চিন্নাস্বামীতে কোহালি-প্রহারের সাক্ষী ধোনি। ছবি বিসিসিআই
বোলারের মাথার উপর দিয়ে রুদ্রপ্রতাপ সিংহকে মারা ছক্কাটার মতোই আকাশ ছুঁতে উড়ে যাচ্ছেন তিনি। পিছনে উড়ছে কাঁধে বাঁধা লাল ‘কেপ’। ডান হাত মুঠো করে সামনে বাড়ানো, মুখে বিজয়ীর হাসি। বুকে শুধু ‘এস’ এর বদলে ‘ভি’।
শনিবাসরীয় বেঙ্গালুরুর পর সোশ্যাল মিডিয়া একমত, ‘‘সরকারি ভাবে প্রমাণিত, বিরাট কোহালিই সুপারম্যান।’’ বলা শুরু হয়েছে বিরাট সব পারেন। জলে হাঁটতে পারেন। মেয়েদের মন পড়তে পারেন। বার্মুডা ত্রিভূজও হাসতে হাসতে পেরোতে পারেন।
অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ফের একটা অতিমানবীয় সফল রান তাড়া শেষ করে ‘সুপারম্যান’ নিজে এ দিন দারুণ মুডে। কী জাদুতে প্রতিবার এমন সফল্য, জানতে চাইলে বিরাটের স্ট্রেট ড্রাইভ, ‘‘নিজের হৃদস্পন্দন চেক করি। নাড়ি স্বাভাবিক দেখলে বুঝতে পারি মাথা ঠান্ডা আছে। প্রচুর চাপেও ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’’
ক্যাপ্টেন কুলের সঙ্গে যুদ্ধে শেষ বিচারে মাথাটা বেশি ঠান্ডা রাখলেন বিরাটই। ম্যাচের আগে দু’জনের অবস্থান অনেকটাই এক ছিল। প্লে অফ লড়াইয়ে থাকতে ধোনিকে জিততেই হবে। কোহালির সাত ম্যাচে চাই ছ’টা জয়। এই অবস্থায় রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস ১৯১ তুলে বেঙ্গালুরুকে তাদের ঘরের মাঠে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। ক্রিস গেইলকে বসিয়ে নামা বিরাট জেতানোর দায়িত্ব শুরু থেকেই তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে।
লোকেশ রাহুল (৩৮) ফেরার পরে পরেই এবি ডে’ভিলিয়ার্সের (১) উইকেটে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দুরন্ত বোলিংয়ের (৩-২৪) পর শেন ওয়াটসনের ১৩ বলে ৩৬ আর উল্টো দিকে সুপারম্যান ক্রমশ লড়াই থেকে ছিটকে দেয় ধোনিদের। ওয়াটসন ফেরার সময় চার ওভারে ৪৭ দরকার ছিল। দায়িত্বটা পুরোপুরি এসে পড়ে তখন ৬৪ রানে থাকা বিরাটের উপর। যিনি টিমকে জিতিয়ে শেষ করলেন সাতটা ছক্কা আর আটটা বাউন্ডারিতে ১০৮ রানে অপরাজিত থেকে।
চাপের মধ্যে বড় রান তাড়ার সময় কী চলে তাঁর মনে? বিরাট বলছেন, ‘‘বিপক্ষের স্ট্র্যাটেজি বা উল্টো দিকের ব্যাটসম্যানের দিকে না তাকিয়ে স্রেফ নিজের উপর আস্থা রাখি।’’ সঙ্গে সংযোজন, ‘‘হায়দরাবাদে ১৯৪ তাড়া করতে গিয়ে পারিনি। তার পর থেকে অসম্ভব তেতে ছিলাম। আজ ওই বাড়তি মাইলটা পার করার জন্য শুরু থেকে নিজেকে মোটিভেট করেছি।’’
হরভজন সিংহ টুইটে কুর্নিশ করেছেন, ‘‘কোহালির ব্যাপারটাই আলাদা। অন্য গ্রহের। রান চেজ মাস্টারের আরও একটা চ্যাম্পিয়ন ইনিংস!’’ বিস্ময়ের ঘোর আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের মধ্যেও। ইংল্যান্ড আর টটেনহাম হটস্পার্স তারকা, বিরাট ভক্ত হ্যারি কেন লিখেছেন, ‘‘চাপের মুখে বিরাট বার বার দেখাচ্ছে ও ঠিক কোন গোত্রের প্লেয়ার।’’ ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর ছোট্ট টুইট, ‘‘শ্রদ্ধা। এটুকুই বলব!’’
বিরাট যখন টিমকে জেতানোর কথা বলছেন, তখন আরও একবার প্রশ্ন উঠল বিশ্বের অন্যতম সফল এক অধিনায়কের বোলার বদল নিয়ে। তিনি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবশ্য সমালোচনার জবাব বা হারের ব্যাখ্যা, কোনওটাই দিতে সামনে এলেন না। খেলার শেষে পুরস্কার অনুষ্ঠানে বিজিত ক্যাপ্টেনের হাজির থাকার প্রথাও কি ভাঙলেন বিরাটের ‘তাড়া’ খেয়ে?
সাধে কি আর সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্কবাণী, ‘‘মেসি, জকোভিচ সাবধান! বিরাট তাড়া করছে!’’
সংক্ষিপ্ত স্কোর: রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস ১৯১-৬ (রাহানে ৭৪, তিওয়ারি ৫২, ওয়াটসন ৩-২৪), র্যয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১৯৫-৩ (বিরাট ১০৮ নট আউট, রাহুল ৩৮, ওয়াটসন ৩৬)