লিডসের সেই টেস্ট জয় মনে করাচ্ছে কোহালির ভারত

ট্রেন্ট ব্রিজের এই টেস্ট ম্যাচটা দেখার পরে আমার সেই ১৯৮৬ সালে লিডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সে বার দিলীপ বেঙ্গসরকর দুই ইনিংসেই বড় রান করেছিলেন।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৫:৪১
Share:

গর্জন: অ্যালেস্টেয়ার কুককে ফেরানোর পরে বিরাট কোহালির উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি।

ক্রিকেটে নতুন বল সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেন্ট ব্রিজে ভারতের এই প্রত্যাবর্তন-টেস্টে সেটাই ফের দেখা গেল। তৃতীয় টেস্টে ভারতীয় পেসারদের দাপট, বিরাট কোহালির দুই ইনিংসে বড় রান, ভারতীয়দের দুর্দান্ত ‘স্লিপ ক্যাচিং’ দেখেছি। চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় নতুন বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করতে দেখলাম যশপ্রীত বুমরাকে।

Advertisement

তার আগেই জস বাটলার (১০৬) বুমরার ইনসুইং বুঝতে না পেরে এলবিডব্লু হয়েছেন। তার পরের বলেই জনি বেয়ারস্টো ক্রিজে আসার পরে বুমরা যে বলটা করলেন তা লেগ মিডে পড়ে বেয়ারস্টোর অফস্টাম্প নিয়ে চলে যায়। আমার মতে এটা দিনের সেরা বল। বলটা ইনসুইং হতে গিয়েও সিমে পড়ে সোজা বেরোল। আর সেখানেই লড়াইয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে জো রুটের দলে। চতুর্থ দিনের শেষে নয় উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের মুখে ইংল্যান্ড। দলের রান ৩১১। জিততে গেলে আরও ২১১ রান দরকার জো রুটদের। ফলে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট জিতে সিরিজ ১-২ করে ফেলা সময়ের অপেক্ষা বিরাট কোহালিদের কাছে।

ট্রেন্ট ব্রিজের এই টেস্ট ম্যাচটা দেখার পরে আমার সেই ১৯৮৬ সালে লিডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সে বার দিলীপ বেঙ্গসরকর দুই ইনিংসেই বড় রান করেছিলেন। এ বার যেমন দুই ইনিংসেই বিরাটের ব্যাট দু’দলের মধ্যে অর্ধেক তফাৎ গড়ে দিয়ে গিয়েছে। ওই টেস্টে রজার বিনি দারুণ বল করেছিলেন। এ বার দুই ইনিংসে বল হাতে ইংল্যান্ডের ত্রাস হয়ে উঠলেন হার্দিক পাণ্ড্য, যশপ্রীত বুমরা।

Advertisement

অ্যাশেজের পরে ভারতের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ড। যেখানে প্রথম দুই টেস্টে হারের পরে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়াল ভারত। যা সাউদাম্পটনে চতুর্থ টেস্টের আগে মানসিক ভাবে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে ভারতকে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তৃতীয় টেস্টে ভারতের এই প্রত্যাবর্তনের কারণ কী? আমার মতে এই জয়ের কারণ, প্রথম সারির ব্যাটসম্যান শিখর ধবন, অজিঙ্ক রাহানে, চেতেশ্বর পূজারাদের রান পাওয়া। কারণ বোলাররা ছন্দে ছিলেনই। আর ভারতের এই ইংল্যান্ড সফরে তো অধিনায়ক বিরাট কোহালি তাঁর ব্যাট দিয়ে রূপকথা লিখেই চলেছেন। তার সঙ্গে ফিল্ডিংটাও এই টেস্টে ভালই করল ভারত।

নোটবই খুলে দেখতে পাচ্ছি, ভারত-ইংল্যান্ড এ বারের টেস্ট সিরিজে জো রুটরা স্লিপে ১৫ টি ক্যাচ ফেলেছে এখনও পর্যন্ত। সেখানে আজ কে এল রাহুল এবং বিরাট কোহালিদের স্লিপ ক্যাচিং অনবদ্য। স্লিপে দিনের সেরা ক্যাচটা ধরলেন সেই বিরাটই। মহম্মদ শামির বলে পোপের ক্যাচ। অফস্টাম্পে পড়া শামির একটি বল সজোরে ড্রাইভ করেছিলেন পোপ। বলটা বেশ গতিতেই দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো রাহুলের ডান দিকে মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই বল ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এক হাতে যে ভাবে ধরলেন বিরাট কোহালি, তা জেতার উদগ্র মানসিকতা মনে পড়িয়ে দেয়।

স্কোরবোর্ডে যখন ইংল্যান্ডের রান ৬২-৪, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, ইংল্যান্ডের অলআউট হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। এই সময়েই খেলা ধরে নিয়েছিলেন জস বাটলার এবং বেন স্টোকস। চাপের মুখে এ দিন দুর্দান্ত শতরান করে গেলেন জস বাটলার। এর আগে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সাদা বলে শতরান রয়েছে বাটলারের। কিন্তু পাহাড় প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে ধৈর্য ধরে বাটলারের প্রথম টেস্ট শতরানকে আমি দ্বিশতরানের সমকক্ষ মনে করি। শুরুতে ইশান্ত শর্মা ৩২ রানে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে যে ধাক্কাটা দিয়েছিলেন, ব্যাট হাতে তার পাল্টা মোকাবিলা করেছেন বাটলার। লাঞ্চের পরে রোদ ঝলমলে পরিবেশ পাওয়ায় কাজটা আরও সুবিধা হয়ে যায় স্টোকস ও বাটলারের। কারণ উইকেটটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল লাঞ্চ থেকে টি এই সেশনে। ট্রেন্ট ব্রিজে এই একটা সেশনেই ভারতকে টেক্কা দিতে পেরেছিল ইংল্যান্ড। বেন স্টোকস সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মারকুটে ইনিংস খেলতে পছন্দ করে। কিন্তু এ দিন কিন্তু ধৈর্য ধরে ‘ওয়েটিং গেম’ খেলতে শুরু করেন স্টোকস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন