রঞ্জি ট্রফি

অচেনা ইডেনে অচেনা মুম্বই সামলাতে ভোল বদল বাংলার

বাড়িতে নতুন এবং আরও ভাল মানের হেলমেট চলে এসেছে। স্বস্তিতে মনোজ তিওয়ারি। কয়েক দিন আগেই যে তাঁর হেলমেটে আছড়ে পড়েছিল ভয়ঙ্কর লাল ‘চেরি’। ইডেনের বাইশ গজে যা সবুজের দাপট, তাতে নতুন এবং আরও শক্তপোক্ত হেলমেটের আগমনের খবরে ব্যাটসম্যানদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলাই স্বাভাবিক। ফুরফুরে মেজাজে পেসার অশোক দিন্দা। সকালে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কোচের সঙ্গেও উইকেট দেখতে দেখতে কী হাসি-মশকরাই না করছিলেন বাংলার এক নম্বর পেসার!

Advertisement

রাজীব ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১৩
Share:

মনোজ-লক্ষ্মী। মুম্বই-যুদ্ধের ২৪ ঘণ্টা আগে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

বাড়িতে নতুন এবং আরও ভাল মানের হেলমেট চলে এসেছে। স্বস্তিতে মনোজ তিওয়ারি। কয়েক দিন আগেই যে তাঁর হেলমেটে আছড়ে পড়েছিল ভয়ঙ্কর লাল ‘চেরি’। ইডেনের বাইশ গজে যা সবুজের দাপট, তাতে নতুন এবং আরও শক্তপোক্ত হেলমেটের আগমনের খবরে ব্যাটসম্যানদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলাই স্বাভাবিক।

Advertisement

ফুরফুরে মেজাজে পেসার অশোক দিন্দা। সকালে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কোচের সঙ্গেও উইকেট দেখতে দেখতে কী হাসি-মশকরাই না করছিলেন বাংলার এক নম্বর পেসার!

জীবনের প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে নামার জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে তরুণ পেসার প্রীতম চক্রবর্তীকে। রীতিমতো ফুটছেন ২০ বছরের তরুণ। কথাবার্তায় স্পষ্ট, চাপের চেয়ে তাঁর মনে আত্মবিশ্বাসের ভাগটাই বেশি।

Advertisement

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, এ সব শনিবাসরীয় ইডেনের ঘটনা। যেখানে টিপিক্যাল ইডেন উইকেটের ঐতিহ্যের দফারফা। ঘাস আরও ছাঁটা হবে কি না, এই প্রশ্নে ইডেন কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় ফোঁস করে উঠছেন, এমন দৃশ্যও আগে দেখা যেত না, যা ইদানীং দেখা যায়। দেখা গেল আজও।

অন্য দিকে, আর এক অচেনার দৃষ্টান্ত। জম্মু-কাশ্মীরের কাছে সরাসরি হার। রেলের বিরুদ্ধে ১০১ রানে গুটিয়ে যাওয়া এগুলো মুম্বইয়ের রঞ্জি টিম সম্পর্কে বলা হচ্ছে শুনলে অনেকে অবিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, টিম মুম্বইয়ের এখন এমনই অবস্থা।

উত্তরপ্রদেশ থেকে পুরো ছ’পয়েন্ট নিয়ে এসে অবশ্য ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত পাচ্ছেন বলে প্রায় আনকোরা মুম্বইকরদের ধারণা। কিন্তু সেই জয়ের পরেও দলের প্রায় অর্ধেক সদস্যকে বসিয়ে দিয়ে বাংলার বিরুদ্ধে খেলতে আসা মুম্বই যে কী প্রমাণ করতে চায়, সূর্যকুমার যাদবরা ভারতীয় ক্রিকেটকে তার ব্যাখ্যা দিতে পারেন আগামী চার দিনে, বাংলা-মুম্বই রঞ্জি যুদ্ধে।

তিন ম্যাচে ১৮ উইকেট নেওয়া শার্দুল ঠাকুরকে ইডেনের গ্রিনটপে সামলানোর জন্য একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান নেওয়ার ভাবনা-চিন্তা চলছে বাংলা ড্রেসিংরুমে। সে জন্য সৌরাশিস লাহিড়ী, যাঁর নিজেরই দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে ইডেনে শেষ ছ’টা রঞ্জি ম্যাচে তিনি নাকি সব মিলিয়ে ৬০ ওভারও বল করেননি, বাংলার সেই অভিজ্ঞ স্পিনারকে ছাড়াই হয়তো রবিবার ইডেনে পা রাখবে বাংলা। তাঁর জায়গায় গতবার রঞ্জিতে রেলের বিরুদ্ধে ৬৫-র ইনিংস খেলা তরুণ ব্যাটসম্যান অভিমন্যু ঈশ্বরনকে প্রথম এগারোয় দেখা যেতে পারে। বাদ পড়া সৌরাশিসই বলছেন, “আইডিয়াটা খারাপ না। যা উইকেট, আমার তেমন ভূমিকাও বোধহয় নেই এই ম্যাচে। নতুনদের পরখ করে নেওয়াও তো দরকার।”

মুম্বই ব্যাটিংকে পাল্টা চাপে ফেলতে বাংলা আবার দিন্দা, বীরপ্রতাপের সঙ্গে তরতাজা সুইং বোলার প্রীতমকেও নামাচ্ছে। কোচ অশোক মলহোত্র বললেন, “প্রীতম দু’দিকেই সুইং করাতে পারে। টানা অনেকক্ষণ বল করতেও পারে। ওর কাছ থেকে হয়তো ভাল কিছু পাওয়া যাবে।” হাওড়ার প্রীতম বলছেন, “এই মাসেই তো অনূর্ধ্ব ২৩-এ গোয়া ম্যাচ খেলেছি এই উইকেটেই। অসুবিধা হবে না।” গঙ্গার হাওয়া এবং সবুজ উইকেটে প্রীতম আরও ধারালো হয়ে উঠবেন, এমন বিশ্বাস অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লরও।

বাংলা শিবিরে যেখানে নতুনদের পরখ করে নেওয়ার ভাবনা, সেখানে মুম্বইয়ের নতুন প্রজন্মের দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে বলে দাবি অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের। উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি জেতার পরেও দলে বিস্ময়-বালক ১৭ বছরের সরফরাজ খান-সহ ছ’জন নতুন মুখ। কেন? এর উত্তরে রাহানে, রোহিতের ক্রিকেট-সাম্রাজ্যের বর্তমান নেতা বললেন, “ডাকাবুকো, স্ট্রিট স্মার্ট ছেলেদের নিয়ে নতুন প্রজন্মের টিম করছি আমরা। যারা বাদ গিয়েছে, তারা ঠিক ও রকমের নয়। যে টিমটা এখানে এনেছি, সেটাই হয়তো সারা মরসুম ধরে খেলবে।”

বিপক্ষ কেমন, তা নিয়ে যেন মাথাব্যথা নেই। নিজেদের নিয়েই বেশি ভাবছেন দুই প্রতিপক্ষ অধিনায়কই। সূর্যের মতো লক্ষ্মীও বলছেন, “বিপক্ষ দলকে ভাল মনে করেই নিজেদের ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। এটাই শেষ কথা। উইকেট চ্যালেঞ্জিং। চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন