আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেখে বোধহয় অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি হইনি। কারণ বিগত কয়েক বছরে ওদের ক্রিকেট টিমকে ইংল্যান্ড একদম নতুন করে তৈরি করেছে। আর টি-টোয়েন্টির মতো ক্রিকেটের ফর্ম্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সব সময়ই একটা আলাদা আকর্ষণ।
সে যাই হোক, সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে কিন্তু একটা চমৎকার ফাইনাল ম্যাচই শুধু নয়, আরও অনেক আকর্ষণ রেখে গিয়েছে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে। বন্য শক্তি এবং সীমাহীন চাপ মাথায় নিয়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই দেখা গিয়েছে ক্রিকেটের সেই চিরাচরিত টেকনিক এবং কেতাবি ব্যাপারস্যাপারও। বেশ কিছু টিমের সেরা টি-টোয়েন্টি প্লেয়ার টেস্ট প্লেয়ারদের মধ্যেও থাকবেন।
টি-টোয়েন্টি স্পেশ্যালিস্ট ক্রিস গেইলের কথাই ধরুন। ওঁর সব ধ্বংসাত্মক সব শটের বাইরেও অনেক শট দেখা গিয়েছে যেখানে টেকনিকের ছাপ স্পষ্ট। হাতের কাছে আরও বড় উদাহরণ বিরাট কোহালি। এক জন ক্লাস ব্যাটসম্যান। দুরন্ত টেকনিক। অক্রিকেটীয় শট যদি ওর ব্যাট থেকে বেরিয়েও তাকে তা হলে তার সংখ্যাও বেশ অল্প। এর ফলে সব ধরনের ক্রিকেটকেই উৎসাহিত করছে ওরা।
ঠিক একই কথা প্রযোজ্য বোলারদের সম্পর্কেও। ওদেরও একটা বিবর্তন হয়েছে বলা য়েতে পারে। স্পিনারদের ক্ষেত্রে কথাটা ভীষণ ভাবে প্রযোজ্য। স্যামুয়েল বদ্রি বা রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা যে ভাবে ব্যাটম্যানকে বোকা বানিয়ে উইকেট তুলছে এতে পরের প্রজন্মের স্পিনাররা উৎসাহ পাবেই। এর বাইরে ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস, জো রুট, ডেভিড উইলিরা ব্যাটসম্যান সমৃদ্ধ টি-টোয়েন্টির ভরা বাজারেও নিজেদের জাত চিনিয়ে দিয়েছে।
পাশাপাশি এ বারের টুর্নামেন্ট বহু নতুন ক্রিকেট সমর্থককে এক ছাতায় তলায় আনতে পেরেছে তা বলাই যেতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চাপ সরিয়ে মরণপণ লড়াই আর তার পর জয়— নিঃসন্দেহে ক্রিকেট ফ্যানদের অনুপ্রাণিত করবে। যেমন কার্লোস ব্রেথওয়েটের নিখুঁত পারফরম্যান্সে ক্যারিবিয়ানদের জয়, কঠিন সময়ে ড্যারেন স্যামির অনুপ্রেরণা জাগানো অধিনায়কত্ব, দাঁতে দাঁত চাপা পরিস্থিতির ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ বা ক্রিকেট বামন আফগানিস্তানের পারফরম্যান্স আকর্ষণ বাড়িয়েছে এ বারের বিশ্বকাপের।
আর এখান থেকেই উঠে আসে প্রশ্নটা। ক্রিকেটের বৃহৎ মঞ্চে আইসিসি-র অ্যাসোসিয়েট দেশগুলো জায়গা করে নিতে পারে। আসলে ক্রিকেট বিশ্বের কুলীন দেশগুলো যতক্ষণ না প্রথম সারির দেশগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে ততক্ষণ ওই দেশগুলোর কোনও বড়সড় উন্নতি হবে না। সেখানে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চটাই ক্রিকেটকে প্রসারিত করার একটা বড় জায়গা।