Tokyo Olympics

Tokyo Olympics: সমকামী টম পেরেছেন অলিম্পিক্সে সোনার স্বপ্ন সত্যি করতে

লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। স্থির দৃষ্টি ছিল অলিম্পিক্সের সোনার পদকের দিকে। লন্ডনে ব্রোঞ্জ, রিওতেও ব্রোঞ্জ। ২৭ বছরের ডাইভার টমের কাছে টোকিয়োই ছিল যেন শেষ আশা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১ ১৩:৪৪
Share:

১১ বছর বয়সে টমের দেখা স্বপ্ন সত্যি হল ১৬ বছর পর। ছবি: টুইটার থেকে

মাত্র ১১ বছর বয়সে স্বপ্ন দেখেছিলেন অলিম্পিক্সে সোনা জেতার। ২০০৫ সালে নিজের হাতে আঁকা একটি ছবি দেখিয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যমকে। সেখানে দেখা যাচ্ছে লন্ডন অলিম্পিক্সে ১০ মিটার ডাইভিং বোর্ডের উপর তিনি, টম ড্যালে। তখনও সাত বছর বাকি লন্ডন অলিম্পিক্সের। বলেছিলেন, “অলিম্পিক্সে সোনা জিততে চাই।” টোকিয়োয় এসে স্বপ্ন সফল টমের।

তবে টমের প্রথম অলিম্পিক্স কিন্তু লন্ডন নয়, বেজিং অলিম্পিক্সে কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে নেমেছিলেন তিনি। পদক জিততে পারেননি সে বার। যাওয়ার আগে অবশ্য টম বলেছিলেন, “বেজিং যাচ্ছি অভিজ্ঞতার জন্য। অলিম্পিক্স কেমন সেটা বুঝতে যাচ্ছি।”

Advertisement

লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। স্থির দৃষ্টি ছিল অলিম্পিক্সের সোনার পদকের দিকে। লন্ডনে ব্রোঞ্জ, রিওতেও ব্রোঞ্জ। ২৭ বছরের ডাইভার টমের কাছে টোকিয়োই ছিল যেন শেষ আশা। ১১ বছর বয়সে দেখা স্বপ্ন সত্যি হল ১৬ বছর পর।

সোনার পদক নিতে উঠে কেঁদে ফেলেছিলেন টম। মনে মনে প্রতি দিন যে স্বপ্নটা দেখছিলেন, এত বছর পর তা ছুঁতে পারলেন তিনি। চোখের জল আটকাতে পারেননি ইংরেজ ডাইভার।

Advertisement

আসলে শুধু পদক জয়ের লড়াই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও নানা লড়াই করতে হয়েছে টমকে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাবাকে হারাতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হত স্কুলে। তিনি সমকামী, এই পরিচয় প্রকাশ করতে পেরেছিলেন ১৯ বছর বয়সে।

সমকামী খেলোয়াড়দের আদর্শ টম। তবে ছোটবেলা থেকে নিজে যেমন স্থির লক্ষ্যে এগিয়েছেন, একেবারেই চান না নিজের সন্তানও তেমন ভাবে এগিয়ে যাক। টম বলেন, “আমার সন্তান যদি ছোট বয়স থেকে আমার মতো কথা বলে, তা হলে আমি বলব, ‘ধীরে চলো। সময় নাও, উপভোগ করো।”

সোনার পদক জয়ের পর টম ড্যালে। ছবি: টুইটার থেকে

চতুর্থ অলিম্পিক্স খেলতে নামা টম মনে করেছিলেন রিও-তেই সোনার পদক পাবেন। তিনি বলেন, “রিও-তেই পদক জিতব ভেবেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। মনে হয়েছিল পৃথিবীটাই শেষ হয়ে গেল আমার। তবে এখন আমার কাছে পৃথিবী মানে আমার পরিবার। আমার স্বামী বুঝিয়ে ছিলেন যে কিছুই শেষ হয়ে যায়নি। তবে সেই সময় যদিও জানতাম না যে আমার সন্তান দেখবে আমার সোনাজয়। সেই জন্যই হয়তো এত দিন সোনার পদক জিততে পারিনি। এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না।”

বেজিংয়ের ‘বেবি ড্যালে’ পদক জিততে না পারলেও মন জিতে নিয়েছিল সকলের। টমের স্মৃতি যদিও খুব মধুর নয়। তিনি বলেন, “আমার স্কুলের কিছু বন্ধু খুশি হয়েছিল। কিন্তু কেউ কেউ খুব খারাপ ব্যবহার করেছিল। নিজেকে খুব ছোট মনে হয়েছিল। বেশ কিছু সময় আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু আমার অনুশীলনে প্রভাব ফেলছিল এটা। কারও সঙ্গে ডাইভিং নিয়ে কথাই বলতে পারছিলাম না।”

স্কুল যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন টম। তবে ২০০৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। সংবাদ মাধ্যমের সামনে টমের বাবা বলেছিলেন, “আমি রব, টমের বাবা, আমি জড়িয়ে ধরতে চাই।” লজ্জা পেয়েছিলেন টম। তবে আনন্দ যে পেয়েছিলেন তা জানাতে ভোলেননি।

২০০৬ সালে রবের মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। পদক জয়ের থেকেও মূল্যবান ছিল ছেলের সঙ্গে সময় কাটানো। ৮০ শতাংশ টিউমার অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া গেলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি রব। লন্ডন অলিম্পিক্স শুরুর ১৪ মাস আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ছেলের ব্রোঞ্জ পদক জয় দেখে যেতে পারেননি।

বাবা মারা যাওয়ার পরের দিনই অনুশীলনে নেমে পড়েছিলেন টম। পদক জয় এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁর কাছে। টম বলেন, “এখন মনে হয় খেলার থেকে জীবন অনেক বড়। কিন্তু সেই সময় লন্ডন অলিম্পিক্সই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার কাছে। বাবা এবং আমার স্বপ্ন ছিল লন্ডনে পদক জয়। সেটাই সত্যি করতে চেয়েছিলাম।”

স্বামী এবং সন্তানের সঙ্গে টম। ছবি: টুইটার থেকে

একের পর এক পদক জয় অভিজ্ঞ করেছে টমকে। ‘বেবি টম’ এখন নিজেকে ডাইভিং-এর ‘দাদু’ বলেন। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে গত বারের চ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্বের এক নম্বর ডাইভিং দল চিন। চেন আইসেন এবং চাও ইউয়ান দুর্দান্ত ভাবে শুরু করেছিলেন তাঁদের এ বারের অলিম্পিক্স অভিযান। তবে টম বুঝতে পারছিলেন চিন ভাল ডাইভিং করলেও সোনার পদক জয়ের জন্য সেটা যথেষ্ট নয়। সতীর্থের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন টম। বুঝিয়ে দিলেন তাঁদের পারতেই হবে।

তাঁরা পারলেন। ফাইনাল রাউন্ডে ১০১.০১ পয়েন্ট স্কোর করেন টম এবং লি। টমের ছোটবেলার প্রশিক্ষক লিন টেলর ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় চিৎকার করে ওঠেন ব্রিটেন সোনা জিতছে বলে। কিন্তু তার পরেই অনুভব করেন, তিন সংখ্যায় পৌঁছনো কঠিন হলেও চিনের পক্ষে তা অসম্ভব নয়।

তবে পারেননি চিনের প্রতিযোগীরা। সোনার স্বপ্ন সত্যি হয় টমের। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে হত। মনে হয়েছিল আমি কোনও দিন কিছু করতে পারব না, কারণ সমাজের থেকে আমি আলাদা। আশা করি একজন সমকামীকে অলিম্পিক্সে নামতে দেখে ছোটরা আত্মবিশ্বাস পাবে। ভয় পেয়ে একা হয়ে থাকবে না তারা। তুমি যেই হও, যেখান থেকেই উঠে আসো, অলিম্পিক্স জিততে পারো। কারণ আমি পেরেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন