‘ফার্স্ট বয়’ হতে কলকাতার আজ এক পরীক্ষায় তিন প্রশ্নপত্র

শিশির ভেজা সকাল। মন ভাল করে দেওয়া মিঠে রোদ। সবে টি-শার্টের বদলে হাফস্লিভ সোয়েটার গায়ে উঠতে শুরু করেছে। সন্ধ্যের দিকে পাতলা চাদর হলে মন্দ হয় না। কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের এমন মনোরম আবহাওয়াতেও আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ আন্তোনিও হাবাসের মেজাজ সপ্তমে চড়ে!

Advertisement

প্রীতম সাহা

কোচি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

তুমিই ভরসা। গার্সিয়াকে যেন সেটাই বোঝাচ্ছেন কোচ হাবাস।

শিশির ভেজা সকাল। মন ভাল করে দেওয়া মিঠে রোদ। সবে টি-শার্টের বদলে হাফস্লিভ সোয়েটার গায়ে উঠতে শুরু করেছে। সন্ধ্যের দিকে পাতলা চাদর হলে মন্দ হয় না। কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের এমন মনোরম আবহাওয়াতেও আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ আন্তোনিও হাবাসের মেজাজ সপ্তমে চড়ে!

Advertisement

বুধ-রাতে আইএসএলের যে নতুন ভাগ্যলিখন হয়েছে, তাতে চেন্নাইয়ান এফসি-র ধাক্কায় প্রথম বার লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান থেকে পিছলে পড়েছেন গার্সিয়া-অর্ণব-ফিকরুরা। তারই প্রভাবে কি হাবাসের গরম মেজাজ? উত্তরটা আংশিক ‘হ্যঁা’। তবে পুরোপুরি সঠিক বলা যাচ্ছে না।

কোচ থেকে শুরু করে টিমের অন্দরে প্রথম বার ‘সেকেন্ড বয়’ হওয়ার চাপ তো একটা আছে বটেই। তবে হাবাসের মেজাজ খিঁচড়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে! আপনার দল টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ফাউল করেছে, সবচেয়ে বেশি হলুদ কার্ড আর লাল কার্ড দেখেছে। আটলেটিকো দে কলকাতা-ই কি আইএসএলের সবচেয়ে মারকুটে দল? শুরুতে কলকাতার স্প্যানিশভাষী চিফ কোচ প্রশ্নটা বুঝতে পারেননি। দলের সহকারী কোচ মিগুয়েল অনুবাদ করে দিতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন হাবাস। কোনও দিকে না তাকিয়ে বিরক্ত মুখে সটান হাঁটা দিলেন মাঠের দিকে।

Advertisement

হাবাস বাস্তবটাকে এড়িয়ে যেতে চাইলেও তাঁর বডি ল্যাঙ্গোয়েজ যেন সবটাই ফাঁস করে দিচ্ছিল! আর তাই শুক্রবারের কোচি-যুদ্ধে কলকাতার একটা নয়, দুটো নয়, তিন-তিনটে প্রতিপক্ষ! কেরল ব্লাস্টার্স। নিজেদের ছেলেদের মারকুটে ফুটবল। চেন্নাইয়ান এফসি।

মজার ব্যাপার হল, তিন প্রতিপক্ষই কোনও না কোনও ভাবে একে অপরের সঙ্গে প্রবল ভাবে জড়িয়ে। মাস্টার ব্লাস্টার তেন্ডুলকরের কেরল ব্লাস্টার্সকে হারাতে না পারলে আইএসএলের ‘ফার্স্ট বয়’ হওয়ার দৌড়ে বেশ পিছিয়ে পড়বে আটলেটিকো। আবার জিততে গিয়ে মারকুটে ফুটবল খেললেও চলবে না। উল্টে পরিণতি আরও খারাপের দিকে চলে যেতে পারে, কার্ডের সংখ্যা বাড়লে। তবে কোচ হাবাসের মতে অ্যাওয়ে ম্যাচেই নাকি সুবিধা বেশি। যুবভারতীর কৃত্রিম ঘাসের টার্ফের জুজু সামলানোর তুলনায়। “দেখবেন, হোম ম্যাচের চেয়ে আমাদের অ্যাওয়ে ম্যাচের রেকর্ড ভাল। যুবভারতীর বাইরে মাঠ নিয়ে সমস্যা অনেক কম।”

আটলেটিকোর বাকি পাঁচ ম্যাচের চারটেই অ্যাওয়ে। হাবাসের দল অদূর ভবিষ্যতে কেরল, পুণে, দিল্লি, মুম্বই থেকে কত পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরতে পারে, সেটা সময়ই বলবে। তবে শুক্রবার গার্সিয়াদের কী ভাবে আটকানো যায়, তার ছক কিন্তু দু’দিন আগেই কষতে শুরু করে দিয়েছেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। কলকাতার সাংবাদিকরা কোচিতে পা রাখার পরেই কেরল দলের প্র্যাকটিসের ঠিকানাও বদলে ফেলেছেন মর্গ্যান। স্টেডিয়ামের ধারে-কাছে তো নয়ই, উল্টে টিম হোটেল থেকে দশ কিলোমিটার দূরে একটা স্কুলের মাঠে গোপনে প্র্যাকটিস চালাচ্ছেন সাতসকালেই।

আইএসএলের স্থানীয় কর্তাদের যদিও দাবি “আমাদের কাছে ওরা প্র্যাকটিস মাঠ চায়নি। তাই ব্যবস্থাও করা হয়নি।” তবে কোচিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কলকাতার মিডিয়া যাতে ধারে-কাছে ঘেঁসতে না পারে, সে জন্যই নাকি প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কোচ বাতিল করেছেন কেরলের সরকারি প্র্যাকটিস। কেরল টিমের এক সিনিয়র ফুটবলার বলছিলেন, “কলকাতার মিডিয়া সম্পর্কে ট্রেভরের একটা অদ্ভুত ধারণা আছে। ওরা থাকলে নাকি ওঁর প্র্যাকটিসের স্ট্র্যাটেজি আর গোপন থাকে না। তাই এমন সিদ্ধান্ত।”

মর্গ্যান নিজের তাস লুকিয়ে রাখা চেষ্টা চালালেও কেরল টিম সূত্রের খবর, শুক্রবারের ম্যাচে গার্সিয়াকেই প্রধান টার্গেট করছেন তিনি। ফিকরুর অজস্র বল পাওয়া আটকাতে গার্সিয়া নামক পাওয়ারহাউস উড়িয়ে দেওয়ার স্ট্র্যাটেজি-ই নাকি তৈরি রেখেছেন তিনি।

সেটা কী রকম? কেরল মাঝমাঠের জেনারেল পেন ওরজিকে ফ্রি ফুটবলার হিসাবে খেলিয়ে রোমি আর পিয়েরসন-কে গার্সিয়ার ‘গার্ড’ রাখা। কেরল ব্লাস্টার্সের ম্যানেজার-কাম-মার্কি ফুটবলার ডেভিড জেমস অবশ্য বললেন, “আটলেটিকো দে কলকাতা এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভাল টিম। ওদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, কোনও নির্দিষ্ট ফুটবলারের উপর নির্ভরশীল নয় টিমটা। যে কোনও দিন যে কোনও ফুটবলার ম্যাচ উইনার হয়ে উঠতে পারে।”

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত থেকে সাত পয়েন্ট তুলেছে কলকাতার আটলেটিকো। শুক্রবার কেরলকে হারিয়ে সেই রেকর্ড অটুট রাখতে তো চাইছেনই, একইসঙ্গে লিগের ফার্স্ট বয়-এর মুকুটটাও ফিরে পেতে মরিয়া হাবাস। যাঁর সামনে তিনটে প্রশ্নপত্র ছাড়াও একটা বড় সমস্যা, উল্টো শিবিরে তিন মরসুম কলকাতা ময়দানের তপ্ত কড়াইয়ে সেঁকা ব্রিটিশ কোচ— মর্গ্যান!

আজ মর্গ্যানের দলই এগিয়ে দাবি আর্মান্দোর

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কোচের দলকে এগিয়ে রাখলেন বর্তমান ইস্টবেঙ্গল কোচ। তাও আবার কলকাতার বিরুদ্ধে ম্যাচেই! শুক্রবার আইএসএলে আটলেটিকো দে কলকাতা বিরুদ্ধে ট্রেভর মর্গ্যানের কেরল ব্লাস্টার্স-ই বাজি আর্মান্দো কোলাসোর। কলকাতার আটলেটিকোর স্ট্র্যাটেজি পছন্দ নয় কোলাসোর। অর্ণবদের স্প্যানিশ কোচ হাবাসের এক স্ট্রাইকারে খেলার নীতির কার্যত সমালোচনা করলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ। এ দিন ইস্টবেঙ্গলকে প্র্যাকটিস করিয়ে এসে আর্মান্দো বললেন, “কলকাতার দলকে এক স্ট্রাইকারে রেখে হাবাস কেন খেলাচ্ছেন আমি জানি না। বরং দু’জন স্ট্রাইকারে খেলালে আইএসএলে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক দেখাত আটলেটিকোকে।” হাবাসের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশপাশি তাঁর দলকে নিয়ে শুক্রবারের ম্যাচে বিশেষ আশাও দেখছেন না আর্মান্দো। কোনও রাখঢাক না করে বলে দিলেন, “কোচিতে কেরলকেই আমি এগিয়ে রাখব। ওরা কিন্তু অনেক গোছানো ফুটবল খেলছে। টিমের ভারতীয় ফুটবলারদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অনেক বেশি সুযোগও দিচ্ছে।” উদ্বোধনী আইএসএল খেতাব জেতার প্রশ্নেও আর্মান্দোর তালিকার শীর্ষে কলকাতা নেই। সেখানে আর্মান্দোর এক নম্বর বাজি চেন্নাইয়ান এফসি। মার্কো মাতেরাজ্জির টিম নিয়ে ইস্টবেঙ্গল কোচ উচ্ছ্বসিত। বললেন, “আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার চেন্নাই। ওরা ধারাবাহিক ভাল খেলে চলেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন