শেষ সুযোগ

ফিনিশার ধোনিকে সাহায্য করতেই যুবরাজকে আবার ফেরানো হল

যুবরাজ সিংহের প্রত্যাবর্তন নিয়ে সন্ধে থেকে ক্রিকেটবিশ্বে ছোটখাটো একটা ঝড় উঠে গিয়েছে। টুইটার, ফেসবুক ওকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। আমি অবশ্য ওর কামব্যাকে খুব অবাক হইনি। এ বার রঞ্জি ট্রফিতে বেশ ভাল পারফর্ম করেছে যুবরাজ। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হাজারে ট্রফিতে ওর পারফরম্যান্স।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৮
Share:

যুবরাজ সিংহের প্রত্যাবর্তন নিয়ে সন্ধে থেকে ক্রিকেটবিশ্বে ছোটখাটো একটা ঝড় উঠে গিয়েছে। টুইটার, ফেসবুক ওকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। আমি অবশ্য ওর কামব্যাকে খুব অবাক হইনি। এ বার রঞ্জি ট্রফিতে বেশ ভাল পারফর্ম করেছে যুবরাজ। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হাজারে ট্রফিতে ওর পারফরম্যান্স। শেষ দুটো ম্যাচে দুটো হাফসেঞ্চুরি। গত শুক্রবার দুর্দান্ত ৯৮ রানের ইনিংস। আশির উপর গড় নিয়ে এর মধ্যেই প্রায় সাড়ে তিনশো রান করে ফেলেছে এই টুর্নামেন্টে।

Advertisement

যুবিকে নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা সব সময়ই আবেগপ্রবণ। তবে ওকে টি-টোয়েন্টি টিমে ফেরানোর সিদ্ধান্তটায় আবেগের চেয়ে ক্রিকেট-মস্তিষ্কের প্রভাব অনেক বেশি। টিমটা দেখে যে জিনিসটা সবার আগে মনে হচ্ছে সেটা হল, টিমে ফিনিশারের অভাবটা বেশ ভাল ভাবেই নির্বাচকদের চিন্তায় ছিল। এই যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে সিরিজ হল, তার কোনওটাতেই ফিনিশার ধোনি দারুণ কিছু করে দেখাতে পারেনি। উল্টে নিশ্চিত জয়ের রাস্তায় থেকেও শেষরক্ষা করতে পারেনি। যার জন্য ধোনি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে।

নির্বাচকেরাও নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, এই ধোনি আর আগের সেই খুনে ধোনি নেই। ফিনিশারের ভূমিকায় একা ওর উপর নির্ভর করা তাই আর ঠিক হবে না। বরঞ্চ ওকে সাহায্য করতে পারে, এমন কাউকে টিমে নেওয়া দরকার। রোহিত-ধবন ওপেন করবে, তিনে বিরাট আর চারে রায়না— এটা টি-টোয়েন্টির সম্ভাব্য ব্যাটিং অর্ডার হলে পাঁচ নম্বরে ধোনি অনেক নিশ্চিন্তে নামতে পারবে। এটা জেনে যে, ছয়ে যুবরাজ আছে। যার বিগ হিটিং নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই কোনও কারণে ধোনি পুরো কাজটা শেষ না করতে পারলেও ওর পরে আর একজন প্রকৃত ফিনিশার, খাঁটি ম্যাচউইনার পাচ্ছে টিম।

Advertisement

এর সঙ্গে যোগ করুন যুবরাজের বাঁ-হাতি স্পিন। আগেই বলেছি, এপ্রিলে আমাদের দেশের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মানে টার্নিং পিচে স্পিনারদের বিশাল ভূমিকা থাকবে। ১৮০ বা ২০০ নয়, ম্যাচ হবে ১৫০-১৬০ রানের। সেখানে যুবরাজের ওভারগুলো তফাত গড়ে দিতে পারে।

তবে এত কিছুর পরেও বলছি, এটা বোধহয় যুবরাজের শেষ সুযোগ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে অভিজ্ঞ প্লেয়ারদের নেওয়া হয়েছে জানি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় যদি ও দারুণ কিছু করতে না পারে, যদি ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো আবার যদি ওর ব্যাট থেকে একটা ২১ বলে ১১ রানের ইনিংস আসে, তা হলে ওর কেরিয়ারের এটাই হবে শেষ প্রত্যাবর্তন। তবে একটা ব্যাপার যুবরাজের পক্ষে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেট, যেখানে বল ঠিকঠাক ব্যাটে আসবে। যুবরাজের মতো স্ট্রোক প্লেয়ারদের সুবিধাই হবে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় ও কিন্তু মোটামুটি সফল। আমার আরও মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ায় খুব বেশি রান না পেলেও অন্তত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত যুবরাজকে সুযোগ দেওয়া উচিত।

দেখুন গ্যালারি:

অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য টি২০ দল

অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য একদিনের দল

আর এক কামব্যাক ম্যানের কথায় আসি। ছত্রিশ বছরের আশিস নেহরার প্রত্যাবর্তনে আমি প্রচণ্ড খুশি হয়েছি। গত আইপিএলে ও যা বল করেছে, তার পর এটা ওর ভীষণ ভাবে প্রাপ্য ছিল। নেহরা আমার দেখা অন্যতম সেরা ডেথ বোলার। ওর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল যে ডেথে বল করার সাহসটা ওর আছে। হাতে ছ’বল, ১৫ রানের পুঁজি, উল্টো দিকে ব্যাট হাতে এবি ডে’ভিলিয়ার্স, এই অবস্থায় কিন্তু বোলারের প্রতিভা গৌণ হয়ে যায়। এ রকম অবস্থায় নিজের উপর বিশ্বাসই হল আসল। যেটা নেহরার ভাল মতো আছে। ও ঠিক জানে, পাঁচটার মধ্যে একটা ম্যাচে হয়তো আমি পারব না। মার খেয়ে যাব। কিন্তু বাকি চারটেয় আমি ঠিক উতরে দেব।

শেষ কলামে লিখেছিলাম হার্দিক পাণ্ডিয়ার কথা। ওকে টিমে দেখে খুব ভাল লাগছে। খুব ভাল চয়েস। কিন্তু ওয়ান ডে টিমে সুরেশ রায়না নেই, এটা মানতে পারলাম না। জানি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ও পারফর্ম করতে পারেনি। কিন্তু তখনও বলেছিলাম, এখনও বলছি, ওকে কী রকম সব পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে হয়েছে সেটা ভেবে দেখুন। একদিন তিনে নামছে তো পরের ম্যাচে ছয়ে। নামছে বিশাল চাপের বোঝা নিয়ে। এই অবস্থায় মাত্র কয়েকটা ম্যাচের ভিত্তিতে ওকে বাদ দিয়ে দেওয়াটা কিন্তু অন্যায় হল।

ওয়ান ডে টিমে হরভজন সিংহের বদলে অক্ষর পটেলের নাম দেখেও অবাক হলাম। অশ্বিন যখন চোটের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে ছিটকে গেল, তার পর তো হরভজন বেশ ভাল করেছিল। সেখানে আবার অক্ষরকে নিয়ে আসা হল কেন, আমি বুঝতে পারলাম না। যদিও হরভজন টি-টোয়েন্টি দলটায় আছে। তার মানে বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচকদের গেমপ্ল্যানেও। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে, কোনও দলেই আবার অমিত মিশ্র নেই। যে উইকেট টেকিং বোলার। আজকাল ডেথে ৫০-৬০ রান তুলে দেওয়া কোনও ব্যাপার নয়। সেখানে এমন একজন স্পিনার দরকার ছিল যে রান দেবে, কিন্তু দরকারে উইকেটটাও নিতে পারবে। অক্ষর সেটা করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

আমাদের শামির ফেরায় অবশ্যই আমি খুশি। ওয়ান ডে বিশ্বকাপের পর বহু দিন মাঠের বাইরে কাটিয়ে আবার ফিরছে ও। খুব ভাল। আমার একটাই ভয়। ওকে খুব তাড়াতাড়ি ফেরানো হল না তো? অস্ট্রেলিয়ার সারফেস কিন্তু খুব শক্ত। শরীরের উপর যেটার ইমপ্যাক্ট খুব বেশি হয়। সেখানে বল করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আবার শামির যদি কিছু হয়ে যায়, তা হলে বড় ধাক্কা হবে। ওকে নিয়ে আর একটু সতর্ক হলে হয়তো ভাল হত।

যাই হোক, টিম যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন ফোকাস থাকা উচিত একটাই— টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সেরা কম্বিনেশনটা ঠিক করে ফেলা। ধোনিকে যে আগে থেকেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অধিনায়ক বেছে ফেলা হল, এটা একটা ভাল দিক। মনে রাখতে হবে, বিশ্বকাপের আগে খানদশেক টি-টোয়েন্টি আর পাঁচটা ওয়ান ডে পাচ্ছে ভারত। এখন আর নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা না করে টিমটাকে সেট হওয়ার সময় দাও। অনেক নতুন মুখ রয়েছে টিমে, পুরনো অনেকে বহু দিন পর ফিরছে। ধোনিও বহু দিন আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে। তাই সবার মিলমিশ হওয়াটা খুব দরকার।

এই অবস্থায় নির্বাচকদের কাছে একটাই আবেদন। বড় দুর্ঘটনা না হলে এখান থেকে টিমে আর কোনও বদল করবেন না। অস্ট্রেলিয়ায় যদি ভারত হেরে যায়, তা হলেও নয়। দেখার সময় কিন্তু চলে গিয়েছে। এখন শুধু টিমটার সেট হওয়ার অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন