ম্যাচের সেরা শুভমান গিল

‘ভারতীয় ক্রিকেটের নয়া যুবরাজ’, ইঙ্গিত হরভজনের

পঞ্জাবের আর এক ক্রিকেটার হরভজন সিংহের কথায় কিন্তু সে রকমই ইঙ্গিত আছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুরন্ত সেঞ্চুরি করে মঙ্গলবার ভারতকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছেন পঞ্জাবের ব্যাটসম্যান শুভমান গিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১১
Share:

দুরন্ত সেঞ্চুরি শুভমানের। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি

ভারতীয় ক্রিকেটে পঞ্জাব ব্যাটিংয়ের কথা বললেই উঠে আসে মোহিন্দর অমরনাথ, নভজ্যোৎ সিংহ সিধু থেকে যুবরাজ সিংহের নাম। যেখানে জেদ, শক্তি এবং শিল্পের মিশেল দেখা গিয়েছে। সেই পরম্পরা ধরে রাখতে কি এ বার নতুন এক ব্যাটসম্যান চলে এলেন ভারতীয় ক্রিকেটে? জন্ম নিতে দেখা গেল কি কোনও নতুন যুবরাজ সিংহকে?

Advertisement

পঞ্জাবের আর এক ক্রিকেটার হরভজন সিংহের কথায় কিন্তু সে রকমই ইঙ্গিত আছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুরন্ত সেঞ্চুরি করে মঙ্গলবার ভারতকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছেন পঞ্জাবের ব্যাটসম্যান শুভমান গিল। যার পরে হরভজন পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি ১৮ বছর বয়সি যুবরাজ সিংহকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। শুভমানকেও আমি দেখেছি। এই ছেলেটা কিন্তু যুবরাজের মতোই প্রতিভাবান।’’

যুবরাজ বাঁ হাতি হলেও শুভমান ডান হাতি। কিন্তু তুলনা উঠে আসছেই। শুধু যুবরাজ নন, তুলনায় আসছেন অনেক মহান ক্রিকেটারের নামই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সরকারি ওয়েবসাইটে শুভমানের একটা শর্ট আর্ম পুলের সঙ্গে বিরাট কোহালির মারা একটা শটের তুলনা করা হয়েছে। দিন কয়েক আগে বিশ্বকাপে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ওই শটে ছয় মেরেছিলেন শুভমান। যে শটের মিল পাওয়া গিয়েছে গত জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে কোহালির মারা একটা শটের সঙ্গে। এতেই শেষ নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় পৃথ্বী শ-এর চেয়ে শুভমান ভাল ক্রিকেটার। আমি তো বলব, ভারতের এই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সেরা ব্যাটসম্যান শুভমানই।’’ পাশাপাশি সৌরভ আরও বলেন, ‘‘ওর মধ্যে আমি কিছুটা ব্রায়ান লারা এবং কেন উইলিয়ামসনের ছায়া দেখছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: কপিল দেব একটাই জন্মায়: আজহারউদ্দিন

শুভমানের ক্রিকেট যাত্রা শুরু পঞ্জাবের একটি ছোট্ট শহর ফাজিলকা থেকে। যেখানে তাঁর জন্ম। ছোটবেলা থেকেই ছেলের ক্রিকেটে আগ্রহ দেখে শুভমানের বাবা লখিন্দর সিংহ তাঁর নিজের জমিতে একটা টার্ফের পিচ বানিয়ে দেন। সেখানেই ব্যাট হাতে নেমে পড়ে ছোট্ট শুভমান। কিছু দিনের মধ্যেই লখিন্দর বুঝে যান, তাঁর ছেলের মধ্যে ক্ষমতা আছে। এবং তখন থেকেই শুভমান চলে আসেন মোহালিতে।

মঙ্গলবার শুভমানের বাবা-র সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমি কৃষক হলেও ক্রিকেটের প্রতি আমার বরাবরেরই টান ছিল। তাই চাইতাম, ছেলে যেন ক্রিকেটার হয়।’’ ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ছেলের তীব্র আগ্রহ দেখেছিলেন। শুভমানের বাবা বলছিলেন, ‘‘তিন বছর বয়সেই প্রথম ব্যাট হাতে নিয়েছিল ছেলে। অন্য কোনও খেলনা কিনে দিলেও ওর পছন্দ হতো না। যত আগ্রহ ছিল ব্যাট আর বলের প্রতি।’’

তখন থেকেই লখিন্দর মোটামুটি ঠিক করে নেন, ছেলেকে ক্রিকেটের দিকেই ঠেলে দেবেন। তার জন্য কী করেছিলেন, তাও বললেন লখিন্দর সিংহ, ‘‘আমার ক্ষেতি জমিতে পিচ বানিয়ে দিয়েছিলাম ছেলের জন্য। ওখানে ওকে নিয়ে প্র্যাক্টিস করাতাম। এক-এক দিন এক-এক রকম শটের প্র্যাক্টিস চলত। ধরুন, যে দিন ঠিক করি ওকে স্ট্রেট ড্রাইভ শেখাব, সে দিন শুধু স্ট্রেট ড্রাইভই মারা শেখানো হতো। হাজার বার করে একটা শট প্র্যাক্টিস করাতাম ওকে দিয়ে। যার ফল আজ আমরা পাচ্ছি।’’

পাকিস্তান ম্যাচের আগের দিন শুভমানের ফোন এসেছিল তাঁর বাবা-র কাছে। কী কথা হল দু’জনে? নায়কের বাবা বললেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, বিপক্ষের নাম পাকিস্তান হলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তোমার ফর্ম ভাল। তুমি নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলো। দেখো, ঠিক রান পাবে। আর সেটাই হল।’’ পাকিস্তান ম্যাচের আগের দিন শুভমানের বাবা-মা চলে গিয়েছিলেন গুরুদ্বারে প্রার্থনা করতে। ছেলে যেন সফল হয়, ভারত যেন জেতে।

তাঁদের জোড়া প্রার্থনাই পূর্ণ হয়েছে। শুধু প্রার্থনা পূরণই নয়, ছেলে পেয়েছে তার চেয়ে কিছু বেশিই। প্রাক্তন ক্রিকেটারদের প্রশংসা আসছে নানা দিক থেকে। হরভজন যেমন বলছিলেন, ‘‘শুভমানের সব চেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল, আধুনিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের হাতে যত রকম শট থাকা দরকার, সেটা ওর হাতে আছে।’’

অনূর্ধ্ব-১৪ এবং অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটে ভারতীয় বোর্ডের দেওয়া সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছিলেন শুভমান। এ বার দেখার, যুব বিশ্বকাপ থেকেও সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার তিনি আনতে পারেন কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন