আট রানে আট তুলে সিরিজ ভারতের, জয় এল চহল-বিরাটের হাত ধরে

এমনিতেই চিন্নাস্বামীর আওয়াজ এমন মাত্রায় পৌঁছচ্ছিল, পাশের লোকের কথাও ঠিকমতো শোনা যাচ্ছিল না। তার উপর পরপর যখন উইকেট পড়তে শুরু করল, তখন কমেন্ট্রি বক্সেই আমাদের, মানে কমেন্টেটরদের তুমুল চেঁচিয়ে কথা বলতে হল।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১২
Share:

আদরের চহল। বুধবার ইংল্যান্ডকে ধ্বংস করার পর চিন্নাস্বামীতে। -টুইটার

সিরিজ ওয়াশ

Advertisement

টেস্ট ৪-০ ওয়ান ডে ২-১ টি টোয়েন্টি ২-১

এমনিতেই চিন্নাস্বামীর আওয়াজ এমন মাত্রায় পৌঁছচ্ছিল, পাশের লোকের কথাও ঠিকমতো শোনা যাচ্ছিল না। তার উপর পরপর যখন উইকেট পড়তে শুরু করল, তখন কমেন্ট্রি বক্সেই আমাদের, মানে কমেন্টেটরদের তুমুল চেঁচিয়ে কথা বলতে হল। না হলে আমাদের গলাও শোনা যাবে না যে। তবে আমার নজর তখন মনিটরের দিকে নয়, বরং হরিয়ানার ২৬ বছর বয়সি ছেলেটার দিকে। যুজবেন্দ্র চহল। ইংল্যান্ডের মেরুদণ্ড যে একাই ভেঙে দিল। ইয়ন মর্গ্যান থেকে শুরু করে ক্রিস জর্ডনকে ফিরিয়ে দিল বলে বলে।

Advertisement

ও যে চিন্নাস্বামীতে এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে, এটা বারবার মনে হয়েছে। কমেন্ট্রি বক্সে হোক বা স্টুডিওয়— টিভি শোয়ে বসতে গেলে ‘ভেনু স্পেসিফিক’ কিছু স্ট্যাট আমাদের ঘেঁটে রাখতেই হয়। সে রকমই কিছু স্ট্যাট ঘাঁটতে ঘাঁটতে দেখলাম যে, গত এক বছরে চহলই চিন্নাস্বামীতে সবচেয়ে সফল বোলার। এই মাঠে চল্লিশটার উপর উইকেট আছে ওর। গত চার বছর ধরে আইপিএলে আরসিবি-র হয়ে খেলেছে। এটাই হোম গ্রাউন্ড। হবে না? নিজের বেডরুমের মতো চেনে এখানকার বাইশ গজ। কোন জায়গায় বল ফেললে ব্যাটসম্যান কী কী শট খেলতে পারে, বল করতে যাওয়ার আগে তা ওর সামনে ছবির মতো ভেসে ওঠে। তাই ওকে এই মাঠে সামলানো যে কোনও ব্যাটসম্যানের কাছেই বড় পরীক্ষা। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা সেটা পারল না বলেই হার মানতে হল। তাও আবার বড় ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টিতে ৭৫ রানে জেতা মানে তো বিশাল ব্যবধানেই জেতা।

ট্রফি নিয়ে অধিনায়ক ও নায়ক। -টুইটার ও পিটিআই

বিরাট কোহালিরও প্রশংসা করতে হবে। এই মাঠে, যেখানে যে কোনও মিসহিটেও ওভার বাউন্ডারি হয়ে যেতে পারে, সেই মাঠে জোড়া লেগস্পিনার নিয়ে নামা তো বড় ফাটকা। এই ফাটকাটাই লেগে গেল। যদি না লাগত, তা হলে যে কী হত, তা বিরাট খুব ভাল করেই জানে। তবু ঝুঁকিটা নিয়েই নিল! আসলে বিরাট এমনই ক্যাপ্টেন, যে অনায়াসে, শান্তিতে কোনও কিছু জিততে পছন্দ করে না। কঠিন, কষ্টার্জিত সাফল্য ওর বেশি পছন্দের। এই যে ফাটকাটা জিতে সিরিজটা বার করে নিল ইংল্যান্ডের হাত থেকে, এতেই বোধহয় ও বেশি খুশি। অনেকে বলে থাকেন টি-টোয়েন্টি আসলে পেশির ক্রিকেট, শক্তির লড়াই। আমি কিন্তু বলি এটা বুদ্ধিরও খেলা। প্ল্যানিং, পাল্টা প্ল্যানিং, প্রয়োজনে কৌশল পাল্টে ফেলে হঠাৎ বিপদে ফেলে দেওয়া, এও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। সেটাই প্রমাণ করল বিরাট।

চহলের কথায় ফিরে আসি। শুধু যে দক্ষতা আর প্রতিভা আছে ছেলেটার, তা কিন্তু নয়। বুদ্ধিও কম নয়। মর্গ্যানকে কী ভাবে আউট করল ভাবুন একবার। ইংল্যান্ড অধিনায়কের নড়চড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, চহল যে রকম বলই দিক ও সেটা সুইপ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। এটা বুঝতে পেরেই একটা গুগলি দিল চহল, যেটা আবার অফস্টাম্পের বাইরে। ঠিক মতো বলের নাগালই পেল না মর্গ্যান। আর এজ হয়ে বল আকাশে।

ছোট মাঠে দুই লেগস্পিনার। দুই প্রধান পেসারের আট ওভার বাদ দিলে বাকি ১২ ওভারই ফাটকা। এই পরিস্থিতিতে বোলারদের ঠিকমতো ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিরাট সেটাই করল ।

ব্যাটিংয়েও ঠিক তাই হল। শুরুটা বাদ দিলে বাকি পুরোটাই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিখুঁত খেলা। আগের দিনই লিখেছিলাম, ডেথ ওভারে ধোনি-যুবরাজকে ক্রিজে থাকতে হবে। সেটা যেমন হল, তেমনই যুবরাজ যে ভাবে মিলস, জর্ডনদের ইয়র্কার ভোঁতা করার জন্য ক্রিজের ভিতর দিকে এসে ব্যাট করবে আশা করেছিলাম, ও করলও তাই। তবে রায়না-ধোনির পার্টনারশিপ দেখে মনে পড়ে গেল ওদের সিএসকে-র দিনগুলোর কথা। একজন যখন একদিকে রান-আ-বল করে যাচ্ছে, অন্য দিকে তখন হাত খুলে মারছে। ধোনি যখন মার শুরু করল, তখন অবশ্য রায়না আউট হয়ে যায়। আর তখনই আসে যুবি। ওর আসার টাইমিংটা দুর্দান্ত হয়েছে। তার ঠিক পরপরই দুই পেসার দ্বিতীয় স্পেল করতে আসে। ওদের ৫৭ রানের পার্টনারশিপটা না হলে ভারত দু’শোও পেরত না। আর এই মাঠে তো ২২০-ও তাড়া করা হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন