ট্রফি হাতে ঋদ্ধি-মনোজ। ছবি: টুইটার
ছোট থেকে আমরা একসঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি। আন্ডার টোয়েন্টি-টু থেকে সিনিয়র বেঙ্গল। প্রচুর ভাল ইনিংস দেখেছি ওর। কিন্তু ইরানি কাপের দ্বিতীয় ইনিংসে যে ব্যাটিং করল ও, আমার দেখা এটাই ওর সেরা ইনিংস।
ইরানি কাপের এই ম্যাচে সারা দেশে যে পার্থিব বনাম ঋদ্ধির লড়াইয়ের ট্যাগ জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, তা কি আর আমরা জানি না? যতই ঋদ্ধি বলুক, ও এ সবে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, আমি জানি এগুলো কিন্তু ক্রিকেটারদের সবার মাথাতেই চলতে থাকে। প্রথম ইনিংসে আমি বা ঋদ্ধি কেউই রান পাইনি। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন করুণ নায়ার আর পূজারা ব্যাট করছিল, তখন ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে পাশাপাশি বসেছিলাম। টিভিতে করুণের স্ট্যাট দেখাচ্ছিল যখন, তখন ঋদ্ধি বলে উঠল, ‘‘দেখ ভাই, আমি যখন ব্যাট করতে নামব, তখন আমার স্ট্যাট দেখালে সেটা খুব খারাপ হবে। ইরানিতে আমার স্ট্যাট খুব খারাপ।’’
বুঝে দেখুন কতটা চাপে ছিল ও। একেই পার্থিবের সঙ্গে ওর তুলনা সারা দেশে। আমাদের দেশে ক্রিকেটে কেউ চোট পেলে তার জায়গায় যে আসে তাকে নিয়ে প্রচুর হইচই হয়। তখন আগের জনের অতীত অবদান ভুলে যায় সবাই। ঋদ্ধি ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটা সেঞ্চুরি করেছিল, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল, এ সব ভুলে গিয়েই পার্থিবকে নিয়ে ওর তুলনা টেনে প্রবল আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল সারা দেশে। তার উপর ইরানিতে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে ওর দুশ্চিন্তা। আর ম্যাচের পরিস্থিতি তো রয়েছেই। এই সব মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি! কোন স্তরের মানসিক শক্তি থাকলে একজন এই পরিস্থিতিতে এমন একটা ইনিংস খেলতে পারে।
সবাইকে চুপ করিয়ে দিল ঋদ্ধি। প্রমাণ করে দিয়েছে ও-ই নাম্বার ওয়ান। এত বড় স্টেজে এত চাপ নিয়ে খেলা খুব কঠিন। সেটাই করে দেখাল ও। এর পর নিশ্চয়ই আর ভারতের টেস্ট দলে ওকে না নেওয়ার কথা ভাবতে পারবে না নির্বাচকেরা। নির্বাচকদের প্রধান এমএসকে প্রসাদও তো শুনলাম তা-ই বলেছে। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমার তো মনে হয় ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা কিপার ও।
কেন বলছি আমার দেখা এটাই ওর সেরা ইনিংস? পজিটিভ ইনটেন্ট ছিল পুরো ইনিংসটায়। মিডিয়াম পেসাররা সুইং করাচ্ছিল। ওদের বিরুদ্ধে এগিয়ে দাঁড়ানো আর নিজের আয়ত্তের মধ্যে আসা বলগুলো ও়ড়ানোর প্ল্যানটাই করেছিল ও। কোনও বল গুডলেংথে পড়লে যে মারবেই, এ রকমই প্ল্যানও ছিল। আর প্রতিটা প্ল্যান ও কাজে করে দেখিয়েছে। এটাই এই ইনিংসের সবচেয়ে বড় ব্যাপার। ক্রিকেটের বড় কোচেরা সবাই বলেন, যে শটগুলো অ্যাপ্লাই করছ, সেগুলো একশো শতাংশ নিখুঁত করার চেষ্টা করে যাও। ঋদ্ধি এই ইনিংসে সেটাই করে দেখাল। সে জন্যই এটাকে আমি সেরা বলছি।
বাংলার একটা ছেলে এত ভাল খেললে বাংলার ছেলে হিসেবে গর্ব হবে না? এ বারের ইরানি কাপটা এই জন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই ম্যাচে নিজের না পাওয়াগুলোও ভুলে যেতে সাহায্য করল ঋদ্ধি। এর আগেও ইরানি কাপজয়ী দলে ছিলাম একাধিকবার। কিন্তু এ বারেরটা অবশ্যই স্পেশাল। এ তো শুধু ভারতের নয়, বাংলারও জয় যে।