তিন মহাতারকার ডার্বি

তিন মহাতারকা। নিজেদের সময়ে ডার্বির ভাগ্য একাই ঘুরিয়ে দিয়েছেন বহু বার। কিন্তু ফুটবলের বাইরে কী রকম ছিল তাঁদের ডার্বি প্রস্তুতি? ময়দান কাঁপানো তিন বিদেশি ফুটবলার সেই অজানা কথা বললেন সোহম দে-কে।তিন মহাতারকা। নিজেদের সময়ে ডার্বির ভাগ্য একাই ঘুরিয়ে দিয়েছেন বহু বার। কিন্তু ফুটবলের বাইরে কী রকম ছিল তাঁদের ডার্বি প্রস্তুতি? ময়দান কাঁপানো তিন বিদেশি ফুটবলার সেই অজানা কথা বললেন সোহম দে-কে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৫
Share:

শপিংয়ে যেতাম, সিনেমা দেখতাম

Advertisement

জোসে রামিরেজ ব্যারেটো

ডার্বি মানেই স্পেশ্যাল একটা ম্যাচ। কিন্তু ফুটবলার হিসেবে সেই চাপ থেকে যতদূরে থাকা যায় তত ভাল। আমি অন্তত সেই চেষ্টাই করতাম। ডার্বির আগে আমার মন্ত্র ছিল, ‘‘বি রিল্যাক্সড।’’ মাথা ঠান্ডা রাখতাম। সেই দর্শক ভরা গ্যালারির কথা মাথায় থাকত না। ডার্বির আগের দিনটা যতটা পারতাম ফুটবলের থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতাম। ভাবতাম ঠিক আছে, ডার্বি তো অন্য কোনও ম্যাচের মতোই। হাল্কা ট্রেনিং করতাম। কোচের সঙ্গে আলোচনা করতাম। সিনিয়র হলাম যখন, দায়িত্ব আরও বাড়ল। ট্রেনিংয়ের পর জুনিয়র প্লেয়ারদের সঙ্গে কথা বলতাম। কোথায় আরও উন্নতি করা যায়। কোথায় ভুল হচ্ছে। এই সব ধরিয়ে দেওয়া আর কী। কিন্তু ওই যে ট্রেনিং হল ব্যস। তারপর সেই দিনের জন্য ফুটবলকে সুইচ অফ করে রাখতাম মগজ থেকে।

Advertisement

বিকেলের দিকে শপিং করতে যেতাম। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। তবে ফুটবল নিয়ে নয়। ভাল কোনও সিনেমা দেখতাম। এতে রিল্যাক্সড থাকা যেত। কিন্তু ফুটবল মাথায় না থাকলেও, খাবার নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতাম না। একটু এ-দিক থেকে ও-দিক মানে পেট খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। তাই হোমমেড খাবার। দুপুরে পাস্তা। রেড মিট নয়। রাতের দিকেও হাল্কা কিছু। ডার্বিতে বিদেশিদের মধ্যে আমার থেকে বেশি গোল কারও নেই। আমার সাফল্যের পিছনে আমার ভক্তরাও আছে। আমি ফোন রাত অবধি খোলা রাখতাম। যদি কোচ ফোন করে কোনও প্ল্যানের কথা বলেন। কিন্তু অসংখ্য মেসেজ পেতাম। নম্বর হয়তো চেনা নেই, কিন্তু মেসেজে লেখা থাকত— প্লিজ উই ওয়ান্ট গোল। ডার্বি জেতার পর খুব বেশি আত্মহারা হয়ে পড়তাম না। আবার হারলে মনটা হয়তো খারাপ থাকত। কিন্তু সেটাকে নিয়ে বেশি ভাবলে পরের ম্যাচে প্রভাব ফেলত। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করতাম।

জামশিদ ভাই গোল চাই স্লোগানটা তাতিয়ে দিত

জামশিদ নাসিরি

উফ, সেই সব দিন! ট্রেনিং দেখতে এসেছে হাজার হাজার সমর্থক। আজও ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। আমাদের সময় ময়দান আর বড়ম্যাচ মানেই আলাদা একটা উৎসব। সমর্থকদের ভিড়ের মধ্যে ট্রেনিংয়ে মাঠে ঢুকছি। সবাই চিৎকার করছে, ‘‘জামশিদ ভাই, গোল চাই।’’ মাঠের সামনে এতজন এসে ভিড় করত যে কোচকে মাইক নিয়ে বলতে হত, দয়া করে আপনারা গ্যালারিতে যান। ফুটবলাররা ট্রেনিং শুরু করবে। ক্লাব থেকে বেরোনোর সময়েও সবাই পিছন পিছন যাচ্ছে। বাড়ি পর্যন্ত কয়েকজন চলে যেত। প্রায় কোলে করে নিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো। জানালায় এসেও দেখতাম অনেকে বাড়ির বাইরে দাঁড়ানো। অন্য এক অনুভূতি হত। এদের মুখে হাসি ফোটানোর জেদটা বেড়ে যেত ।

ডার্বি রুটিন বলতে স্পেশ্যাল কিছুই ছিল না। আমি কুসংস্কার অত মানি না। চিকেন খেতাম। ফল বেশি করে খেতাম। মাথা ঠান্ডা রাখতাম। মজার ব্যাপার হল ডার্বির পরের দিনটা। আমার চেনা ইরানের লোক ছিল। ডার্বি জিতলে তারা বাড়িঘর সাজাত। তাদের সঙ্গে ডিনার করতাম। কয়েক জন কলেজ ছাত্রও ছিল। আড্ডা দিতাম। ভালমন্দ রান্না করে দিত। সেগুলো খেতাম।

বাইবেল পড়ে মাথাটা ঠান্ডা রাখতাম

চিমা ওকোরি

সমর্থকরা জানত আমি নিজের সব কিছু উজাড় করে দিতাম দলের জন্য। তাই ওরা আলাদা করে কোনও মেসেজ দিত না। কিন্তু ডার্বির আগে সমর্থকদের ভিড় এখনও মনে পড়ে।

অন্যান্য দিনের রুটিনের মতোই ডার্বির আগের দিনটা কাটত। আমি সব সময় বিশ্বাস করি কঠোর অনুশীলনে। ডার্বির দিনেও সেই জিনিসটাই করতাম। শুরুতে কঠোর অনুশীলন। তার পর ক্লাবে ঘুমোতাম। সেখান থেকে ডার্বি খেলতে চলে যেতাম। খাবারের ব্যাপারেও অত বেশি কিছু বাছাই করা ছিল না। এমন নয়, এটা খাব না, সেটা খাব না। ক্লাবে যা দেওয়া হত সেটাই খেতাম। কারণ তখন মাথায় শুধুই ডার্বি ঘুরত।

ডার্বির আগে একটা জিনিস আমি করতাম মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য। সেটা হচ্ছে বাইবেল পড়া। আমি বাইবেল পড়তাম। আমি সব সময় বিশ্বাস করতাম, ঈশ্বর আমাকে ঠিক সাহায্য করবেন জিততে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন