সেঞ্চুরির গর্জন

ফর্ম নয়, এই ব্যাটিংটা বিরাটের রোজকার রুটিন

বিরাট কোহালির ৬৩ বলে সেঞ্চুরির ইনিংসটা দেখলাম। আইপিএল নাইনে ও প্রথম সেঞ্চুরি করল, তা নয়। কুইন্টন ডি’কক করেছে এবং টিমকে জিতিয়েছে। বিরাট যা পারেনি।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৫:১৪
Share:

বিরাট কোহালির ৬৩ বলে সেঞ্চুরির ইনিংসটা দেখলাম। আইপিএল নাইনে ও প্রথম সেঞ্চুরি করল, তা নয়। কুইন্টন ডি’কক করেছে এবং টিমকে জিতিয়েছে। বিরাট যা পারেনি। ১৮০ তুলেও গুজরাতের কাছে ছ’উইকেটে হেরে গেল। কিন্তু টিমকে জেতাতে না পারলেও বলব, ডি’ককের সেঞ্চুরির চেয়ে বিরাটেরটা অনেক, অনেক ভাল।

Advertisement

আসলে ছেলেটা এখন যা খেলছে, ওকে নিয়ে লেখা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। খুব ভুল না হলে, শেষ পনেরোটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ওর চোদ্দোটায় হাফসেঞ্চুরি আছে! কী বলা উচিত? স্বপ্নের ব্যাটিং ফর্ম? লোকে বলতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, এটা কোহালির ফর্ম নয়। এটা ওর স্বাভাবিক খেলা। ফর্ম তো আসে যায়। একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে ক্রিকেটারের জীবনে থাকে। কিন্তু বিরাটকে দেখে কি সেটা মনে হচ্ছে? এই ব্যাটিংটা তো কোহালির রোজ মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার মতো রুটিন ব্যাপার হয়ে গিয়েছে।

ভাবলে অবিশ্বাস্য লাগে, পারফেকশনকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে ও। অনেক বড় ক্রিকেটারকে দেখেছি, যারা যেটা পারত না, করত না। স্টিভ ওয়-কেই ধরা যাক। পুল মারতে ভাল পারত না বলে চেষ্টাতেই যেত না। নিজের স্ট্রেংথের উপর খেলে দিত। কিন্তু বিরাটকে দেখুন। আগে সুইপ মারত না স্পিনারকে। এখন অফস্টাম্পের বাইরে থেকেও মারে। আগে কাট মারতে অতটা পছন্দ করত না। এখন বলে-বলে মারে। এক বছর আগে ওর ষাট থেকে পঁয়ষট্টি পার্সেন্ট রান আসত অনসাইড থেকে। এক বছর পর ওই একই রান আসে অফসাইড থেকে! আসলে শুধু ব্যাটিংকে নিখুঁত করে তোলার চেষ্টায় ডুবে থাকলে দিনের পর দিন এই ব্যাটিং করে যাওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য নিজের মনকে পাল্টাতে হয়। ও শুধু সেরা হওয়ার কথা ভাবে না, পারফেক্ট হতে চায়। আর সেই পারফেকশনটা হবে অলরাউন্ড। ব্যাটিংয়ে। ফিটনেসে। মানুষ হিসেবে। রোলমডেল হিসেবেও।

Advertisement

বিরাটের ফিটনেস নিয়ে এখন খুব কথা হয়। কয়েক দিন আগে আরসিবি ট্রেনার বলল, জকোভিচের চেয়েও ওর ফিটনেস লেভেল ভাল। ভুল হয়তো বলেওনি। ওকে তো দেখলে আমার যোদ্ধা লাগে। মার্শাল আর্ট যারা লড়ে, তাদের মতো। বিরাট এখন নিজের ফিটনেস লেভেল এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যে একটা কেন, চাইলে তিনটে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরপর খেলে দিতে পারে। বিশ্রাম ছাড়া। এই তো গুজরাত ম্যাচটার কথা ধরুন। সেঞ্চুরি করল ৬৩ বলে, তার মধ্যে ১১ চার। একটা ছক্কা মারল, তাও শেষ ওভারে। বাকি রান সব দৌড়ে। এই গরমে, দিনের বেলায়।

মাঝে মাঝে ভাবি, এই ফিটনেস লেভেলে পৌঁছতে দিনে কত ঘণ্টা করে খেটেছে ও। আমরা তো ফিনিশড প্রোডাক্ট দেখছি। ভেতরের খাটনিটা দেখার উপায় তো নেই। নিজেকে এতটা বদলে ফেলা, সহজ নয়।

ক্রিকেটীয় দিকটা আগে বলি। গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরের আগে ও সুইপ মারতে পারত না ভাল। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে ঠিক তুলে নিল। আবার অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার আগে কাট ভাল মারতে পারত না। কিন্তু যাওয়ার আগে, ঠিক ম্যানেজ করে নিল। তার উপর দেখছি এখন স্টান্স নেওয়ার সময় বিরাট পায়ের গ্যাপ ছোট করে দিয়েছে। এতে ব্যাকফুটে অনেক শট খেলতে পারছে। সঙ্গে চেষ্টা করছে, শেষ অবধি থেকে ম্যাচ শেষ করে আসতে। আর ক্রিকেটীয় দিকে যেমন, অক্রিকেটীয় দিকেও তেমন। মাঠের বাইরে আগে ও কাউকে পাত্তা দিত না। কোনও অনুষ্ঠানে গেলে দেখতাম, কাউকে তোয়াক্কা করত না। এখন কিন্তু সবচেয়ে ভদ্র ক্রিকেটারের নাম বিরাট কোহালি। যে সাংবাদিক থেকে সাধারণ মানুষ— সবার সঙ্গে সমান ভাল ব্যবহার করে।

ওই যে বললাম। ক্রিকেটারের মতো রোলমডেল বিরাটও এখন অদ্ভুত নিখুঁত। যাকে আউট করাও এখন ব্যাটসম্যান বিরাটের মতোই খুব, খুব কঠিন!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১৮০-২ (কোহালি ১০০ ন.আ., রাহুল ৫১ ন.আ.)।
গুজরাত লায়ন্স ১৮২-৪ (কার্তিক ৫০ ন.আ., ম্যাকালাম ৪২)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement