শনিবার আরসিবি-র কাছে হারে আইপিএল থেকে পুণের প্রায় ছিটকে যেতে বসায় অবধারিত ভাবেই প্রশ্নটা উঠছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে কি এ বার দেশের সীমিত ওভারের নেতৃত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া উচিত? নিয়ে আসা উচিত বিরাট কোহালিকে?
আমাদের দেশে ক্রিকেটে হারের প্রথম দায়টা এসে পড়ে ক্যাপ্টেন, তার পর কোচের উপর। পুণের ব্যর্থতার দায় তাই ধোনির উপর এসে পড়ছে। তবে ওর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণও আছে। আইপিএলে ধোনি এমন কিছু ভুল করেছে, যা ক্রিকেটীয় যুক্তিতে মেনে নেওয়া মুশকিল। একই ভুল ও পরপর ম্যাচে করে গিয়েছে। যার কোনও ব্যাখ্যা দিতেও শোনা যায়নি ওকে। ফলে ওর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এর সঙ্গে থাকছে অবিশ্বাস্য ফর্ম নিয়ে কোহালির বড় হয়ে ওঠা ছায়াটা।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ব্যবহার করার প্রসঙ্গটাই ধরুন। ওকে এত দেরিতে বল দিচ্ছে কেন ধোনি? আইপিএলে বেশির ভাগ ম্যাচেই অশ্বিনকে ঠিক সময় বল দেয়নি ধোনি। পুরো কোটা বলও করায়নি। শনিবারও ১৭ নম্বর ওভারে প্রথম বল করতে এল অশ্বিন! যখন ব্যাটসম্যান সেট হয়ে বড় শটের জন্য যাচ্ছে, তখন কী করবে অশ্বিন? এমনিতেই পুণের বোলিং দুর্বল। তার উপর দলের সেরা বোলারকে সে ভাবে ব্যবহারই করছে না ক্যাপ্টেন।
শনিবার এক ওভারে অ্যাডাম জাম্পা দু-দুটো উইকেট নিল। তার পরেও ওকে দিয়ে বল না করানোটাও তো ভুল সিদ্ধান্ত। যা ধোনির মতো ক্যাপ্টেনের কাছে আশা করা যায় না। যেখানে শেন ওয়াটসনের মতো ব্যাটসম্যান ক্রিজে, সেখানে জাম্পার বদলে থিসারা পেরেরাকে এনে তুমুল মার খাওয়ার পিছনে তো ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্তই। তার পরে আনল রজত ভাটিয়াকে। ফল, ওয়াটসনের দুটো ছয় এবং বিরাটের কাজটা সহজ হয়ে যাওয়া।
কিন্তু এর পরেও যদি প্রশ্ন করেন, ধোনিকে ভারতীয় টি-টোয়েন্টি ও ওয়ান ডে ক্যাপ্টেনসি থেকে সরিয়ে কোহালিকে আনা উচিত কি না, তা হলে বলব, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। আইপিএলের দশটা ম্যাচ দেখে ধোনিকে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার মানে হয় না। তা ছাড়া বিরাট দারুণ ক্যাপ্টেনসি করছে, তাও তো নয়। তা করলে ওর টিম সাতে থাকত না।
ক্যাপ্টেন বিরাটের চেয়ে বরং ব্যাটসম্যান বিরাট আরসিবিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শনিবার যেমন একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিল। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের যে সীমা, তা ও ক্রমশ বাড়িয়ে নিয়ে চলেছে। কোথায় গিয়ে থামবে, জানা নেই। বিরাটের এই ফর্ম না থাকলে কিন্তু ওর ক্যাপ্টেনসি নিয়েও প্রশ্ন উঠত। প্রায় প্রতি ম্যাচে দলে চার-পাঁচটা করে বদল। এটাও ঠিক সিদ্ধান্ত নয়। শুরুর দিকে একটা ম্যাচে ও দলে ছ’টা পরিবর্তন করেছিল। যার ফলে ওর টিম কিছুতেই ‘সেট’ হচ্ছে না। ক্রিস গেইলকে দুটো ম্যাচে বসিয়ে দিল। ও যে দিন ঝড় তুলবে, সে দিন আর কেউ পাত্তা পাবে না জেনেও। আসলে বিরাট নিজের ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, গেইলের সাহায্য ছাড়াই বড় রান তাড়া করে ম্যাচ জেতানোর ব্যাপারে নিশ্চিত।
এই প্রথম আইপিএল প্লে অফে সম্ভবত টিমকে তুলতে পারবে না ধোনি। বাকি চারটে ম্যাচে জিতলেও ব্যাপারটা কার্যত অসম্ভব। কিন্তু তাও বলব, ৫০ বা ২০ ওভারের ক্রিকেটের নেতৃত্ব থেকে ধোনিকে এখনই সরিয়ে দেওয়া উচিত নয়। বিরাটকে আর একটু সময় দেওয়া হোক। একটা সময় তো টেস্ট থেকে টি-টোয়েন্টি, পুরো ভারতীয় ক্রিকেটের দায়িত্বটা ওকেই নিতে হবে।