দিল্লি জয় আর ৭ উইকেট দূরে

অধিনায়ক কোহালি তো জয় দেখতে পেয়ে রীতিমতো চনমনে। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে ঘণ্টাখানেক মাঠে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করার সময় বারবার গ্যালারির দর্শকদের আওয়াজ তুলতে বলছিলেন কোহালি।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৯
Share:

শিকারি: শেষ বেলায় জাডেজার দুই উইকেট কোটলায়। যা ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ছবি: পিটিআই

নিজের শহরে টেস্ট সিরিজ জিততে বুধবার সারা দিনে আর সাত উইকেট চাই বিরাট কোহালির।

Advertisement

কোটলা টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা, তখনই তাঁদের বেশ চনমনে দেখাচ্ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আরও একটি জয় যে শুধুই সময়ের ব্যাপার, সেটা তাঁরাও বুঝতে পারছেন।

অধিনায়ক কোহালি তো জয় দেখতে পেয়ে রীতিমতো চনমনে। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে ঘণ্টাখানেক মাঠে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করার সময় বারবার গ্যালারির দর্শকদের আওয়াজ তুলতে বলছিলেন কোহালি। মাঝে মাঝে আবার সতীর্থদের সঙ্গে তাঁর নানা খুনশুটির মুহূর্তও লক্ষ্য করা গেল। বিরাট-মেজাজ দেখে মনে হল, জয় নিয়ে নিশ্চিত তিনি। দলের অন্যরাও সবাই চাঙ্গা। আগের রাতেই প্রত্যেকে দক্ষিণ আফ্রিকার টিকিট হাতে পেয়ে গিয়েছেন। এ বার সিরিজ জয়ের হাতছানি। বাড়তি উৎসাহে ভারতীয় ক্রিকেটাররা প্রত্যেকে ফুটছিলেন যেন।

Advertisement

ধোঁয়াশা, কুয়াশা, নিরাশা, হতাশা— এ সব ছাপিয়ে কোটলার বুকে এখন শুধু জয়ের আশা। টেস্ট ও সিরিজ জয়। যে জয়ের আত্মবিশ্বাস ভারতীয় দলের সঙ্গে উঠবে কেপ টাউনের বিমানেও।

এক দিকে চনমনে, প্রাণশক্তিতে ভরপুর একটা দল ফিরোজ শাহ কোটলা দাপাচ্ছে। অন্য দিকে তখন ক্লান্ত, শ্রান্ত, দিশাহীন একদল পর্যটকের গোঙানির শব্দ ভেসে আসছিল যেন। বিপক্ষের সঙ্গে পরিবেশও যাদের কাছে হয়ে উঠেছে শত্রু।

দিনের শেষে যখন ১৬ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ৩১ রান স্কোরবোর্ডে নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ, তখন তাঁর চোখেমুখে অনিশ্চয়তা। কোনও সন্দেহ নেই, প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে শ্রীলঙ্কাকে যদি এই টেস্ট বাঁচাতে হলে প্রধান ভরসা সেই প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ম্যাথিউজ এবং অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমাল। চতুর্থ দিনের শেষে ৪১০ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামা শ্রীলঙ্কা তুলেছে ৩১-৩। এখনও ৩৭৯ রানে পিছিয়ে তারা। ভারতের চাই সাত উইকেট। শ্রীলঙ্কা শিবির কি খুব আশাবাদী? তেমন ইঙ্গিত কিন্তু খুব বেশি নেই। দল ড্রেসিংরুমে চলে আসার পরে যখন শ্রীলঙ্কার কোচ নিক পোথাস গোমড়া মুখে বলেন, ‘‘দিনের শেষে তিনটে উইকেট চলে গেল, খুব হতাশাজনক পরিস্থিতি,’’ তখন তাঁদের ড্রেসিং রুমের চেহারাটা খুব ইতিবাচক নিশ্চয়ই বলা যায় না।

আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা শিবিরে ডাক্তার-বিতর্ক

তার আগে মঙ্গলবারের একটা সেশনই দিল্লি টেস্টের পাল্লা ভারতের দিকে ঝুঁকিয়ে দিল। এক সেশনে ১৪১ রান তুলে ফেললেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা। লাঞ্চ থেকে চায়ের মধ্যে এই সেশনের ২৬ ওভারেই ভারত যেন দিল্লির রাজপথের ট্র্যাফিক জ্যাম থেকে উঠে ঢুকে পড়ল মেট্রো রেলের কামরায়। এই দু’ঘণ্টায় প্রায় ওয়ান ডে ক্রিকেটের ঢংয়ে রান তুললেন কোহালি, শিখর ধবন, রোহিত শর্মা-রা এই সময়ে ভারতের ওভার প্রতি রান তোলার গড় ছিল ৫.৪২।

ভারতের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে এমন ঝোড়ো গতিতে রান তুলতে কবে আর দেখা গিয়েছে? এই সেশনেই ‘বার্থ ডে বয়’ শিখর ধবনের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আট হাজার ও টেস্ট ক্রিকেটে দু’হাজার রান পূর্ণ হয়ে গেল। এই সেশনেই বিরাট কোহালির ৫৫ বলে ৫০। বক্সিংয়ের রিং হলে এই সেশনটাকেই বলা হতো ‘নক আউট পাঞ্চ’। এই সেশনেই যে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে দিল ভারত।

সব মিলিয়ে ২২টা বাউন্ডারি ও একটা মাত্র ছয় হাঁকালেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা। ৯৪ রান এল বাউন্ডারি থেকে। বাকি ১৫২ রান দৌড়ে। দিনের খেলা শেষে ধবন বলে গেলেন, ‘‘আমাদের পরিকল্পনাই ছিল চালিয়ে খেলার। কাজটা মোটেও সোজা ছিল না। কিন্তু এটা না করলে ওদের চাপে ফেলা যেত না।’’

কোটলার বাইশ গজ যত প্রাণহীন হয়ে ওঠে, স্ট্রোক নেওয়াও তত কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় খুচরো রান ছাড়া উপায় ছিল না ভারতীয়দের। বিরাট ৫০ রান তোলেন মাত্র চারটে বাউন্ডারি মেরে। ধবনের ৬৭ আসে পাঁচটা চার ও একটা ছয়-সহ। পূজারা এক রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন ও রোহিত শর্মা পাঁচটা বাউন্ডারি মেরে ৫০ করেন ৪৯ বলে। প্রত্যেকেই দ্রুতগতিতে রান তুললেন।

দিনের শেষে একই ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে যে ধাক্কাটা দিলেন রবীন্দ্র জাডেজা, সেটাই শ্রীলঙ্কা শিবিরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে। তবে ওই সময় নৈশালোকের দখলেই চলে গিয়েছিল কোটলা। এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার কোচ নিক পোথাসের কটাক্ষ, ‘‘আমাদের তিন উইকেট পড়ার পরেই আম্পায়ারদের মনে হল আলো কম, খেলা বন্ধ করা উচিত। কাকতালীয় লেগেছে ব্যাপারটা।’’

কোচের এই মন্তব্যের মতো ঝাঁঝ কি বেঁচে আছে তাঁর ক্রিকেটারদের মধ্যে? পরীক্ষা বুধবারের কোটলায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন