চেলসি-রথ থামালেন নতুন গাজ্জা

তিনি জার্সির পিছনে পদবী ব্যবহার করেন না। কারণ সেটা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ছোটবেলার অন্ধকার দিনগুলোয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৪
Share:

গোল করে দেলে আলি। ছবি: এএফপি।

তিনি জার্সির পিছনে পদবী ব্যবহার করেন না। কারণ সেটা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ছোটবেলার অন্ধকার দিনগুলোয়।

Advertisement

মাত্র কুড়ি মাস আগেই তিনি খেলছিলেন লিগ ওয়ান। আরও পরিষ্কার ভাবে বললে, ইংল্যান্ডের তৃতীয় ডিভিশনে।

স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন, পল গাসকোয়েনের পরে তিনিই নাকি ইংল্যান্ডের সেরা মিডিও।

Advertisement

চব্বিশ ঘণ্টা আগে উত্তর লন্ডনের কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ইতিহাস ছোঁয়ার লক্ষে এসেছিল চেলসি। আর একটা জয় মানেই এক মরসুমে টানা চোদ্দোটা ম্যাচ জেতার নজির গড়বে আন্তোনিও কন্তের দল। কিন্তু নতুন ‘গাজ্জার’ প্ল্যানটা ছিল একটু আলাদা। তাঁর দুটো হেডের সৌজন্যে ইতিহাস আর বদলানো হল না কন্তের। বরং হোয়াইট হার্ট লেন ছাড়তে হল ০-২ হেরে। খালিহাতে।

তিনি— টটেনহ্যামের তরুণ তারকা দেলে আলি।

বুধবার রাতের আগে যিনি উঠতি একজন প্রতিভা ছিলেন। কিন্তু বুধবার রাতের পরে যিনি হয়ে উঠলেন ইংল্যান্ডের আগামী প্রজন্মের অন্যতম আশার আলো। যাঁর সৌজন্যে জমে উঠল প্রিমিয়ার লিগ।

ম্যাচের আগে যাবতীয় নজর ছিল দিয়েগো কোস্তা আর এডেন হ্যাজার্ডের ওপর। কেউ ধর্তব্যেই রাখেনি আলিকে। কিন্তু ডার্বি মানেই তো নতুন নায়কের জন্ম। টটেনহ্যাম বনাম চেলসি ম্যাচের সেই রূপকথার নাম দেলে আলি। যাঁর জোড়া গোলে অক্টোবরের পরে এই প্রথম হারল চেলসি। গোল দুটোই ছিল হেড থেকে।

কিন্তু গোল ছাড়াও গোটা ম্যাচে নাস্তানাবুদ করে ছাড়লেন চেলসি ডিফেন্সকে। সুন্দর স্কিলে আর দুর্দান্ত সমস্ত পাসের যুগলবন্দিতে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স উপহার দিলেন। যে থ্রি ম্যান ব্যাক ফর্মেশনে ভর করে কন্তে দলকে শীর্ষে রেখেছেন, সেই দেওয়াল ভাঙেন তিনি।

ম্যাচ শেষে তাই তো প্রশংসার কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন আলি।

ইন্টারনেট ঘাঁটলে দেখা যায় মাঠের বাইরের যুদ্ধটা ছোটবেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় আলির। জন্মের ঠিক আগেই আলির বাবা কেনি ডিভোর্স দিয়ে ঘর ছেড়ে চলে যান। যে গাজ্জার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে আলিকে, সেই কিংবদন্তির মতোই আলির মা ডেনিসেরও ছিল মদের নেশা। তাই ১৩ বছর বয়সে আলিকে দত্তক হিসেবে তুলে দিতে বাধ্য হন ডেনিস। আলির মা বলেছিলেন, তিনি দত্তক না দিলে আজ হয়তো এত বড় প্রতিভা হয়ে উঠতে পারতেন না টটেনহ্যাম তারকা। ‘‘আমি চেয়েছিলাম দেলে বড় ফুটবলার হোক। আর সেটা করতে ওকে দত্তক দিতেই হত,’’ কিছু দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেন ডেনিস।

টটেনহ্যাম কোচ মরিসিও পোখেটিনো তাই তো বলছেন, আলির খেলার মধ্যে ওর যন্ত্রণাটা ভাল ভাবেই ফুটে ওঠে। ‘‘নতুন প্রজন্মে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার দেলে আলি। ও খুব আগ্রাসী একজন ফরোয়ার্ড। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আছে। জানে কোন সময় কোথায় থাকলে লাভ হবে,’’ বলছেন পোখেটিনো। শেষ তিন ম্যাচে ছ’গোল করে আলির সৌজন্যে এখন টটেনহ্যামও ফের প্রথম চারের আশা ছেড়ে পাখির চোখ করেছে শীর্ষস্থান। ‘‘আমরা প্রিমিয়ার লিগের দৌড়ে আছি। অবশ্যই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে,’’ বলছেন তিন নম্বরে উঠে আসা পোখেটিনো।

বুধবার রাতের নায়ক বছর তিনেক আগেই ছিলেন প্রচারের অন্ধকারে। লিগ ওয়ানে এমকে ডনস-এ তিনি ছিলেন আনকোড়া এক প্রতিভা। যাঁর গায়ে না ছিল কোনও ডিজাইনার স্যুট। না চড়ার জন্য কোনও ফেরারি বা মার্সিডিজ। ছিল একটাই জিনিস— প্রতিভা। কিন্তু বড় মঞ্চে সেটা দেখানোর সুযোগ ছিল না। টটেনহ্যাম সাহস দেখিয়ে তাঁকে সই করায়। আর এখন বাকিটা ইতিহাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন