রুশ রক্ষণেই আটকে গেল তিকিতাকা

স্পেনের ফুটবলারেরা নিজেদের মধ্যে মোট পাস খেলেছেন ১১৩৭টি। যার মধ্যে নিখুঁত পাস ১০২৯টি। রাশিয়ার ফুটবলারেরা মোট পাস খেলেছেন মাত্র ২৮৫টি। নিখুঁত পাস ২০২টি। এখানেই শেষ নয়।

Advertisement

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০৬:৩২
Share:

স্পেনের তিকিতাকা স্তব্ধ করতে রক্ষণাত্মক রণনীতিই ছিল রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র। ছবি: এএফপি।

শনিবার রাতে লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রবিবার বিদায় নিলেন আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বিবর্ণ বিশ্বকাপ!

Advertisement

মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে আয়োজক দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে দল গঠনেই ভুল করেছিলেন স্পেনের কোচ ফের্নান্দো ইয়েরো। প্রথম একাদশে ইনিয়েস্তাকে রাখেননি রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন তারকা। ইয়েরো-র হয়তো মনে হয়েছিল, রাশিয়ার ফুটবলারদের সঙ্গে শারীরিক শক্তিতে এঁটে উঠতে পারবেন না ৩৪ বছর বয়সি ইনিয়েস্তা। তাই তিনি প্রথম দলে রেখেছিলেন দুই তরুণ— ইস্কো ও মার্কো আসেন্সিয়োকে।

স্পেনের ফুটবলারেরা নিজেদের মধ্যে মোট পাস খেলেছেন ১১৩৭টি। যার মধ্যে নিখুঁত পাস ১০২৯টি। রাশিয়ার ফুটবলারেরা মোট পাস খেলেছেন মাত্র ২৮৫টি। নিখুঁত পাস ২০২টি। এখানেই শেষ নয়। স্পেনের বল পজেশন ছিল ৭৩ শতাংশ। কিন্তু ইনিয়েস্তার অভাবে ছিল না সেই ছন্দ।

Advertisement

রাশিয়ার ফুটবলারেরা এগিয়ে ছিলেন শুধু একটা ব্যাপারেই। পুরো ম্যাচে তাঁরা দৌড়েছেন মোট ১৪৬ কিলোমিটার। দিয়েগো কোস্তারা দৌড়েছেন ১৩৭ কিলোমিটার। এটা হওয়ারই ছিল। কারণ, স্পেনের তিকিতাকা স্তব্ধ করতে রক্ষণাত্মক রণনীতিই ছিল রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র। স্পেনের অধিকাংশ আক্রমণ থামিয়ে দিচ্ছিল মাঝমাঠে। তাই বেশি দৌড়তেই হত রাশিয়ার ফুটবলারদের।

তা সত্ত্বেও ১২ মিনিটে রাশিয়ার ডিফেন্ডার সের্গেই ইগনাশেভিচের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গিয়েছিল স্পেন। সেই স্বস্তি অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ৪১ মিনিটে জেরার পিকের মারাত্মক ভুলে সমতা ফেরাল রাশিয়া। বুঝতে পারলাম না ওঁর মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার পেনাল্টি বক্সের মধ্যে কেন হ্যান্ডবল করলেন? গোল করতে ভুল করেননি আর্চোম জুবা।

শেষ পর্যন্ত ৬৭ মিনিটে ইনিয়েস্তাকে নামালেন ইয়েরো। স্পেনের আক্রমণের ঝাঁঝ কিছুটা বাড়ল। প্রথমার্ধে রাশিয়ার পেনাল্টি বক্সের বাইরেই থেমে যাচ্ছিল স্পেনের আক্রমণ। ইনিয়েস্তা নেমে বেশ কয়েকটা ডিফেন্স চেরা থ্রু বাড়ালেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য স্পেনের এই দলে ফের্নান্দো তোরহেস বা আলভারো মোরাতার মতো স্ট্রাইকার নেই। কোস্তার একার পক্ষে স্পেনকে সব ম্যাচ জেতানো সম্ভব নয়। ৮০ মিনিটে কোস্তাকে তুলে ইয়াগো আসপাসকে নামান স্পেন কোচ। অবশ্য ইয়েরোকে দোষও দেওয়া যায় না। দল তো গড়েছিলেন জুলিয়েন লোপেতেগি।

নির্ধারিত সময়ে ফয়সালা না হওয়ায় ম্যাচ গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও এক ছবি। স্পেনের আক্রমণকে থামাতে রাশিয়ার ফুটবলারদের ক্লান্তিহীন লড়াই।

তবে ম্যাচটা টাইব্রেকারে যাওয়ায় ভেবেছিলাম, স্পেন জিতবে। কারণ, অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে ওদের ফুটবলারেরা। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে ৪-৩ জিতে শেষ আটে পৌঁছে গোল রাশিয়া। নেপথ্যে গোলরক্ষক ইগর আকিনফেভ। টাইব্রেকারে কোকে ও ইয়াগো আসপাসের শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচালেন। টাইব্রেকারেও প্রায় ডুবিয়ে দিচ্ছিলেন পিকে। ওঁর শট পোস্টে লেগে কোনও মতে গোলে ঢোকে। এই বিশ্বকাপে কোনও ম্যাচেই পিকে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। র‌্যামোসের সঙ্গে ওঁর বোঝাপড়ার অভাব বার বারই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেখে ভাল লাগল, লেভ ইয়াশিনের দেশে এক গোলরক্ষকের হাতে ধরেই ঐতিহাসিক জয় পেল রাশিয়া!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন