উৎসব: আজ ভারতীয় সময় রাত সাড়ে আটটায় রাশিয়া ও সৌদি আরবের ম্যাচ দিয়ে শুরু বিশ্বকাপ। বুধবার মস্কো ভরে গিয়েছে মেক্সিকো, কলম্বিয়া আর মিশরের বর্ণময় ফুটবল পর্যটকে। ছবি: এএফপি
মোয়াসির বারবোসা নাসিমেন্তো হতে হয়নি লুই ফিলিপ স্কোলারিকে!
ঠোঁটকাটা ‘বিগ ফিল’ (এই নামেই স্কোলারিকে ডাকে ব্রাজিলের ফুটবল মহল) চার বছর পরেও রয়ে গিয়েছেন আগের মতোই সোজাসাপ্টা। বারবোসার মতো একঘরেও হতে হয়নি তাঁকে। বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে সাত গোল খাওয়ার চার বছর পরেই তিনি বিশ্বকাপ দেখতে সস্ত্রীক চলে এসেছেন রাশিয়ায়।
১৯৫০ সালে প্রথম বার বিশ্বকাপ হয়েছিল ব্রাজিলে। বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়েও ১-২ হেরে ফিরেছিল ব্রাজিল। ব্রাজিলীয়রা খলনায়ক বানিয়ে দিয়েছিলেন গোলকিপার বারবোসাকেই। তার পরে তিনি ব্রাজিল ফুটবলে প্রায় নির্বাসিত হয়ে পড়েন দীর্ঘ পাঁচ দশক। ব্রাজিলের অনুশীলন বা ম্যাচে ঢোকার অনুমতিও পেতেন না।
২০০২ সালে জাপানে স্কোলারির কোচিংয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। তার দু’বছর আগেই মারা যান বারবোসা। মৃত্যুর আগে সখেদে এই প্রাক্তন গোলকিপার বলে গিয়েছিলেন, ‘‘ব্রাজিলে সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ ৩০ বছর। কিন্তু বিনা দোষে পাঁচ দশক শাস্তি পেলাম!’’
স্কোলারি ব্রাজিল ফুটবলকে সাফল্য ও ব্যর্থতা—দুইয়েরই স্বাদ দিয়েছেন। ২০০২ সালে বিশ্বকাপ দিয়ে পেলের দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন পূজনীয় চরিত্র। কিন্তু স্কোলারির সেই ভাবমূর্তি ম্লান হয়ে গিয়েছে চার বছর আগে অভিশপ্ত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে।
বুধবার বিকেলে রেড স্কোয়ার, ক্রেমলিন চত্বরে থিকথিকে ভিড়।
চব্বিশ ঘণ্টা পরেই লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের বোধন। তার আগে বুধবার বিকেলে রেড স্কোয়ার, ক্রেমলিন চত্বরে থিকথিকে ভিড়। উদ্বোধন দেখতে হাজির গোটা বিশ্বের ফুটবল পর্যটকেরা। প্রথম ম্যাচেই আবার মুখোমুখি সৌদি আরব বনাম রাশিয়া। কড়া নিরাপত্তা চার দিকে। হঠাৎ ডান দিকে ঘুরতেই দেখা গেল, রেড স্কোয়ারে আর চার-পাঁচ জন সমর্থকের মতোই স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরছেন স্কোলারি। সঙ্গে কয়েক জন ব্রাজিলীয় সাংবাদিক। তাঁদের সঙ্গেই কথা বলছিলেন তিনি। হাতের সামনে ব্রাজিলের প্রাক্তন কোচ! এগিয়ে গিয়ে ভারতীয় বলতেই করমর্দন করলেন। মেটালেন নিজস্বীর আবদারও। বললেন, উদ্বোধনী ম্যাচ দেখেই উড়ে যাবেন ব্রাজিলের ম্যাচ দেখতে।
সাত গোলের প্রসঙ্গ যে এর মধ্যে উঠে গিয়েছে, বুঝতে পারিনি। স্কোলারি উত্তর দিলেন শান্ত মেজাজেই। ব্রাজিলীয় সাংবাদিকেরাই তর্জমা করে দিলেন। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে স্কোলারি বলে গেলেন, ‘‘ওই হার অতীত। এ বার দেখবেন নতুন ব্রাজিলকে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘নেমারের চোটটা এ বার অভিশাপের বদলে আশীর্বাদ। তিন মাস বিশ্রাম পাওয়া তরতাজা নেমারকে আটকাতে রাতের ঘুম ছুটে যাবে ডিফেন্ডারদের।’’