পুলে নিজেকে তাজা রাখছেন মণীশ। ছবি: টুইটার।
মোহক ছাঁটের চুপচাপ ভদ্রলোককে লবিতে খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও দেখা গেল না। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের শহরে এলে যে অভিজাত হোটেলটা বরাবরের বেসক্যাম্প হয় নাইটদের, নুঙ্গমবক্কমের সেই তাজ করমণ্ডল বোধহয় নাইট-সমর্থকদের চিরকালীন রোম্যান্সের জায়গা। কার্পেট-সজ্জিত লবি দিয়ে যদি হাঁটেন, নিঃসন্দেহে মনে পড়বে তিন বছর আগের এক মোহিনী রাত। ‘বাদশা’ তাঁর প্রথম আইপিএল চ্যাম্পিয়ন টিম নিয়ে ঢুকেছিলেন এই কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটেই। একটু এগোলে সুখস্মৃতির সেই বলরুম। এমএসডির সিএসকে-কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের নাইট-পার্টি ওখানেই হয়েছিল না? আর হ্যাঁ, মোহক ছাঁটের ভদ্রলোক কিন্তু তখনও টিমে ছিলেন। কে না জানে, সুনীল নারিনের বিষাক্ত স্পিনিং-ফিঙ্গার না থাকলে ওই রাতটাই আসে না!
আর আজ কি না সুনীল নারিনকেই কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
লবির কেকেআর-প্রতিভূরাও কেমন যেন ছড়ানো-ছেটানো, ক্লান্ত। মর্নি মর্কেলকে দেখা গেল লবিতে দাঁড়িয়ে। কিছু একটা খুঁজছেন। রেস্তোরাঁয় বসে গৌতম গম্ভীর। কী সব বলে যাচ্ছেন সহকারী কোচ বিজয় দাহিয়াকে? কেকেআর মিডিয়া ম্যানেজার ক্লিষ্ট হাসি হেসে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, টিমের মননে আর নতুন করে কী চলবে। দু’দিন আগে যা ছিল, দু’দিন পরেও তাই। পুরোদস্তুর ‘স্ট্যাটাস কো’।
রিপোর্টটা তো সোমবার রাতেও জমা পড়ল না। সুনীল নারিনের দ্বিতীয় বার অ্যাকশন পরীক্ষার রিপোর্ট।
কেকেআরের কেউ কেউ ধরে রেখেছিলেন, যেটা এ দিন আসছে। যেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে এত দিনের ক্যারিবিয়ান মারণাস্ত্র নিয়ে কোন রাস্তায় এগনো হবে। অ্যাকশন পাল্টে নতুন নারিন এখনও পুরনোর আশেপাশে নেই। তিয়াত্তর গড় রেখে দু’টো উইকেট এসেছে মাত্র। কিন্তু এম এস ধোনির টিমের বিরুদ্ধে সুনীল নারিন নাম-মাহাত্ম্য যে কী বস্তু, তিনি থাকা না থাকায় মানসিক যুদ্ধে কতটা প্রভাব পড়ে সেটা কেকেআর মননের মতো পরিসংখ্যানও জানে। গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের রেজাল্টটা একবার দেখে নিলেই বোধহয় চলবে।
রিপোর্ট নিয়ে নাটকের পরিধিও উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। কেকেআর এটা নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে যেতে চাইছে না। সোজাসুজি বলা হচ্ছে, বোর্ড যখন বলেছে দ্রুত রিপোর্টের ব্যবস্থা করবে, তখন করবে। কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর রাতে বলেও দিলেন, “এটা নিয়ে কোনও হইচই হোক, আমরা চাই না। বরং অপেক্ষা করব যতক্ষণ না আসে।” শোনা গেল কেকেআর ম্যানেজমেন্টের কাছে খবর, ওটা মঙ্গলবার ম্যাচের আগে এলেও এসে যেতে পারে। নিঃসন্দেহে তখন সেটা সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে নারিনকে খেলানোর। প্রশ্ন একটাই। চিপকে সিএসকের মতো হেভিওয়েট বিপক্ষের বিরুদ্ধে এমন পরিস্থিতি একটা টিমের পক্ষে কতটা আদর্শ? এমনিতেই শেষ দুটো ম্যাচ ভাল যায়নি কেকেআরের। বৃষ্টির ভোগান্তিতে একটা ম্যাচ হারতে হয়েছে। ইডেনেও বৃষ্টি এবং শেষে পয়েন্ট ভাগাভাগি। নারিন না পারলে আবার জোহান বোথা, আড়াই কোটির কারিয়াপ্পা বা ব্র্যাড হগের মধ্যে বিকল্পের খোঁজ। সিএসকে-তে কিন্তু একটা সুরেশ রায়না আছে। একটা এমএসডি আছে। একটা ব্রেন্ডন ম্যাকালাম আছে।
সন্ধেয় চেন্নাই পৌঁছে মাঠের দিকে এ দিন আর এগোয়নি কেকেআর। গেলে নেটে নিউজিল্যান্ডের ‘বাজ’-এর মারমার পুল কিংবা মারাত্মক ‘ম্যাকস্কুপ’-এর মহড়া দেখতে পেত। পিচের চরিত্রও চোখ এড়িয়ে যেত না নিশ্চিত। চেন্নাই কিউরেটর কেকেআরের স্পিন পর্যন্ত শুনেই বাকিটা বিরক্তিতে চিপকের বাইরে ফেলে দিলেন! উইকেটে স্পিনের দন্ত্যে ‘স’ পর্যন্ত নাকি নেই, বরং ম্যাকালাম-ডোয়েন স্মিথদের হাতের সুখের যথেষ্ট বন্দোবস্ত আছে। সিএসকে কোচ স্টিভন ফ্লেমিংয়ের সুক্ষ্ম খোঁচাগুলোও বোধহয় নাইটদের কানে আসত। ‘নারিনের সঙ্গে এটা ঠিক হচ্ছে না’, ‘এ ভাবে একজন ক্রিকেটারের উপর চাপ বাড়ানো ঠিক নয়’ জাতীয় কথাবার্তা যতই বিষণ্ণ গলায় আসুক, ভেতরে ভেতরে অতীতের ধুরন্ধর অধিনায়ক যে কেকেআরের নারিন-ধোঁয়াশায় খুব একটা অখুশি নন, সেটা তাঁকে না জিজ্ঞেস করেও লিখে ফেলা যায়!
কিন্তু এর একটাও নয়। সবচেয়ে বেশি টেনশন বোধহয় বোর্ডের কোনও কোনও কর্তার ব্যাখ্যা শুনলে হওয়া উচিত। কারও কারও অভিমত, শ্রী রামচন্দ্র স্পোর্টস সায়েন্স সেন্টারের পরীক্ষকরাও নাকি ধন্ধে যে, ঠিক কী রিপোর্ট নারিনকে নিয়ে এ বার দেওয়া উচিত। আর তাই নাকি দেরি হচ্ছে। কারণ তারাই প্রথমে নারিনকে পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিয়েছে। পাঁচটা ম্যাচ যেতে না যেতে আম্পায়ার নতুন রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তা হলে এ বার রিপোর্টে কী বলা হবে?
এতটা ঘোরপ্যাঁচ দাক্ষিণাত্যের সুপারহিরো রজনীকান্তের সিনেমাতেও থাকে কি? ঈশ্বর জানেন!