনকে চেনা। তার পরে ডেটিং পর্ব। ভয়ে নিজের বাড়িতেই অঞ্জলিকে বিয়ের কথা বলতে জোর করা। দুই সন্তানকে কী ভাবে আগলে রেখেছে সচিন সেটাও দেখার মতো। অর্জুনের সঙ্গে কখনও নরম আবার দরকার পড়লে শক্ত হতেও ভাবে না সচিন। তবে এমন অনেক জায়গা আছে যেগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যেমন বিনোদ কাম্বলি। আবার সেই ম্যাচ গড়াপেটার পর্বটাও কী ভাবে সচিনকে আঘাত করেছিল সেটার মধ্যেও খুব বেশি যাননি পরিচালক।

ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেনের একটা কথা আছে সিনেমাটায়— সচিনের হার মানা মানে ভারতের হার মানা। সচিন ব্যাট করা মানে গোটা ভারতই যেন ওর সঙ্গে মাঠে থাকত। ফিল্মটা তাই ভক্তদের জন্য সচিনের সেরা উপহার হয়ে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন