চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

টটেনহ্যামের স্মরণীয় জয়ে নায়ক সন হিউন

ফুটবল বিশ্লেষকেরা ম্যাচের নায়ক বাছতে দিশেহারা। যাঁকে নিয়ে বেশি হইচই তিনি আবার এশিয়ার গর্ব। দক্ষিণ কোরিয়ায় বসন্তের নদী চানচিয়ন লাগোয়া শহরে জন্ম। যাঁকে তাঁর ফুটবলার বাবা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পাঠিয়েছিলেন হামবুর্গে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৩৭
Share:

উল্লাস: ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে একমাত্র গোল করে সন হিউন-মিন। মঙ্গলবার টটেনহ্যাম স্টেডিয়ামে। এএফপি

টটেনহ্যাম ১ • ম্যান সিটি ০

Advertisement

হ্যারি কেনদের নতুন ঠিকানা এখন ‘টটেনহ্যাম হটস্পার স্টেডিয়াম’। ইতিমধ্যেই এই স্টেডিয়াম পেয়েছে ‘স্পার্সের পয়মন্ত’ তকমা। এবং এতটাই ‘পয়মন্ত’ যে সেখানে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির অশ্বমেধ-ঘোড়াও মুখ থুবড়ে পড়ল। মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ নাটকীয় ভাবে জিতে নিলেন মাউরিসিয়ো পোচেতিনোর ফুটবলাররা।

ফুটবল বিশ্লেষকেরা ম্যাচের নায়ক বাছতে দিশেহারা। যাঁকে নিয়ে বেশি হইচই তিনি আবার এশিয়ার গর্ব। দক্ষিণ কোরিয়ায় বসন্তের নদী চানচিয়ন লাগোয়া শহরে জন্ম। যাঁকে তাঁর ফুটবলার বাবা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পাঠিয়েছিলেন হামবুর্গে। জার্মানিই সন হিউন-মিনের আঁতুড় ঘর। সেখান থেকেই অবিশ্বাস্য উত্থান। এবং বুন্দেশ লিগা থেকে ইপিএলে উত্তরণ। এই কোরীয় উইঙ্গার লন্ডনের ঐতিহ্যমণ্ডিত ক্লাবে আজ মহাতারা। কেন মহাতারা সেটা বোঝালেন ম্যান সিটির বিরুদ্ধেও। ৭৮ মিনিটে তাঁর গোলেই ম্যাচের রসায়ন বদলে গেল। যখন সবাই ধরে নিয়েছিল, চোট পেয়ে হ্যারি কেন মাঠ ছাড়ায় আর আশা নেই স্পার্সের, তখনই তাঁর নিখুঁত প্লেসিংয়ের ঝলকানিতে ঝলসে গেল ম্যান সিটি। নতুন স্টেডিয়ামে গ্যালারি ফেটে পড়ল ‘সনির’ জন্য। লন্ডনের ইংরেজরা ভালবেসে ৬ ফুট ১০ ইঞ্চির কোরীয়কে এই নামে ডাকেন এখন।

Advertisement

দিশেহারা বিশ্লেষকরা অবশ্য ম্যাচ-সেরার পুরস্কারটা একক ভাবে সন হিউন-মিনকে দিতে পারছেন না। বলছেন উগো লোরিসই বা কোথায় কম গেলেন? দশ দিন আগেও লিভারপুল ম্যাচে বিশ্রী গোলকিপিংয়ের জন্য স্পার্স ভক্তরা যাঁকে ক্লাব থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দরজা দেখিয়েছিল, হঠাৎই তিনি তাদের নয়নের মণি। সেটা একটা মাত্র সেভের জন্য। ম্যাচের ১২ মিনিটে বিতর্কিত ভিডিয়ো প্রযুক্তির সৌজন্যে পেনাল্টি পেয়েছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। শট নিয়েছিলেন সের্খিয়ো আগুয়েরো। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে লিয়োনেল মেসির এই সতীর্থের পেনাল্টিতে গোল করায় নামডাক কম নয়। উগো লোরিসের ডান দিকে মেরেওছিলেন অব্যর্থ শট। কিন্তু যে ভাবে শূন্যে শরীর ভাসিয়ে সেই শট আটকালেন ফ্রান্স ও টটেনহ্যামের অধিনায়ক, তাতে তাঁর বয়স যে বত্রিশ সেটা বোঝার উপায় ছিল না।

অনেকে বলছেন, ম্যান সিটি এ বার চারটি ট্রফি জিতে অনন্য নজির গড়ার চ্যালেঞ্জটা নিয়েছে। কিন্তু তাদের সেই দৌড় বড় হোঁচট খেল এক কোরীয় আর ফরাসির সৌজন্যে। সেই সঙ্গে বলাবলি শুরু হল, ম্যান সিটি আসলে বড় মঞ্চে নামলেই ভয় পেয়ে যাচ্ছে। অনেকের মনে পড়ল, ২০১১ সালের পরে পেপ গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ে থাকা কোনও দল ইউরোপের বড় প্রতিযোগিতায় বাইরের ম্যাচ জেতেনি। গতবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যান সিটির হারের কথাও কেউ কেউ বললেন। কিন্তু লিয়োনেল মেসির প্রাক্তন গুরু সে সবের তোয়াক্কা না করে প্রতিক্রিয়া দিলেন, ‘‘ম্যাচটা তো আমরাই নিয়ন্ত্রণ করলাম। ওরা সামান্য কয়েকটা প্রতিআক্রমণ আর গোলটা ছাড়া কিছুই করেনি। মনে রাখবেন, আমরা আরও একটা সুযোগ পাচ্ছি। তাও নিজেদের মাঠে।’’

আর একটা ম্যাচ যে বাকি, সেটা মনে করালেন টটেনহ্যাম ম্যানেজার তথা কিংবদন্তি মারাদোনার বন্ধু পোচেতিনোও, ‘‘জিতেছি ঠিক আছে। খুশিও হয়েছি। কিন্তু এখনও বলছি, ফেভারিট ওরাই। মনে রাখবেন সেমিফাইনালে উঠতে হলে আরও ৯০ মিনিট ওদের আটকে রাখতে হবে। কাজটা খুবই কঠিন।’’ পোচেতিনোর সব কিছু ‘বেশি কঠিন’ মনে হচ্ছে সিটির ডিফেন্ডার ফেয়বিয়ান ডেল‌্ফের সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁর সেরা অস্ত্র ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেন ডান পায়ের গোড়ালিতে আবার মারাত্মক চোট পাওয়ায়। ডে‌ল‌্ফ তো কেনের জখম গোড়ালির উপর একেবার দাঁড়িয়েও পড়েছিলেন। ম্যাচ জিতেও তাই মারাত্মক হতাশ টটেনহ্যামের আর্জেন্টাইন ম্যানেজারকে বলতে শোনা গেল, ‘‘হয়তো এই মরসুমে ওকে আমরা আর পাব না। তাই এমন একটা জয়ের পরেও হ্যারির চোটের জন্যই সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন