বিরাট ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে

সাবাইনা পার্ক টেস্ট অবিশ্বাস্য যুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্র করে দেওয়া দেখে টিম ইন্ডিয়ার ভেতরে ভেতরে কী চলছিল, আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। ম্যাচ শেষে অনিল কুম্বলের ছবিটাই সব বলে দিচ্ছিল।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৪
Share:

সাবাইনা পার্ক টেস্ট অবিশ্বাস্য যুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্র করে দেওয়া দেখে টিম ইন্ডিয়ার ভেতরে ভেতরে কী চলছিল, আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। ম্যাচ শেষে অনিল কুম্বলের ছবিটাই সব বলে দিচ্ছিল।

Advertisement

হতাশায় ভেঙে পড়া একটা মুখ। কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ড্র করে বেরিয়ে গিয়েছে।

আমার মতে, টেস্টটা ড্র-ও হয়নি। ফলাফল যা-ই দেখাক, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাবাইনা পার্কে জিতেছে! টেস্ট শুরুর আগে আমরা ভাবছিলাম যে, ভারত কত দিনে জিতবে? চার? না পাঁচ দিন লাগবে? প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দু’শোরও কমে শেষ। ভারত পাঁচশো তুলে দিয়েছে পাল্টা। তিনশোর উপর লিড। বিরাট কোহালিরা এই অবস্থা থেকে কত দিনে জিতবে, সেটাই তো আলোচনা হওয়া উচিত।

Advertisement

কিছুটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াই। এবং অনেকটা ভারতীয় স্ট্র্যাটেজির ব্যর্থতা যা হতে দিল না।

ক্যাপ্টেন কোহালির সমালোচনা করব না। ও সবে শুরু করেছে, চনমনে অধিনায়ক থেকে দুঁদে টেস্ট অধিনায়ক হতে ওরও সময় লাগবে। কিন্তু কয়েকটা ব্যাপার বলতে চাইব। আমরা জানি, ভারতের এই টেস্ট টিমে সেরা বোলার কে। প্রশ্ন হল, তার পরেও রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে পরে আনা হল কেন? আগে আমিত মিশ্রকে আনা হল। তার পর অশ্বিন। পরের দিকে একটা সময় অনেকক্ষণ ধরে আনাই হল না। মানছি, গতকাল পিচ থেকে মারাত্মক টার্ন অশ্বিন পায়নি। দুর্দান্ত বোলিং করেছে, তা-ও নয়। কিন্তু এটাও তো মানতে হবে যে, রবিচন্দ্রন অশ্বিন নামটা এখন বিপক্ষের কাছে ভয়ের হয়ে গিয়েছে। ওকে দেখলেই এখন ব্যাটসম্যানের মনে চলতে থাকে, আবার আসছে, কে জানে কী করে দেবে! ওকে আগে আনলে ক্যারিবিয়ানদের মনের উপর চাপ দেওয়া যেত।

বিরাটকে বুঝতে হবে, যে কাজটা অশ্বিনকে দিয়ে হবে তা মিশ্রকে দিয়ে হবে না। এটাও বুঝতে হবে যে, রোজ-রোজ মনের মতো পরিস্থিতি পাওয়া যাবে না। আসলে গণ্ডগোলটা হয়েছে অন্য জায়গায়। ভারত ভাবতে পারেনি যে, রস্টন চেজ-ব্ল্যাকউড-হোল্ডাররা আগ্রাসী ক্রিকেটের রাস্তায় চলে যাবে। পিচে কিছু ছিল না, ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে যে টার্ন ছিল, ফিফথ ডে উইকেটে তার কিছুই ছিল না। ভারত ব্যাট করার সময়ও এর চেয়ে বেশি সাহায্য পিচ থেকে বোলাররা পেয়েছে। সেটা কখনও কখনও হতেই পারে। টিমকে তৈরি থাকতে হবে তার জন্য। বুঝলাম না, কেন হাতে পাঁচ বোলার থাকা সত্ত্বেও তাদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আনা হল না?

তিনটে বড় রানের পার্টনারশিপ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। চেজ-ব্ল্যাকউড। চেজ-ডরিচ। চেজ-হোল্ডার। দু’টো একশোর বেশি। একটা একশোর সামান্য কম। এ সব জুটি ভাঙতে গেলে আনঅর্থোডক্স ভাবনা-চিন্তা চাই। মানে, পার্টটাইম বোলারদের দিয়ে কয়েক ওভার চেষ্টা করা। যাকে বিপক্ষ ধরবেই না। যেমন বিরাট নিজে। মানে বাঁধা স্ট্র্যাটেজির বাইরে গিয়ে ভাবা। যেটা বিরাট করল না। বিরাট পেসার দিয়ে চেষ্টা করেছে। মিশ্রকে দিয়ে রাউন্ড দ্য উইকেট করিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বলতে হবে যে, শামি বাদে কোনও পেসারকে ভয় লাগার কারণ ছিল না। আর মিশ্র দেখলাম, অর্ধেকের বেশি বল লেগ স্টাম্পের বাইরে ফেলে গেল।

পরের টেস্টে মিশ্রকে টিমে দেখলে অবাকই হব। ওর চেয়ে জাডেজা ভাল হবে। এই টিমটার সমস্যা হল, অশ্বিন যে দিন ভাল করবে, উইকেট নেবে, সে দিন ভাবতে হবে না। কিন্তু যে দিন ওর অফ ডে যাবে, বাকিরা কেউ ওর জায়গাটা নিতে পারবে না। জাডেজা পারবেই বলছি না, কিন্তু মিশ্রর চেয়ে ভাল পারবে। ও যে গতিতে বলটা রাখে, খেলা সহজ হয় না।

মনে হচ্ছে টেস্ট সিরিজটা এ বার জমে যাবে। এ সব কমজোরি টিম একটা ম্যাচ ভাল খেলে দিলে বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ বার বিশ্বাস করতে শুরু করবে যে, পঞ্চম দিনের উইকেটে যদি ওরা ৩৫০ তুলে দিতে পারে দু’উইকেট হারিয়ে, তা হলে প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেও পারবে। ভারত নিয়ে মানসিক গাঁটটা পার করে ফেলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের দু’টো টেস্টে কিন্তু অশ্বিনদের খাটাখাটনি আরও বেড়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন