‘হুদহুদ’ নামক মারণ ঘূর্ণিঝড় যে শহরকে তছনছ করে দিয়েছে, সেই শহরে দু’দিনের মধ্যেই যে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ান ডে আয়োজন করা অসম্ভব, তা বুঝে উঠতে ভারতীয় বোর্ডের লেগে গেল প্রায় দশ ঘন্টা। রবিবার রাতে বোর্ডের যুগ্মসচিব অনুরাগ ঠাকুর জানিয়ে দিলেন, “বিশাখাপত্তনমে আবহাওয়ার যা অবস্থা, তাতে আর ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছে না। ওখানকার ওয়ান ডে বাতিলই করতে হল। সিরিজ চার ম্যাচেরই হচ্ছে।”
দুপুর পর্যন্ত অবশ্য ছবিটা অন্য রকম ছিল। বাড়ি থেকে ফিরে টিম হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে বিরাট কোহলি বলছিলেন, “আজ আমাদের যাওয়া হচ্ছে না, কাল রওনা হব।” লাঞ্চ সেরে নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য লিফটে ওঠার আগে শিখর ধবন বললেন, “টিভিতে দেখছিলাম, বাপ রে, বিশাখাপত্তনমে কী কাণ্ডই না হচ্ছে। খেলা হবে কী করে?”
তখন সদ্য অন্ধ্রের উপকুল শহরে তাণ্ডব শুরু করেছে ‘হুদহুদ’ নামক দানব। এক সাপোর্ট স্টাফের কাছে শোনা গেল, টিভিতে সেই তাণ্ডবের লাইভ কভারেজের দিকেই চোখ ভারতীয় দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের। তখন যে তাঁরা জানেন, রাত পোহালে ওই বিধ্বস্ত নগরীতেই পা রাখতে হবে তাঁদের। ক্রমশ ছবিটা বদলাতে শুরু করল। টিম হোটেলের লবিতে ঘোরাঘুরি করছিলেন, ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার। বললেন, “আজ যাচ্ছি না, এটা জানি। কিন্তু কালও আমরা যেতে পারব কি না জানি না।” দলের মিডিয়া ম্যানেজার আর এন বাবা অবশ্য সন্ধ্যা পর্যন্ত বলে গেলেন, “কাল দুপুর একটার বিমানে আমরা ভাইজ্যাগ যাচ্ছি।” ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কর্তা ট্রেভর স্পুনি বেশ বিরক্ত। বলছিলেন, “আমাদের কোনও আপডেটই দেওয়া হচ্ছে না। কী হচ্ছে কিছুই জানি না।”
সচিব সঞ্জয় পটেল দুবাইয়ে। আপাত ক্ষমতাহীন প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসনও সেখানেই। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার লোক নেই। বিকেলেই বিশাখাপত্তনম থেকে ফোনে অন্ধ্র ক্রিকেট সংস্থার মুখপাত্র সি আর মোহন বললেন, “বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেবে জানি না, তবে এখানে যা অবস্থা, তাতে ম্যাচ হওয়া কঠিন।” বিমানবন্দরের যা হাল, তাতে সোমবারও সেখানে বিমান নামতে পারবে কি না, তার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি এয়ারপোর্ট অথরিটি। শোনা গেল, স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের টাওয়ারও না কি ঝড়ের ধাক্কায় নড়ে গিয়েছে। পুরো মাঠের ঢাকাও ঝড়ে উড়ে গিয়েছে বলে জানান মোহন। ফলে মাঠের অবস্থারও দফা-রফা। এই অবস্থায় ম্যাচ করা অসম্ভব। সেটা সরকারি ভাবে জানাতে বোর্ডের প্রায় রাত কাবার হতে বসল।
অথচ এক দিন আগেই অন্ধ্রের কর্তারা জোর গলায় বলেছিলেন, ম্যাচ আয়োজন করতে তাঁরা প্রস্তুত। সে জন্যই ম্যাচ সরানো হয়নি বলে দাবি করছে বোর্ড। অনুরাগ ঠাকুর বললেন, “ওরা পারবে বলেছিল বলেই ম্যাচ সরানো হয়নি।” কিন্তু বোর্ড রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক কর্তা জানালেন, “এক জায়গায় দুটো ম্যাচ দিয়ে কাউকে চটানো হবে না বলেই দিল্লিতে এই ম্যাচটা করা হল না। তা না হলে দিল্লিতে ম্যাচ করা যেত। সবই তৈরি ছিল।” ডিডিসিএ প্রধান চেতন চৌহান অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইলেন না। অবশেষে টিভি সম্প্রচার সংস্থা যখন জানিয়ে দেয়, মাত্র এক দিনের মধ্যে স্টেডিয়ামে তাদের সেট আপ তৈরি করা সম্ভব নয়, তখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বোর্ডের এক কর্তার মন্তব্য, “টিভি সংস্থার জন্যই তো এই সিরিজ। সেই তারাই যদি বেঁকে বসে, তা হলে আর ম্যাচ করে লাভ কী?”
পরের ম্যাচ ধর্মশালায়, শুক্রবার। তাই আপাতত ভারতীয় শিবিরে ছুটির মেজাজ। ক্রিকেটাররা কয়েক দিনের জন্য বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে আসতে চান। রবিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য সেই অনুমতি মেলেনি বলেই খবর।