অস্ট্রেলিয়ার কাছে কাহিল হয়েও জিতল ডাচরা

একটা স্মরণীয় ম্যাচ হয়ে থাকল আমার কাছে বুধবারের নেদারল্যান্ডস-অস্ট্রেলিয়া লড়াই। এমনিতে হাইভোল্টেজ তকমা পাওয়ার মতো ম্যাচ নয়। বরং দু’দলের প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স বিচারে একপেশে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টিম কাহিল-রা সব হিসেব গুলিয়ে দিয়ে প্রায় জিতেই গিয়েছিল।

Advertisement

চুনী গোস্বামী

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০৪:১৪
Share:

রবেন-ম্যাজিক চলছেই। বুধবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে গোল করার পরে নেদারল্যান্ডস তারকা। ছবি: এএফপি।

নেদারল্যান্ডস-৩ (রবেন, ফান পার্সি, ডেপে)

Advertisement

অস্ট্রেলিয়া-২ (কাহিল, জেডনিয়াক-পেনাল্টি)

একটা স্মরণীয় ম্যাচ হয়ে থাকল আমার কাছে বুধবারের নেদারল্যান্ডস-অস্ট্রেলিয়া লড়াই। এমনিতে হাইভোল্টেজ তকমা পাওয়ার মতো ম্যাচ নয়। বরং দু’দলের প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স বিচারে একপেশে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টিম কাহিল-রা সব হিসেব গুলিয়ে দিয়ে প্রায় জিতেই গিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধে ২-২ অবস্থায় লেকি যদি গোলের সামনে সুবিধেজনক অবস্থায় থেকেও পাস না দিয়ে নিজেই শট নিত, তা হলে বিশ্বকাপের সর্বকালের বড় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারত। তিন দিন আগেই বিশ্বকাপ হকির ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার হাতে নেদারল্যান্ডসের ১-৬ চূর্ণ হওয়াকে যত বড় অঘটন ভাবা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বড় অঘটন ঘটে যেতে পারত লেকি গোলে শটটা নিজে নিলে।

Advertisement

কাগজপত্রে পড়ছিলাম, ডাচদের বিখ্যাত কোচ লুই ফান গল পোর্তো আলেগ্রের মাঠের রিজার্ভ বেঞ্চের উচ্চতা নিয়ে রেগে আছেন। ম্যাচটা ভাল ভাবে অনুধাবন করার জন্য বারস্টুল নিয়ে মাঠে ঢোকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। ম্যাচটা কুঁতিয়েকাঁতিয়ে নেদারল্যান্ডস যে ভাবে ৩-২ জিতল তার পর মনে হচ্ছে, রিজার্ভ বেঞ্চে ফান গল বোধহয় বারস্টুলের বদলে বিছানা নিয়ে যেতেও পারতেন। অমন দুর্ধর্ষ স্পেন-বধের পরের ম্যাচেই নিজের দলের এত হতশ্রী খেলা না দেখে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।

প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট তো অজিরা ডাচদের নাস্তানাবুদ করেছে। পাসিং, শুটিং, পজেশনাল ফুটবল সব কিছুতে। ব্যাক থার্ড থেকে অ্যাটাকিং থার্ড পর্যন্ত তেল খাওয়া মেশিনের মসৃণতা তখন অস্ট্রেলীয় ফুটবলে। উল্টো দিকে রবেনের মাঝমাঠ থেকে স্প্রিন্ট টেনে অসম্ভব ভাল গোল সত্ত্বেও নেদারল্যান্ডসের তিন মহারথীকে করুণ দেখাচ্ছিল। প্রথমার্ধে ফান পার্সিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। রবেন খুচখাচ খেলেছে। স্নাইডার ওর ছায়ার বেশি কিছু নয়। আসলে লেকি-কাহিল-ব্রেসিয়ানোর দাপটে মাঝমাঠে দে জং-জানমাতদের অস্তিত্বই টের পাওয়া যাচ্ছিল না। নইলে কি আর গোল খাওয়ার ৬৯ সেকেন্ডের মধ্যেই টিম কাহিল অমন আউটস্ট্যান্ডিং ভলিতে সমতা ফেরায়! ফুটবল খেলার অন্যতম কঠিন কাজ ভলির বৈশিষ্ট্য হল, শটের টাইমিং, কানেকশন আর গোলের মধ্যে বল থাকাটা একেবারে একশো ভাগ ঠিক হতে হবে। চৌত্রিশ বছর বয়সেও কাহিল তিনটেই পারফেক্ট করেছে। ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়া হারলেও এখন পর্যন্ত এ বারের বিশ্বকাপের সেরা গোল আমার মতে এটাই।

নেদাল্যান্ডসের হয়ে রবেনের গোলের পর মুহূর্তেই
১-১ করলেন অস্ট্রেলিয়ার কাহিল। ছবি: রয়টার্স।

আরও একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে, হাফটাইমের ঠিক আগে উইং ব্যাক ইন্ডির চোট পেয়ে বসে গিয়ে ডেপে-র মাঠে নামাটা নেদারল্যান্ডসের কাছে আশীর্বাদ হয়ে গেল। দ্বিতীয়ার্ধে অনেকবার ওভারল্যাপে গিয়ে ছেলেটা রবেন-ফান পার্সিদের আক্রমণে বাড়তি লোক বাড়িয়ে তুলেছে। এমনকী জয়ের গোলটাও দূর থেকে শটে ওরই। এ ছাড়া, ডেপে-র সঙ্গে-সঙ্গে প্রায় গোটা দ্বিতীয়ার্ধে স্নাইডার-দে জং বলটা ভাল কন্ট্রোল করতে পারায় নেদারল্যান্ডসকে প্রথমার্ধের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর দেখিয়েছে।

তার মধ্যেই অবশ্য অধিনায়ক জেডনিয়াকের পেনাল্টি গোলে অস্ট্রেলিয়া ২-১ এগিয়ে যেতে পেরেছিল বক্সের মধ্যে জানমাত বল-এ হাত লাগিয়ে বসায়। তার কয়েক মিনিট আগে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে চিলির বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে বাইরে চলে গিয়েছে নেদারল্যান্ডস ক্যাপ্টেন ফান পার্সি। পোর্তো আলেগ্রের মাঠে তখন অশনিসঙ্কেত ফান গলের বেঞ্চে। কিন্তু সেই ফান পার্সিই উদ্ধার করল নিজের দলকে। অস্ট্রেলীয় ডিফেন্সের এ দিন সামান্য ক’টা ভুলের একটার সুযোগে ২-২ করে ফান পার্সি। বক্সের মধ্যে বিপক্ষের ক্লিয়ারিংয়ের অভাবের ফায়দা তুলে রবেনের মতোই এ বারের বিশ্বকাপে তৃতীয় গোল করে ফেলল ফান পার্সি।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চার ম্যাচে এটাই ডাচ দলের প্রথম জয়। অথচ এ বারের বিশ্বকাপে ৩২ দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার র‌্যাঙ্কিং সবচেয়ে নীচে। ডেভিস কাপে প্লেয়ার-র‌্যাঙ্কিং যেমন গৌণ, খেলাটা একাকী সার্কিটের বদলে আস্ত দেশের লড়াই বলে, ফুটবলেও তাই। তার উপর বিশ্বকাপের মতো সর্বোচ্চ মঞ্চে তো দেশ ব্যাপারটা আরওই বেশি তাতিয়ে তোলে। হারলেও টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিটদের বিরুদ্ধে সেটাই দেখিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচের সেরা

আর্জেন রবেন

নেদারল্যান্ডসের প্রথম ম্যাচেই জোড়া গোলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ৫-১ গুঁড়িয়ে দিতে
অন্যতম ভূমিকানিয়েছিলেন আর্জেন রবেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ডাচরা এগিয়ে
যায় ৩০ বছর বয়সি উইঙ্গারের দুরন্ত গোলেই।বায়ার্ন মিউনিখ তারকারআগুনে ফর্মে এ বার
বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন সমর্থকরা। তাই ম্যাচের সেরা তিনিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন