টানেলে ওয়ার্নার-ডি’কক তুলকালাম নিয়ে তদন্ত

সোমবার টেস্টের শেষ দিনে মাত্র ১৮ মিনিট খেলা হয়। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য একটাই উইকেট প্রয়োজন ছিল। কুইন্টন ডি’কক-কে এলবিডব্লিউ-য়ের ফাঁদে ফেলে সেই আকাঙ্খিত উইকেটটি নিয়ে নেন জশ হ্যাজেলউড।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৩
Share:

বিতর্ক: ওয়ার্নারের পাশেই দাঁড়ালেন ক্যাপ্টেন স্মিথ। ওয়ার্নার-ডি’ককের ঝামেলার সেই মুহূর্ত। ছবি: টুইটার

অস্ট্রেলিয়া মানেই যেখানে বিতর্ক, সেখানে তাদের সাফল্যেও যে বিতর্কের ছোঁয়া থাকবে না, তাই কখনও হয়? ডারবানে স্টিভ স্মিথদের টেস্ট জয়ের আনন্দের মধ্যেও অবধারিত ভাবে জ্বলে উঠল বিতর্কের আগুন।

Advertisement

এ বি ডিভিলিয়ার্সের রান আউট নিয়ে বিতর্কের পরে এবার আরও মারাত্মক অভিযোগ। যাকে ডারবান-গেট বলা হলেও বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না। ড্রেসিংরুমের দিকে যাওয়ার টানেলে ডেভিড ওয়ার্নার ও কুইন্টন ডি’ককের মধ্যে তুলকালাম বেধে যায় শনিবার। যার জেরে সমস্যায় পড়তে পারেন দুই তারকাই। ঘটনাটি যেমন খতিয়ে দেখছে আইসিসি, তেমনই দুই দেশের বোর্ডও জানিয়েছে, তারা সত্যিটা জানতে চায়। এমন অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে ক্রিকেট দুনিয়ায় আর না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করতে চান ক্রিকেটের প্রশাসকরা।

সোমবার টেস্টের শেষ দিনে মাত্র ১৮ মিনিট খেলা হয়। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য একটাই উইকেট প্রয়োজন ছিল। কুইন্টন ডি’কক-কে এলবিডব্লিউ-য়ের ফাঁদে ফেলে সেই আকাঙ্খিত উইকেটটি নিয়ে নেন জশ হ্যাজেলউড। অস্ট্রেলিয়া ১১৮ রানে প্রথম টেস্ট জেতে। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পরেই আগুন জ্বলে ওঠে। চতুর্থ দিন চা বিরতিতে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় এই দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এতটাই উত্তেজিত ছিলনে দু’জনে যে, একে অপরের পরিবার তুলে কথা বলতে শুরু করে দেন, যা প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে যাচ্ছিল। ঝামেলা থামাতে ওয়ার্নারকে জোর করে টেনে ধরে ড্রেসিংরুমে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায় ক্যাপ্টেন স্টিভ স্মিথ, উসমান খোয়াজাদের।

Advertisement

ঘটনাটা ঘটে রবিবার ড্রেসিং রুমে ঢোকার ঠিক আগে। ক্লোজ সার্কিট টিভির ফুটেজে যা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ফুটেজ ফাঁস হতেই ক্রিকেট দুনিয়া জুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকী টেস্ট শেষ হওয়ার পরে দুই দলের অধিনায়কের সাংবাদিক বৈঠকেও এই নিয়ে ঝড় ওঠে। আর তাঁরা কেউই এই অশান্তিতে জড়িত ক্রিকেটারদের সে ভাবে আড়াল করার চেষ্টা করেননি।

তবে স্মিথ এই ঝগড়া শুরুর দায় ডি’ককের ঘাড়েই চাপানোর চেষ্টা করেন। বলেন, ‘‘মাঠের মধ্যে আমরা প্রচুর কথাবার্তা বলেছি ঠিকই। কিন্তু আমাদের ছেলেরা কুইন্টনকে একবারও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেনি। এটা ওরাই শুরু করে।’’ বিপক্ষের অধিনায়কের এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে ডুপ্লেসি বলেন, ‘‘মাঠের মধ্যেই বহুবার একে অপরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথাবার্তা বলতে শুনেছি। দু’পক্ষই তা করেছে। কে শুরু করেছে, তা বলতে পারব না। তবে মাঠের মধ্যের ঝামেলা মাঠেই মেটানো উচিত ছিল।’’ তাঁর আঙুল যে পরোক্ষে আম্পায়ারদের দিকেই, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না বোধহয়।

আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকার নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান এ বি ডিভিলিয়ার্সকে রান আউট করার পরে অস্ট্রেলীয়রা যে ভাবে উল্লাসে মাতেন, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। রান আউট থেকে বাঁচতে মরিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়া ডিভিলিয়ার্সের মুখের সামনেই বল আছড়ে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নাথান লায়ন। এ জন্য লায়নকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং সম্ভবত তাঁর জরিমানাও হতে চলেছে। কিন্তু নতুন এই বিতর্কে যা হয়েছে, তা ক্রিকেট মাঠে বিরল। দক্ষিণ আফ্রিকার মিডিয়ায় ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি নাকি ডি’কক-কে অশ্রাব্য গালাগালি করেন। এমনকী তাঁর মা ও বোনকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। সমানে ব্যক্তিগত আক্রমণে ডি’কক নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি বলে অভিযোগ। তিনিও ওয়ার্নারের স্ত্রী-কে নিয়ে পাল্টা অপমানজনক মন্তব্য করেন। এতেই অস্ট্রেলীয় ওপেনার খেপে গিয়ে আরও গালিগালাজ করেন।

চা বিরতির এই ঘটনা নিয়ে স্মিথ বলেছেন, ‘‘ওই সময় যা হয়েছে, তা দু’পক্ষেরই লজ্জা। কুইন্টন নিশ্চয়ই সে রকম অপমানজনক কথা বলেছিল, যার পরে আর ডেভি নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি।’’ শোনা যাচ্ছে, মাঠে ডি’কক যখন নন স্ট্রাইকার এন্ডে ছিলেন, তখনই নাকি মিড অফ থেকে ওয়ার্নার তাঁর উদ্দেশে মন্তব্য করা শুরু করেন। বিপক্ষকে উত্তেজিত করে তাদের মনঃসংযোগ নষ্ট করাটা অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের কৌশল। গত বছর ভারতে এসেও বিরাট কোহালি ও তাঁর সতীর্থদের নানা ভাবে উত্যক্ত করার চেষ্টা করেন স্মিথরা। যদিও সেই কৌশল সফল হতে দেননি কোহালিরা। কিন্তু এই বিতর্কের রেশ পরের টেস্টেও থাকে কি না, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন