ম্যাচ এনে দিল ঋদ্ধি-জাডেজা

এমন একটা টেস্ট সিরিজ এই এক মাসে আমরা দেখলাম, যা বার বার মনে করিয়ে দিয়েছে— হ্যাঁ, এক এবং দু’নম্বরের লড়াই হচ্ছে। প্রতি সেশনে ম্যাচের রং বদলেছে। ম্যাচ এক বার অস্ট্রেলিয়ার তো এক বার ভারতের হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০৪:০১
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

এমন একটা টেস্ট সিরিজ এই এক মাসে আমরা দেখলাম, যা বার বার মনে করিয়ে দিয়েছে— হ্যাঁ, এক এবং দু’নম্বরের লড়াই হচ্ছে। প্রতি সেশনে ম্যাচের রং বদলেছে। ম্যাচ এক বার অস্ট্রেলিয়ার তো এক বার ভারতের হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সোমবারের পরে বলে দেওয়া যায়, অবিশ্বাস্য কিছু না হলে টেস্ট আর অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঘুরবে না। এই ভাবে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য আমি দু’টো পার্টনারশিপের কথা বলব। এক, ব্যাটিংয়ে রবীন্দ্র জাডেজা এবং ঋদ্ধিমান সাহা। দুই, বোলিংয়ে উমেশ যাদব এবং ভুবনেশ্বর কুমার। তবে আমার কাছে গেমচেঞ্জার হল জাডেজা-ঋদ্ধির জুটিটাই।

কেন বলছি এ কথা? এ রকম অল্প রানের ম্যাচে ৩০-৩৫ রানের লিডটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। যে টিমটা এই লিড পেয়ে যায়, মানসিক ভাবে তারা ভীষণ তেতে থাকে। এখানে ভারত না হয়ে যদি অস্ট্রেলিয়া ৪০-৫০ রানে এগিয়ে থাকত, তা হলে কিন্তু ওদের ব্যাটসম্যানদের শরীরীভাষাই অন্য রকম হয়ে যেত। ভারতের সামনেও চতুর্থ ইনিংসে টার্গেটটা বেশি থাকত। আমি বলছি না, অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকলে ম্যাচের ছবিটা বদলে যেত, কিন্তু সে রকম একটা আশঙ্কা থাকতই। জাডেজা-ঋদ্ধির ৯৬ রানের জুটিটাই অস্ট্রেলিয়াকে সেই সুবিধে পেতে দেয়নি। এখানেই ব্যাকফুটে চলে যায় স্টিভ স্মিথরা।

Advertisement

ঋদ্ধি এই সিরিজটায় দারুণ পরিণত ব্যাটিং করল। সোমবার ধর্মশালায় ঋদ্ধি আর জাডেজার রসায়নটা দেখার মতো ছিল। ঋদ্ধি অনেক সাবধানী ছিল। যখনই পারল স্ট্রাইক রোটেট করল। আর জাডেজা সুযোগ পেলেই আক্রমণে গেল। ওই সময় অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার প্যাট কামিন্স-জস হেজ্‌লউড আগুন ছোটাচ্ছিল। কিন্তু ঋদ্ধিরা ওদের দারুণ সামলে দেয়। আমি তো বলব, টেকনিক্যালি আমাদের ব্যাটসম্যানরা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে পেস বোলিংটা অনেক ভাল খেলেছে। টিভি-তে তখন দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল, ভারত যত অস্ট্রেলিয়ার স্কোরের কাছে চলে আসছিল, স্মিথ কী রকম টেনশনে পড়ে যাচ্ছিল।

স্মিথদের টেনশন আতঙ্কে বদলে দিল আর একটা পার্টনারশিপ। উমেশ-ভুবনেশ্বরের। উমেশ হল অনেকটা ঋদ্ধি প্রজাতিরই ক্রিকেটার। একেবারে নীরব কর্মী। যারা ঠিক সময়ে নিজেদের কাজটা করে যাবে, কিন্তু কখনওই সে ভাবে প্রচারের আলোয় আসবে না। এ রকম আরেক জনের কথা আমার মনে পড়ে যাচ্ছে। গর্ডন গ্রিনিজ। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই বলে থাকেন, গ্রিনিজ কিন্তু রিচার্ডসের মতোই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ছিলেন। কেউ কেউ তো এও বলে থাকেন, গ্রিনিজের ডিফেন্স রিচার্ডসের চেয়েও ভাল ছিল। আমিও এ ব্যাপারে একমত। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, রিচার্ডস খেলার সময় গ্রিনিজ ক’টা হেডলাইন পেত?

উমেশের ঠিক একই অবস্থা। এই সিরিজে দুর্দান্ত বল করল। কিন্তু অশ্বিন-জাডেজা-কুলদীপদের পাশে ওকে নিয়ে হইচই কোথায়। সোমবার ১৪০-১৪৫ গতিতে রিভার্স করাল উমেশ। এ রকম রিভার্স সুইং করাতে আমি খুব কম ফাস্ট বোলারকেই দেখেছি। এর জন্য কিছুটা কৃতিত্ব আমি ভারতীয় ফিল্ডারদেরও দেব। রিভার্স যাতে হয়, তার জন্য ওরা বলটার ভাল দেখভাল করেছে। এক দিকে পালিশ রেখে অন্য দিকের পালিশটা তুলেছে। যেটা করার জন্য মিড অফ-মিড অন ফিল্ডাররা সাধারণত ওয়ান ড্রপে বল ছোড়ে উইকেটকিপার বা বোলারের হাতে।

উমেশের সামনে পড়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের দেখে মনে হচ্ছিল, সিংহের গুহায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ওদের। উল্টো দিকে ভুবনেশ্বর দু’দিকেই বলটা সুইং করাচ্ছিল। স্মিথকেও ফেরাল ভুবি। ওই ওভারে পর পর দু’টো চার মারার পরে একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল স্মিথ। না হলে ওই বলটা পুল মারার বল ছিল না। স্মিথ আউট হওয়ার পরেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ থেকে গুডবাই হয়ে যায়।

ববি সিম্পসন যখন অস্ট্রেলিয়ার কোচ ছিলেন, তখন ড্রেসিংরুমে একটা পোস্টার টাঙিয়ে রাখতেন। যাতে লেখা থাকত: ‘গ্রেট গাইজ নেভার ডাই।’ মহান লোকেদের মৃত্যু হয় না।

অস্ট্রেলিয়ার কিন্তু মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও হয়েছে। এ বারও হতে চলেছে। একটা অসাধারণ হাড্ডাহাড্ডি সিরিজ দেখলাম আমরা। যেখানে দিনের শেষে এক নম্বর দলই জেতার দিকে।

সিরিজ ২-১ জিততে আজ, মঙ্গলবার চতুর্থ দিন সকালে ভারতকে তুলতে হবে আর ৮৭ রান। আমি জানি খেলাটার নাম ক্রিকেট। যেখানে শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না।

সে সব জেনেও বলব, মঙ্গলবার টিভি খুলব একটা প্রশ্ন নিয়েই। ভারত ১০-৫০ মিনিট নাগাদ জিতবে না ১১.২০!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন