Sport News

কেন ঝড়ে উড়ে গেল পানামা, শুরু বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখা

ববি মুর, ববি চার্লটন, গ্যারি লিনেকার, পল গাসকোয়েন, অ্যালান শিয়েরার, ডেভিড বেকহ্যাম, মাইকেল আওয়েন থেকে ওয়েন রুনি— গত ৫২ বছরে বিশ্ব ফুটবলে একের পর এক তারকা উপহার দিয়েছে ইংল্যান্ড। অথচ বিশ্বকাপ অধরাই থেকে গিয়েছে।

Advertisement

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ০৩:৫৭
Share:

শীর্ষে: চলতি বিশ্বকাপে এই নিয়ে পাঁচ গোল। পানামার বিরুদ্ধে রবিবার হ্যাটট্রিক করে হ্যারি কেন টপকে গেলেন রোনাল্ডোকে। গেটি ইমেজেস

ইংল্যান্ড ৬ • পানামা ১

Advertisement

ইংল্যান্ড যখন প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৬৬ সালে, তখন আমার বয়স মাত্র দশ। তাই আমাকে বাড়িতে রেখেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে জার্মানির বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতে গিয়েছিলেন বাবা। সে দিন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, এক দিন আমিও মাঠে বসে ইংল্যান্ডের বিশ্বজয় দেখব। কিন্তু প্রত্যেক বার স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছি। তবে এ বার মনে হচ্ছে, অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।

ববি মুর, ববি চার্লটন, গ্যারি লিনেকার, পল গাসকোয়েন, অ্যালান শিয়েরার, ডেভিড বেকহ্যাম, মাইকেল আওয়েন থেকে ওয়েন রুনি— গত ৫২ বছরে বিশ্ব ফুটবলে একের পর এক তারকা উপহার দিয়েছে ইংল্যান্ড। অথচ বিশ্বকাপ অধরাই থেকে গিয়েছে। আশা করছি হ্যারি কেন, রাহিম স্টার্লিংরা সেই ছবিটা বদলাতে সফল হবেন।

Advertisement

বিশ্বকাপ শুরুর মাসখানেক আগে ইংল্যান্ডে গিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ইংল্যান্ড যে রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, কেউ আশাই করছে না। আমার এক বন্ধু তো বলেই ফেলল, ‘‘লিনেকার, বেকহ্যামের মতো ফুটবলাররাই পারলেন না। এঁরা কী করবেন? হ্যারি কেনদের নিয়ে বেশি আশা না-করাই ভাল। শেষ ষোলোয় পৌঁছতে পারলেই যথেষ্ট।’’ আমি সে দিনই ওকে বলেছিলাম, ‘‘তারকা না-থাকাটাই আমাদের দলের সব চেয়ে বড় সুবিধে। দেখবে, এঁরাই বিশ্বকাপে চমকে দেবেন।’’

আমার অনুমানই ঠিক। টিউনিশিয়াকে ২-১ হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই তার ইঙ্গিত দিয়েছিল গ্যারেথ সাউথগেটের দল। রবিবার তো পানামাকে উড়িয়েই দিল ইংল্যান্ড। হ্যাটট্রিক করলেন হ্যারি কেন। দুই ম্যাচ মিলিয়ে পাঁচ গোল করে সোনার বুট দখলের লড়াইয়ে ঢুকে পড়লেন টটেনহ্যাম হটস্পার স্ট্রাইকার। ২০১৭-১৮ মরসুমে ক্লাবের হয়ে ৪৮ ম্যাচে ৪১ গোল করেছেন। ইপিএলে অল্পের জন্য সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার হ্যাটট্রিক হয়নি হ্যারি কেনের। তবুও রুনিদের মতো ওঁকে নিয়ে মাতামাতি হয় না। রাশিয়া বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের ফুটবল আকাশে জন্ম নিলেন হ্যারি কেন নামের নতুন তারা।

নিজ়নি নোভগোরদ স্টেডিয়ামে পানামার বিরুদ্ধে ম্যাচের আট মিনিটেই গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন জন স্টোনস। কর্নারের সময়ে রক্ষণ ছেড়ে ইংল্যান্ড ডিফেন্ডার কখন উঠে এসেছেন, বুঝতেই পারেননি পানামার ফুটবলাররা। ২২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল হ্যারি কেনের। ৩৬ মিনিটে গোল করেন জেসে লিনগার্ড। চার মিনিটের মধ্যে ফের গোল স্টোনসের। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন হ্যারি কেন। অর্থাৎ, প্রথমার্ধেই ইংল্যান্ড ৫-০ এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে ৬২ মিনিটে হ্যাটট্রিক করে উঠে যান হ্যারি কেন। পানামার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ফিলিপে বালয়।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে ইংল্যান্ড সব চেয়ে বেশি ব্যবধানে জিতে শেষ ষোলোয় পৌঁছে যাওয়ায় আমি খুশি তো বটেই, তার চেয়েও বেশি উচ্ছ্বসিত খেলা দেখে। ইংল্যান্ডে ৪-৪-২ ছকই সব চেয়ে জনপ্রিয়। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ববি রবসন ৩-৫-২ ছকে খেলে চমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, সেমিফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছিলাম। তার পরেই ইংল্যান্ড ফিরে যায় পুরনো ছকে। পরের বিশ্বকাপে যোগ্যতাই অর্জন করতে পারিনি আমরা।

সাউথগেটের মধ্যে কিংবদন্তি ববি রবসনের ছায়া দেখছি। দলকে খেলাচ্ছেন ৩-৫-২ ছকে। এই পদ্ধতিতে খেলা কিন্তু একেবারেই সহজ নয়। ফুটবলারদের সামান্য বোঝাপড়ার অভাব মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। ইংল্যান্ডের দু’টো ম্যাচেই দেখলাম লিনগার্ড, স্টোনস, হ্যারি কেনদের মধ্যে দুর্দান্ত বোঝাপড়া। এর জন্য কৃতিত্ব দেব কোচকেই। সাউথগেট ইংল্যান্ডকে দল হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছেন। সেটা সম্ভব হয়েছে, দলে কোনও তারকা না-থাকায়।

ইংল্যান্ড ফুটবলে সাউথগেট পরিচিত পরিশ্রমী ও কার্যকর ফুটবলার হিসেবে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বেশিটাই খেলেছেন ক্রিস্টাল প্যালেস এবং অ্যাস্টন ভিলার হয়ে। জাতীয় দলে যখন সুযোগ পেয়েছেন, পাশে পেয়েছেন শিয়েরার, বেকহ্যামের মতো তারকাদের। ফলে বরাবরই প্রচারের আড়ালে থেকে গিয়েছেন। নীরবে নিজের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন সাউথগেট। কোচ হিসেবেও যে তাঁর দর্শন বদলায়নি, প্রথম বুঝেছিলাম রুনিকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে। ইংল্যান্ডের কোচ হওয়ার পরেই সাউথগেট স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, খেলোয়াড়ের নাম, কোন ক্লাবে খেলেন— এ সব গুরুত্বপূর্ণ নয়। পারফরম্যান্সই শেষ কথা। তাই হ্যারি কেনকে বেছে নেন অধিনায়ক হিসেবে। পানামার বিরুদ্ধে গোলরক্ষক ছিলেন এভার্টনের জর্ডান পিকফোর্ড। বিশ্বের কত জন ওঁকে চেনেন, আমার সন্দেহ আছে।

সংবাদমাধ্যমের চাপ অবশ্য ইংল্যান্ডের একটা সমস্যা। বেকহ্যামরা যখন খেলতেন, সংবাদমাধ্যমের নজর অনেক বেশি থাকত ইংল্যান্ড দলটার উপরে। সেই চাপটা অনেক সময়েই সামলাতে পারেননি ফুটবলাররা। এ বার কিন্তু হ্যারি কেন-দের নিয়ে ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের খুব একটা উৎসাহ ছিল না শুরুর দিকে। ফলে ওঁরা পুরোপুরি চাপমুক্ত হয়ে খেলছেন। তবে পানামার বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ের পরে হ্যারি কেন-রা এখন তারকা। ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমেও মাতামাতি শুরু হয়ে যাবে। আনন্দের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন