মত্ত প্যারিসে বলি দুই, চলল অবাধ লুটপাট 

একটু দূরেই ‘পাবলিসিস ড্রাগস্টোর’। সেখানে হানা দেয় উল্লাসরত ৩০ জনের একটি দল। যাদের প্রত্যেকের মুখেই ছিল স্কি-মুখোশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩৪
Share:

বিশ্বকাপ জয়ের রাতে প্যারিস। ছবি: এএফপি।

বিশ্বকাপ জয়ের রাতে জাতীয় পতাকা ও ‘স্মোক বম্ব’-সহ শুধু নির্ভেজাল আনন্দ-উৎসব, কোমার দোলানো, খানাপিনাই নয়। লুঠপাট, দুর্ঘটনার মতো ঘটনাও দেখা গেল প্যারিসের রাস্তায়। হল মৃত্যুও। ফুটবল বিশ্বকাপ ছবি ও কবিতার দেশে দ্বিতীয় বার আসার রাতে এটাই ছবি ফ্রান্সের।

Advertisement

বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হওয়ার ঘণ্টা তিনেক পরে শঁজে লিজে অ্যাভেনিউতে এ রকমই লুঠপাটের ঘটনা চোখে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। যেখানে দেখা যায়, জনা বারো দুষ্কৃতীকারী রাস্তার ধারে একটি জনপ্রিয় ‘ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’-এর জানলা ভেঙে জিনিষপত্র লুঠপাট করে নিয়ে যাচ্ছে।

একটু দূরেই ‘পাবলিসিস ড্রাগস্টোর’। সেখানে হানা দেয় উল্লাসরত ৩০ জনের একটি দল। যাদের প্রত্যেকের মুখেই ছিল স্কি-মুখোশ। তারাই ওই স্টোরের দরজা-জানলা ভেঙে বেশ কয়েক বোতল শ্যাম্পেন ও ওয়াইন নিয়ে পালায়। স্থানীয় মানুষজন অনেকেই এই দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধরে রাখেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, ‘‘এটা বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব হতে পারে না।’’

Advertisement

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে এর পরে পুলিশ উপস্থিতি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে শুরু করে। এর পরেই শুরু হয় পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ। জনতার মধ্য থেকেই পুলিশের দিকে উড়ে আসে ইঁট-পাটকেল, পানীয়ের ফাঁকা বোতল এবং ক্যান। ২০১৫ সালে প্যারিসে জঙ্গি হানার ঘটনা এখনও ভোলেনি ফ্রান্স। তাই ভিড়ের মধ্যে দাঙ্গাবাজরা যাতে ঢুকে না পড়ে, সে কারণে রবিবার রাতে ফরাসি রাজধানী প্যারিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছিল চার হাজার পুলিশকর্মীকে।

প্যারিস ছাড়াও আরও বড় আকারে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ হয়েছে ফ্রান্সের দক্ষিণের শহর লিয়ঁতে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচ দেখানো হচ্ছিল। আর তা দেখতেই পুলিশের গাড়ির ছাদে উঠে পড়ে একশোর বেশি যুবক। পুলিশ তাদের প্রথমে নামতে বললে তারা সেই আবেদনে প্রথমে কান দেয়নি। পরে প্রথমে লাঠি চালায় পুলিশ। কিন্তু তাতে আবার ওই দলের থেকে উড়ে আসে ইট-পাটকেল। এর পরেই কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে এসে উন্মত্ত জনতা এ বার দাহ্য বস্তু জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয় রাস্তায়। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। কিন্তু স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটার সময় দেখা যায়, পুলিশের বন্ধন ভেঙে ৫০ জনের একটি দল স্থানীয় সিটি সেন্টারে ঢুকে পড়তে চাইছে, লুঠপাট করার জন্য। তবে বিশ্বকাপ জয়ের রাত্রি বলেই হয়তো এই সব দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তবে কাপ জয়ের আনন্দে উন্মত্ত ফরাসি সমর্থকদের তাণ্ডব চলে অনেক বেশি রাত পর্যন্ত।

লুঠপাটের পাশাপাশি উন্মত্ত ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য জখমও হয়েছেন অনেকে। পূর্ব দিকের নাস্‌সি শহরের ফ্রুয়াঁ অঞ্চলে মত্ত ফরাসি সমর্থকরা রাস্তায় নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে মোটর সাইকেল চালানোর জন্য ধাক্কা খেয়ে গুরুতর জখম হয় তিন ও আড়াই বছরের দু’টি শিশু। ঘটনার পরেই এলাকা ছেড়ে পালান বাইক-আরোহীরা।

দক্ষিণ পূর্ব ফ্রান্সের আন্‌সি শহরে ম্যাচের পরেই মৃত্যু ঘটে এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তির। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই বাড়ির কার্নিশ থেকে সামনের ছোট খালে আনন্দে ঝাঁপ দেন তিনি। ঘটনাস্থলেই ঘাড় ভেঙে মৃত্যু হয় তাঁর।

ফ্রান্সের উত্তর দিকে সাঁ ফিলিক্স শহর থেকেও এসেছে জয়ের আনন্দে মৃত্যুর খবর। সেখানে আবার মদ্যপান করে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে গাড়ি চালিয়ে এক ব্যক্তি ধাক্কা মারেন রাস্তার ধারে বড় গাছে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন