অভাবের মধ্যে দিয়েই স্বপ্ন পূরণের সাধ ইয়াসমিনার

দু’বেলা খাবার জোটে না তার। বাবা স্টেশনে ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা রোজগার করেন, তাতে ১০ জন সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। এই পরিস্থিতিতেও কঠোর অনুশীলনের ফল পেয়েছে ডায়মন্ড হারবারের দেউলার মেয়ে ইয়াসমিনা। সম্প্রতি শেষ হয়েছে ৬৪ তম রাজ্য অ্যাথলিট ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

মায়ের সঙ্গে ইয়াসমিনা। —নিজস্ব চিত্র।

দু’বেলা খাবার জোটে না তার। বাবা স্টেশনে ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা রোজগার করেন, তাতে ১০ জন সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। এই পরিস্থিতিতেও কঠোর অনুশীলনের ফল পেয়েছে ডায়মন্ড হারবারের দেউলার মেয়ে ইয়াসমিনা। সম্প্রতি শেষ হয়েছে ৬৪ তম রাজ্য অ্যাথলিট ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ। তাতে পেন্টাথেলন এবং মিড লে রিলে রেসে প্রথম হয়ে সোনা জিতেছে ইয়াসমিনা। এতেই জোগাড় করে নিয়েছে ওপেন মিটে জাতীয় স্তরে লড়াইয়ের টিকিট।এশিয়াডে পা রাখার স্বপ্ন দেখে রায়নগর ক্ষেত্রনাথ সুনীলবরণ পৌর বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী।

Advertisement

হতদরিদ্র পরিবার থেকে এই নিয়ে স্কুল এবং ওপেন মিলিয়ে মোট পাঁচ বার জাতীয় স্তরে পৌঁছল সে। কিন্তু বিষয়টি খুব একটা সহজ ছিল না তার কাছে। পূর্বাঞ্চলের এই ওপেন মিটে এ রাজ্য ছাড়াও, আসাম এবং ওড়িশার বাঘা বাঘা খেলোয়াড়েরা এসেছিল। তাদের সঙ্গে প্রাণপণ লড়াইয়ে জিতে গেলেও পরিকাঠামোই তার কাছে বাধা হয়ে উঠছে। ইয়াসমিনা বলে, “ভারতের হয়ে এশিয়াডে খেলতে চাই। কিন্তু খেলাধূলার সামগ্রী ছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচ চালানো মুশকিল হয়ে উঠছে আমার পক্ষে। এখনও পর্যন্ত সরকার থেকে কোনও সাহায্য পায়নি।”

নাজরা গ্রামে তাদের এক চিলতে বাড়ি। মা লাইলি বিবি বলেন, “অনেক কষ্ট করছে মেয়েটা। আমরা সাধ্যমতো করি। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। আমরা সকলেই চাই ওর স্বপ্ন পূরণ হোক।” কিন্তু ঠিকমতো পুষ্টি না পাওয়ার জন্য দৌড়-ঝাঁপ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইয়াসমিনার পক্ষে। এমনটিই জানালেন তার কোচ মতিউর রহমান খান। তাঁর কথায়, “ইয়াসমিনাকে দু’ঘণ্টার বেশি অনুশীলন করানো সম্ভব হচ্ছে না। ওর খাওয়ার কথা মাথায় রেখেই ওকে বেশি খাটাতে পারি না।” কিন্তু তাঁর দাবি বড় জায়গায় খেলতে গেলে আরও বেশি অনুশীলন প্রয়োজন।

Advertisement

ইয়াসমিনার মতোই ক্ষেত্রনাথ সুনীলবরণ বিদ্যালয় থেকে উঠে আসছে আরও দুই কৃতী অ্যাথলিট। একাদশ শ্রেণির আবদুুর রহমান সাঁপুই এবং দেউলার আরও এক সংখ্যালঘু পরিবারের নবম শ্রেণির রেহানা পরভিন। নেতড়ার আবদুর পোল ভোল্টে বিশেষ পারদর্শী। রাজ্য মিটে ডেকাথলন ইভেন্টে রুপো পেয়েছে সে। কিন্তু তাকে বাঁশ দিয়েই অনুশীলন করতে হয়। কারণ, এক-একটি পোলের দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। খেলার খরচ চালাতে তাকেও বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হয়। রেহানাও অংশ নিয়েছিল রাজ্য মিটে। স্কুল এবং ওপেন মিটে উঠে আসা এই সমস্ত কৃতীদের জন্য স্কুলের তরফেই যতটা পারা যায় ব্যবস্থা করেন স্কুলের খেলার শিক্ষক চন্দন রায়। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল জুতো কেনার টাকা, পুষ্টিকর খাওয়ার আমরা ওদের জন্য সাধ্যমতো ব্যবস্থা করি।”

মহকুমার খেলার পরিকাঠামো প্রায় নেই বললেই চলে। এসডিও মাঠে তাই বাতা দিয়ে হার্ডলস বার এবং বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে ঝুঁকির পোল ভোল্টের আয়োজন করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ইয়াসমিনা-আবদুরদের জন্য। কারণ, যুবভারতীতে গিয়ে অনুশীলন তাদের খরচে কুলোবে না। স্কুলের খেলা বিভাগের অভিযোগ কৃতী খেলোয়াড়দের তুলে আনার কথা মুখে বললেও জেলা ক্রীড়া অ্যাসোসিয়েশন বা স্কুলশিক্ষা দফতরের তরফেও পরিকাঠামো বাড়ানোর সাহায্য পায় না কেউই।

তবু দাঁতে দাঁত চিপে লড়ে যায় ইয়াসমিনা, আবদুররা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন