'অহংকার নেই বলেই সফল কোচ জিদান'

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মহাতারকা। আর জিদান বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ম্যাচউইনার। সঙ্ঘাত অবশ্যম্ভাবী। এই ধারণাকে শুধু ভুল প্রমাণ করেনি ফরাসি তারকা, রোনাল্ডোর সঙ্গে জুটি বেঁধে রিয়ালকে বিশ্বের সেরা ক্লাবে পরিণত করেছে।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৫:৩২
Share:

রসায়ন: সুপারস্টার কোচ। সুপারস্টার ফুটবলার। তবু ছুটছে জিদান-রোনাল্ডোর রথ। এএফপি, রয়টার্স

জিনেদিন জিদান ম্যানেজার হওয়ার পরে অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, রিয়াল মাদ্রিদ অন্দরমহলে এ বার আগুন জ্বলবে।

Advertisement

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মহাতারকা। আর জিদান বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ম্যাচউইনার। সঙ্ঘাত অবশ্যম্ভাবী। এই ধারণাকে শুধু ভুল প্রমাণ করেনি ফরাসি তারকা, রোনাল্ডোর সঙ্গে জুটি বেঁধে রিয়ালকে বিশ্বের সেরা ক্লাবে পরিণত করেছে।

জিদান ফুটবলটা যেমন খেলত মস্তিষ্ক দিয়ে, কোচিংটাও সেই ভাবেই করায়। সেটাই ওর সাফল্যের নেপথ্যে। কোচিং করানোর প্রধান শর্ত, অহঙ্কার বাইরে রেখে মাঠে নামতে হবে। ফুটবলজীবনে তুমি কী করেছিলে, তা কোচিং করাতে নেমে মনে রেখো না। দলের সাফল্যই তোমার সাফল্য। আর দল তখনই সাফল্য পাবে, যখন সেরা ফুটবলার নিশ্চিন্তে খেলতে পারবে। জিদান সব শর্তগুলোই দুর্দান্ত ভাবে মেনে কোচিং করাচ্ছে।

Advertisement

বুধবার রাতে আপোয়েলকে ৩-০ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল অভিযান শুরু করল। ১২ মিনিটে রোনাল্ডো প্রথম গোল করল ফ্রি-কিকে। দ্বিতীয়টি ৫১ মিনিটে পেনাল্টি কিকে। ওর প্রথম গোলটা মনে করাল জিদানকে। ফুটবলার হিসেবে রিয়ালের হয়ে এ রকম অসংখ্য গোল জিদানকে করতে দেখেছি। অথচ ম্যাচের পর সেই জিদান বলেছে, ‘‘আমি এ রকম গোল করতে পারতাম না। বিশ্বের সামান্য যে কয়েক জন ফুটবলারের এ ধরনের গোল করার ক্ষমতা রয়েছে, রোনাল্ডো তাদের মধ্যে এক জন। ও বিশ্বের সেরা ফুটবলার।’’

গুরুরা আলোকিত হয় শিষ্যের আলোয়। তবে ইগো-সমস্যায় অনেক কোচই তা মেনে নিতে পারে না। মনে হয় এতে তাদের গৌরব কমে যাবে। রোনাল্ডোর প্রশংসা করে জিদানের খ্যাতি কি একটুও কমছে! বরং, ওর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের।

সি আর সেভেনের সঙ্গে জিদানের দুর্দান্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠার আরও একটা কারণ হচ্ছে, ও নিজেও তারকা ছিল। তাই তারকাদের মানসিকতা সম্পর্কে জিদান ওয়াকিবহাল। সবচেয়ে বড় কথা ও কিন্তু কখনও রোনাল্ডোকে বোঝানোর চেষ্টা করেনি— দেখো ভাই আমি ফ্রান্সকে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করেছি। তুমি কিন্তু একটা ইউরো কাপ ছাড়া পর্তুগালকে কিছুই দিতে পারোনি। তাও ম্যাচ শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই চোট পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলে। আমি জোড়া গোল করেছিলাম। তাই আমার নির্দেশ মেনেই তোমাকে চলতে হবে। উল্টে জিদান সবসময় রোনাল্ডোর পাশে থেকেছে। কনফেডারেশন কাপের সময় কর বিতর্কে জর্জরিত সি আর সেভেন রিয়াল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জিদানের জন্যই সেই সিদ্ধান্ত বদলায়।

নায়ক: জোড়া গোল করে ফের মধ্যমণি রোনাল্ডো। রয়টার্স

কোচের কাজ কিন্তু প্র্যাকটিস বা স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেই শেষ হয় না। কোচ ফুটবলারদের অভিভাবকও। তার জন্য সব চেয়ে আগে দলের প্রত্যেকের মনস্তত্ব বুঝতে হবে। কোনও কোনও ফুটবলার হয়তো দারুণ প্রতিশ্রুতিমান। অথচ মাঠে নেমে একদমই পরিশ্রম করতে চায় না। আবার কেউ কেউ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কোচের কাজ কিন্তু সকলকে নিয়েই চলা। কখনও বুঝিয়েসুঝিয়ে। কখনও আবার কড়া হয়ে। অর্থাৎ, যে ভাবেই হোক ফুটবলারদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে হবে।

জিদান-রোনাল্ডো সম্পর্ক নিয়ে লিখতে গিয়ে হোসে রামিরেজ ব্যারেটোর কথা মনে পড়ে গেল। প্রথম যখন ও মোহনবাগানে এল, কথা খুব কম বলত। নিঃশব্দে প্র্যাকটিস করে ফ্ল্যাটে ফিরে যেত। ব্যারেটোর সঙ্গেই থাকত আর এক বিদেশি দুসিত। তা সত্ত্বেও দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এ ভাবে চলতে দিলে আমরা কখনওই একটা দল হিসেবে গড়ে উঠতে পারব না। তাই কলকাতার বাইরে খেলতে গেলেই টিম হোটেলে অন্য ফুটবলারদের ঘরে ব্যারেটোকে নিয়ে যেতাম। ভারতীয় ফুটবলারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করতাম ব্যারেটোকে। অল্প দিনের মধ্যেই ও বাসুদেব মণ্ডলদের সঙ্গে দুর্দান্ত ভাবে মিশে গিয়েছিল। তখন নিজেই আসর মাতিয়ে রাখত।

অনেক সময় আমাকেও কড়া হতে হয়েছে। ম্যাচের মধ্যে হয়তো কাউকে খুব বকা-ঝকা করেছি। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পরে তা মনে রাখিনি। যাকে বকেছি, তাকেই সবার আগে জড়িয়ে ধরেছি। কোচেদের কাছে ফুটবলাররা তো সন্তানের মতোই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন