মিশন মস্কো: মায়াবী মাঝমাঠ, চিন্তা আক্রমণে
Sport News

স্পেনকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন লোপেতেগি

২০১৪ বিশ্বকাপে যারা গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছিল, যারা ইউরো ২০১৬-তে ব্যর্থ হয়েছিল, তারা ফিরে এসেছে। তারা আবার হাসছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০৪:৩৪
Share:

জুটি: কোচ লোপেতেগি, শিল্পী ইনিয়েস্তাকে নিয়ে আশায় স্পেন। ফাইল চিত্র

লা রোখা আবার হাসছে!

Advertisement

২০১৪ বিশ্বকাপে যারা গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছিল, যারা ইউরো ২০১৬-তে ব্যর্থ হয়েছিল, তারা ফিরে এসেছে। তারা আবার হাসছে।

গত এক বছরে স্পেনের রেকর্ড দেখে মনে হচ্ছে, রাশিয়ায় তিকিতাকার ধ্বংসাবশেষ যাচ্ছে না। বরং যাচ্ছে সেই দেশ, যারা ২০০৮ এবং ২০১২-র মধ্যে তিনটি বিশ্বমানের ফুটবল প্রতিযোগিতা জিতেছিল। এবং, প্রায় অকেজো হয়ে পড়া স্প্যানিশ আর্মাডাকে ফের সক্রিয় করে তোলার নেপথ্যে তাদের নতুন গুরু— য়ুলেন লোপেতেগি। ২০১৬-তে ইউরো বিপর্যয়ের পরে যিনি ভিসেন্তে দেল বস্কির জায়গায় স্পেনের কোচের দায়িত্ব পান।

Advertisement

সব চেয়ে চমকে ওঠার মতো ব্যাপার হচ্ছে, পুরনো সৈনিকদের নিয়েই স্পেনকে ফের শক্তিশালী করে তুলেছেন লোপেতেগি। যাঁদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল, তাঁদেরই ফের চনমনে যোদ্ধায় পরিণত করেছেন নতুন কোচ। দাভিদ দ্য হিয়া, জেরার পিকে, সের্খিৈয়ো র‌্যামোস, জর্ডি আলবা, সের্খিয়ো বুসকেৎস, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, দাভিদ সিলভা। ইউরো ২০১৬-তে ইতালির কাছে হেরে বিদায় নেওয়া স্পেন দলের সাত জন থাকছেন রাশিয়াতে। চোটের জন্য আলভারো মোরাতা ছিটকে না গেলে সংখ্যাটা আট হত। ধরে রাখা যায়, রাশিয়া বিশ্বকাপে লোপেতেগির প্রথম একাদশে এই সাত জনই থাকবেন। বাকি জায়গাগুলি নেবেন কোকে, থিয়াগো আলকানতারা (না খেললেও দু’জনেই ২০১৬ ইউরোর স্কোয়াডে ছিলেন), দানি কার্ভাহাল (চোট থাকায় খেলেননি), ইস্কো এবং দিয়েগো কোস্তা। কাগজে-কলমে অন্তত স্বর্ণযুগের স্পেন দলের মতোই শক্তিশালী দেখাচ্ছে। পিকে, র‌্যামোস, ইনিয়েস্তা এবং দাভিদ সিলভা থাকায় পুরনো সেই সোনার প্রজন্মের ছোঁয়া ভাল মতোই থেকে যাচ্ছে। ফুটবল ভক্তদের জন্য আরও সুখবর হচ্ছে, তিকিতাকার সেই জাদুকরী ভঙ্গি ধরে রেখেই গত এক বছর ধরে সাফল্য পেয়েছে এই স্পেন দল। সেই কারণে রাশিয়ায় ইনিয়েস্তাদের ফুটবলে ফের মুগ্ধ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অনেকে।

স্প্যানিশ ফুটবলের ঐতিহ্য মেনে লোপেতেগির দর্শনেও প্রধান বস্তু সেই বল। তিকিতাকার সেই প্রধান মন্ত্র— বল রাখো নিজের কাছে আর হারালেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের দখলে ফিরিয়ে আনো। স্পেনের তিকিতাকা নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্কের ঝড় বয়ে গেলেও লোপেতেগি স্প্যানিশ ফুটবল দর্শন ছেড়ে বেরোননি। পুরনো আর নতুনের মিশেলে ফের ঈর্ষণীয় মিডফিল্ড গড়ে ফেলেছেন। বুস্কেৎস, থিয়াগো আলাকান্তারা, ইনিয়েস্তা, ইস্কো এবং দাভিদ সিলভা। যে কোনও প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরাতে পারে মাঝমাঠের এই পঞ্চক।

মিডফিল্ড ফের ঝকমক করলেও স্পেনের চিন্তার জায়গা হচ্ছে আক্রমণ ভাগ। স্পেন সব চেয়ে বেশি সফল হয়েছিল ‘ফল্‌স নাইন’-এ খেলে। যে রণকৌশলে ফরোয়ার্ড লুকিয়ে থাকবে মিডফিল্ডারদের মধ্যে। ফাব্রেগাসকে এই ভূমিকাতেই ব্যবহার করতেন দেল বস্কি। এখন মার্কো আসেনসিওকেও সে ভাবেই খেলানোর চেষ্টা হচ্ছে। দিয়েগো কোস্তা এক নম্বর স্ট্রাইকার হলেও পাসিং ফুটবলের রণনীতিতে তিনি কতটা সফল হতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কোস্তার ফুটবল শক্তি নির্ভর। স্পেনের ফুটবল শিল্পময়। মিলের চেয়ে অমিলই বেশি।

স্প্যানিশ লিগে সেল্টা ভিগোতে খেলা ইয়াগো এবং ভ্যালেন্সিয়াতে খেলা রদ্রিগো আছেন স্কোয়াডে। প্রয়োজনে তাঁদের কথাও ভাবা যেতে পারে।

আক্রমণের ঘুঁটি সাজানোর পাশাপাশি লোপেতেগির জন্য আর একটি চিন্তা— কার্ভাহালের চোট। বার্সেলোনা থেকে সদ্য বিদায় নেওয়া ইনিয়েস্তার উপর নজর থাকবে ফুটবল দুনিয়ার। এটাই শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে তাঁর। তেমনই নতুন তারাকে দেখার অপেক্ষায় থাকবে বিশ্ব। তিনি ইস্কো, ইতিমধ্যেই পণ্ডিতদের মুগ্ধ করেছেন অসাধারণ ফুটবল বোধ, বিষাক্ত ড্রিবলিং এবং দর্শনীয় ফাইনাল পাস দিয়ে।

লা রোখা সত্যিই আবার হাসছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন