ইমরান কি আজ ভারত-পাক ম্যাচ দেখতে আসবেন?

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হারের পরে আবার মুখোমুখি দুই প্রতিবেশী। মরুশহরে দেখা হচ্ছে প্রায় এক যুগ পরে।

Advertisement

কৌশিক দাশ

দুবাই শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৫
Share:

ইমরান খান

‘অ্যানিম্যাল ফার্ম’, ‘নাইনটিন এইটি ফোর’-এর জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েল এক বার বলেছিলেন, ‘‘সিরিয়াস খেলাধুলো হল গোলাগুলি ছাড়া যুদ্ধ।’’

Advertisement

দুবাইয়ের আইসিসি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির বাইরের রাস্তায়, প্রায় গায়ে ফোস্কা পড়া গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, বুধবার যে ভারত-পাকিস্তানের সাদা বলের লড়াইটা দেখা যাবে, তার উত্তাপ কি এর চেয়েও বেশি হবে?

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হারের পরে আবার মুখোমুখি দুই প্রতিবেশী। মরুশহরে দেখা হচ্ছে প্রায় এক যুগ পরে। ইংল্যান্ডে ওয়ান ডে এবং টেস্ট সিরিজ হারের পরে পাকিস্তান ম্যাচ শুধু এশিয়া কাপের একটা ম্যাচই নয়, ভারতের কাছে বড় সম্মানরক্ষার লড়াইও। যে লড়াইয়ে হারলে ইংল্যান্ড বিপর্যয়ও পিছনে চলে যেতে পারে।

Advertisement

যে ম্যাচ নিয়ে ইতিমধ্যেই হুঙ্কার দিতে শুরু করেছে পাকিস্তান। পাক অধিনায়ক সরফরাজ় আহমেদ অভিযোগ করেছেন, ভারত বাড়তি সুবিধে পাবে সব ম্যাচ দুবাইয়ে খেলবে বলে। আর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেও তাদের বাধ্য হয়ে অনেক দূরের আবু ধাবিতে খেলতে যেতে হবে। তাঁর দুই পেসারও পিছিয়ে নেই। হাসান আলি গর্জন করেছেন, ‘‘ভারতের দশটা উইকেট চাই আমার।’’ নবাগত উসমান খানের মন্তব্য, ‘‘পাঁচ উইকেট নিতে চাই ভারতের বিরুদ্ধে।’’ যা শোনার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভারতীয় ক্রিকেটভক্ত সহাস্যে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘উইকেট তো মোটে দশটা, তা হলে ওরা দু’জন মিলে পনেরোটা নেবে কী করে?’’

ঠাট্টার ছলে কথাগুলো ওড়াউড়ি করলে কী হবে, উত্তাপ কিন্তু বাড়ছে। দুবাইয়ের ৪১-৪২ ডিগ্রি আরও চড়ে যেতে পারে, যদি সত্যিই দেখা যায় সেই ছয় ফুটের, লম্বা চুলের মানুষটাকে। যিনি এই মরুভূমির দেশে অনেকবারই ভারতের বিরুদ্ধে বল হাতে দৌড় শুরু করেছিলেন। আজ, বুধবার আবু ধাবিতে আসছেন স্বয়ং ইমরান খান। যা দুবাই থেকে খুব বেশি হলে এক ঘণ্টার সামান্য বেশি রাস্তা। সরকারি কাজের ফাঁকে সময় বার করে কি এক বার মাঠে চলে আসবেন পাক প্রধানমন্ত্রী? পাকিস্তান দলের মিডিয়া ম্যানেজার এমাদ হামিদ দুপুরে বলছিলেন, ‘‘আমরা জানি না, ইমরান মাঠে আসবেন কি না। আবু ধাবিতে আসছেন, এটুকু জানি।’’ পাকিস্তান সাংবাদিক মহলেও কোনও পাকা খবর নেই। ইমরানের আসার সব চেয়ে বড় সমস্যা হল, সরকারি বাধা নিষেধ। একজন রাষ্ট্রপ্রধান এই ভাবে সরকারি সফরের মধ্যে অন্য শহরে খেলা দেখতে আসতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। তার ওপর থাকবে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। কিন্তু তিনি যে ইমরান খান। তাঁর পক্ষে হয়তো সবই সম্ভব। সরফরাজ আহমেদ বলেছেন, ‘‘ইমরান খান এলে দর্শকদের এবং আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার হবে।’’

কিন্তু ইমরান এলে স্টেডিয়াম জুড়ে যে গর্জনটা উঠবে, তা নিশ্চিত ভাবে চাপে ফেলে দেবে ভারতীয় দর্শকদের। এমনিতেই বিরাট কোহালি না খেলায় দুবাইয়ের প্রবাসী ভারতীয়দের অনেকেই ধরে নিয়েছেন, এই ম্যাচটা ভারত হারবে। আর সেই আতঙ্কে তাঁদের কেউ কেউ যে কাজটা করেছেন, তা বেশ অভিনব। স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাব ‘দুবাই রেকার্স’ এর কোচ সুদীপ চট্টোপাধ্যায় এক যুগেরও বেশি এখানে আছেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘এ বার অদ্ভুত একটা জিনিস দেখছি। বিরাট কোহালি খেলবে না বলে অনেক ভারতীয় বুধবারের ম্যাচের টিকিট বিক্রি করে দিয়েছে। এরা ধরেই নিয়েছে ভারত পারবে না। তাই গ্যালারিতে বসে পাকিস্তানের জয় দেখতে যাবে না।’’ ইতিহাস অবশ্য বলছে এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান পাল্লা দিয়ে জিতেছে। দশবারের মুখোমুখিতে পাঁচবার করে জিতেছে দুই দলই।

দুবাইয়ের গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচের উত্তাপ বাড়বে বুঝে গিয়েই হয়তো বিশেষ একটা ব্যবস্থা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রশাসন। ভারত আর পাকিস্তানি দর্শকদের বসার জায়গা আলাদা আলাদা করে দিয়েছে রং অনুযায়ী। ‘অরেঞ্জ জোন’ ভারতের, ‘গ্রিন জোন’ পাকিস্তানের। মাঠের বাইরে যত মেলামেশাই চলুক না কেন, মাঠের মধ্যে ভারত-পাক দর্শকদের কোনও মিশ্রণ চায় না তারা।

দু’দেশের দর্শকদের মিশ্রণ না ঘটলে কী হবে, আর একটা মিশ্রণ কিন্তু ঘটেছে। ক্রিকেট এবং মরুভূমির। ঝাঁ চকচকে দুবাইয়ের লম্বা লম্বা প্রাসাদোপম বাড়িগুলোর আড়ালে মরুভূমি লুকিয়ে থাকলেও, তার চরিত্র কী করে বদলে যাবে? মাটির তলা থেকে গরমের ভাপ একটা উঠে আসে। বৃষ্টি প্রায় হয়েই না। উইকেট শুকনো এবং মন্থর। যত ম্যাচ গড়ায় এই মন্থর পিচে শট খেলা কঠিন হয়ে পড়ে। সে কথাটা মাথায় রেখে স্থানীয় পিচ প্রস্তুতকারক বলে রেখেছেন, ‘‘স্কোরবোর্ডে কিন্তু বিশাল রান আশা করবেন না।’’ এশিয়া কাপ খেলতে আসা দলগুলো যেখানে অনুশীলন করে, সেই আইসিসি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে বেরিয়ে আসার সময় একটা দৃশ্য দেখে মনে হল, অরওয়েল বোধহয় কোথাও একটু অতিরঞ্জিত করে ফেলেছেন। ভারত-পাকিস্তানের পতাকা হাতে দুই দেশের দুই ক্রিকেটভক্তকে দেখতে দেখতে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল। বাইশ গজে লড়াই হবে, কিন্তু তা যুদ্ধ নয়। দুই দলের ক্রিকেট প্রতিভার টক্কর।

আর সেই টক্করের প্রভাব কোনও ভাবেই খেলার শেষে থাকবে না। তা সে ম্যাচ ঘিরে যত উত্তাপই থাকুক না কেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন