জর্ডান হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বর্ধমানের কর্ণ

শুধু এনবিএ-ই নয়, জাতীয় প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগও চলে আসে কর্ণর সামনে। ক’য়েক দিন আগে তামিলনাড়ুতে চলা অনুর্ধ্ব-১৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছে কর্ণ।

Advertisement

শমীক সরকার

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০৪:১৫
Share:

লড়াকু: এনবিএ-মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া কর্ণ পাশি। নিজস্ব চিত্র

ছোটবেলা থেকেই বাস্কেটবলের উপর অদম্য একটা টান ছিল বর্ধমানের কর্ণ পাশি-র। বছর চারেকের বড় দাদাকে বাস্কেটবল খেলতে দেখে টানটা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তিন বছর আগে বাড়ির কাছেই অরবিন্দ স্টেডিয়ামে বাস্কেটবলে হাতেখড়ি হয় কর্ণর। ভাল লাগা থেকে বাস্কেটবল কখন যে তার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে উঠেছে টের পায়নি। এ বার সেই ছেলেই বাস্কেটবলের সুবাদে পাড়ি দিচ্ছে মার্কিন মুলুকে। ‘এনবিএ গ্লোবাল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ খেলতে।

Advertisement

শুধু এনবিএ-ই নয়, জাতীয় প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগও চলে আসে কর্ণর সামনে। ক’য়েক দিন আগে তামিলনাড়ুতে চলা অনুর্ধ্ব-১৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছে কর্ণ। শনিবার ফোনে যখন কর্ণকে ধরা হল তখন দিল্লিতে যাওয়ার গোছগাছে ব্যস্ত বছর চোদ্দোর কিশোর। দিল্লিতে দিন দুয়েকের শিবিরের পরেই এনবিএ গ্লোবাল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে অরল্যান্ডো উড়ে যাবে কর্ণরা। তার উচ্ছ্বাস স্পষ্ট কর্ণর গলায়। ‘‘বাস্কেটবল আমার খুব ভাল লাগত। ১১ বছর বয়সে খেলা শুরু করি। কলকাতাতেও অনুশীলন করেছি মাস দুয়েক। সেখান থেকে দিল্লিতে এনবিএ-র স্পটারদের চোখে পড়ে যাই। কলকাতায় মোট ২০ জন নির্বাচিত হয়েছিলাম। তার মধ্যে দিল্লিতে ১০ জন যাওয়ার সুযোগ পায়। সেই ১০ জনের মধ্যে শুধু আমি এনবিএ-র এই প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পেয়েছি,’’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল কর্ণ।

এনবিএ-র এই প্রতিযোগিতায় ১৩ ও ১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভাগে আটটি ছেলেদের ও আটটি মেয়েদের দলের মধ্যে লড়াই হবে অগস্টের প্রথম সপ্তাহে। সেখানেই খেলতে দেখা যাবে কর্ণকেও। শুধু মার্কিন মুলুকে এই প্রতিযোগিতাতে খেলাই নয়, কর্ণর স্বপ্ন এক দিন মূল এনবিএ প্রতিযোগিতায় খেলার। মাইকেল জর্ডানের অন্ধ ভক্ত এক দিন তার প্রিয় কিংবদন্তির মতোই মাতাতে চায় বাস্কেটবল বিশ্ব। ‘‘মাইকেল জর্ডানের খেলা আমার খুব ভাল লাগত। আমার স্বপ্ন জর্ডানের মতো এনবিএ-তে খেলা। সেই স্বপ্নকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছি,’’ বলে দেয় কর্ণ।

Advertisement

বাবা-মা ও দুই ছেলের সংসার। বর্ধমানেই গাড়ির মেকানিকের কাজ করেন কর্ণর বাবা সুরেশ পাশি। দুই ছেলেরই বাস্কেটবল খেলার ঝোঁক এবং প্রতিভা থাকলেও সংসারের ব্যস্ততায় ছেলেদের সময় দিতে পারেন না কেউ। কর্ণর মা কবিতা পাশি বলছিলেন, ‘‘কর্ণর দাদা অমিতও জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলেছে। আমার দুই ছেলেই বাস্কেটবল খেলায় খুব ঝোঁক। কর্ণ তো জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আগে দু’মাস কলকাতায় অনুশীলনও করেছে। একাই যেত। আমরা কেউ ওর সঙ্গে যেতে পারতাম না। এখন এত বড় একটা সুযোগ পেয়েছে। আশা করি সেটা কাজে লাগাতে পারবে।’’

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আগে বর্ধমান থেকে কলকাতায় রোজ অনুশীলন সেরে বাড়ি ফিরত কর্ণ। যাতায়াতে লাগত পাঁচ ঘণ্টা, সঙ্গে দু’ঘণ্টা অনুশীলন। এত কিছু রোজ সামলাতে কী করে? প্রশ্ন করতেই কর্ণ বলে ওঠে, ‘‘আমার কোনও অসুবিধা হত না। ঠিক সব মানিয়ে নিতাম। বাস্কেটবলের জন্য আমি সব পারি।’’

বোঝা গেল ক্রিকেট, ফুটবল ছেড়ে অন্য এক খেলা নিয়ে স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে এগোচ্ছে বর্ধমানের কিশোর— মাইকেল জর্ডান হওয়ার স্বপ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন