টেস্ট সিরিজ হারের পর ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রত্যাবর্তনের একটা ক্ষীণ আশা বেঁচে ছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারতের। কিন্তু সেখানেও ফাইনালে যাওয়া তো দূর অস্ত, গ্রুপ লিগে চারটের মধ্যে তিনটে ম্যাচ হারল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে না গেলে ওই দুটো পয়েন্টও আসত কি না, সন্দেহ।
হতাশার টেস্ট সিরিজ হারের পর ওয়ান ডে-তেও বিপর্যস্ত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বলছেন, ফিটনেস সমস্যাই এ বার ডোবাল তাঁদের। এ দিন ম্যাচের পর তিনি শুনিয়েও যান ফিটনেস-আশঙ্কার কথা, “বিশ্বকাপে ঠিকঠাক ছন্দে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়েও জরুরি ১৫ জনের দলে সকলের ম্যাচ ফিট থাকা। এই সিরিজে বারবার যার অভাব দেখলাম।”
সঙ্গে আরও একটা দুশ্চিন্তার কথাও শুনিয়ে রাখলেন ভারত অধিনায়ক। “আমাদের অবস্থা এখন ‘ক্যাচ টোয়েন্টি-টু’র মতো!’ অর্থাৎ শ্যাম রাখি, না কুল রাখি গোছের অবস্থা এখন এমএসডি-র! ধোনি যেমন বলছেন, “টিমের বোলিং কম্বিনেশন আরও ভাল করতে গেলে ব্যাটিং লাইন আপে চাপ পড়ছে। আবার ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়াতে গেলে বোলিং বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়ছে!” তবে পাশাপাশি ধোনি এ-ও ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন যে, বিশ্বকাপে তিনি চার বোলারে খেলতে পারেন। সাত ব্যাটসম্যান+ চার বোলার কম্বিনেশন।
তবে এই মুহূর্তে ধোনির লক্ষ্য অন্য। বিশ্বকাপের আগে তাঁর টিম ইন্ডিয়া এই যে ক’টা ওয়ার্ম আপ ম্যাচ পাবে, সেগুলোতেই দেখে নিতে চান টিমের কে কতটা ফিট। “ওয়ার্ম আপ ম্যাচগুলোতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সকলকেই দেখে নিতে হবে। প্রতিপক্ষ এবং নিজেদের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে একটা স্বচ্ছ ছবি পেতে হবে।”
বিশ্বকাপের আগে টিমের অন্যতম ওপেনার শিখর ধবনের ফর্ম উধাও। যা নিয়ে অনেকে চিন্তিত হলেও দিল্লির বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাঁর অধিনায়ক। ধবন প্রসঙ্গে এ দিন ধোনি বলে দেন, “পেসারদের উপযোগী পিচে রান করাটা চ্যালেঞ্জিং। তবে ধবনের ব্যাটিংয়ে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। সেগুলো ঝালিয়ে নিতে পারলে আশা করা যায় আগামী ম্যাচগুলোয় চেনা ছন্দে দেখা যাবে ওকে।” তবে টিমের অন্য ব্যাটসম্যানদের একহাত নিতে ছাড়েননি ধোনি। “শুরুতে উইকেট হাতে রেখে রান বাড়িয়ে নিতে কে না চায়! কিন্তু এই স্ট্র্যাটেজিতে রোজ কামাল করা যাবে না। মিডল অর্ডারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। শেষের দশ ওভারে ১০০-১২০ রান কিন্তু তুলতে পারছি না আমরা। আশির ঘরেই ঘোরাফেরা করছি। ব্যাপারটা নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে হবে।”
এ তো গেল নিজের টিমের ব্যাটিং নিয়ে ধোনি-কথা। বোলিং নিয়ে তো ধোনির নাকানিচোবানি খাওয়ার অবস্থা এ বার অস্ট্রেলিয়ায়। টিমের তিন প্রধান পেসার পুরো ফিট নন। অন্যতম স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজার অবস্থা তথৈবচ। বোলিং কম্বিনেশন নিয়ে ধোনির চিন্তা স্বাভাবিক। তিন সিমার দুই স্পিনার, নাকি তিন সিমারের সঙ্গে এক স্পিনার এটাই গোলকধাঁধায় ফেলছে ভারতীয় থিঙ্কট্যাঙ্ককে। এ দিন সেই প্রসঙ্গ উঠতেই তুলে ভারত অধিনায়কের ওই মন্তব্য—“আমরা ‘ক্যাচ টোয়েন্টি-টু’ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।”
কী এই ‘ক্যাচ টোয়েন্টি টু’ পরিস্থিতি? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ইংরেজি অভিধানে ঢুকে যাওয়া এই প্রবচন ব্যবহার করা হয় কোনও নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে কেউ পারফর্ম করতে না পারলে। ধোনিও তাই বলছেন, “অশ্বিন আর জাডেজার স্পিন কার্যকরী। আবার অশ্বিন আর অক্ষর পটেলের ব্যাটিং দক্ষতাও উপেক্ষা করা যায় না। সেখানে তিন সিমার আর এক স্পিনারে খেলতে গিয়ে ব্যাটিং গভীরতা নষ্ট হচ্ছে।” এখানেই না থেমে ধোনি আরও বলেন, “এক জন অতিরিক্ত সিমার নিয়ে খেলতে গেলে সেটা ব্যাটিংকে যেমন দুর্বল করছে, তেমনই স্লো ওভার রেটের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।”
আর এ দিন ইংল্যান্ডের কাছে হার নিয়ে ধোনির সাফাই, “ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভাল করেও ম্যাচটা বেরিয়ে গেল শট বাছাইয়ে ভুলভ্রান্তি হওয়ায়। স্কোরবোর্ডে আরও ৪০-৫০ রান থাকলে ম্যাচটা আরও আকর্ষক হত।”
ভারত
রাহানে ক বাটলার বো ফিন ৭৩
ধবন ক বাটলার বো ওকস ৩৮
কোহলি ক রুট বো মইন ৮
রায়না ক ওকস বো মইন ১
রায়ডু ক বাটলার বো ব্রড ১২
ধোনি এলবিডব্লিউ অ্যান্ডারসন ১৭
বিনি ক বেল বো ফিন ৭
জাডেজা ক ফিন বো ব্রড ৫
অক্ষর ক বেল বো ফিন ১
মোহিত নট আউট ৭
শামি ক বাটলার বো ওকস ২৫
অতিরিক্ত ৬
মোট ৪৮.১ ওভারে ২০০
পতন: ৮৩, ১০৩, ১০৭, ১৩৪, ১৩৬, ১৫২, ১৬৪, ১৬৪, ১৬৫।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ৯-১-২৪-১, ওকস ৯.১-১-৪৭-২,
ব্রড ১০-১-৫৬-২, ফিন ১০-০-৩৬-৩, মইন ১০-০-৩৫-২।
ইংল্যান্ড
বেল এলবিডব্লিউ মোহিত ১০
মইন ক রায়ডু বো অক্ষর ১৭
টেলর ক বিনি বো মোহিত ৮২
রুট ক ও বো বিনি ৩
মর্গ্যান ক ধবন বো বিনি ২
বোপারা ক জাডেজা বো বিনি ৪
বাটলার ক রায়ডু বো শামি ৬৭
ওকস নট আউট ৪
ব্রড নট আউট ৩
অতিরিক্ত ৯
মোট ৪৬.৫ ওভারে ২০১-৭।
পতন: ১৪, ৪০, ৪৪, ৫৪, ৬৬, ১৯১, ১৯৩।
বোলিং: বিনি ৮-০-৩৩-৩, মোহিত ১০-১-৩৬-২,
শামি ৯-০-৩১-১, অক্ষর ১০-১-৩৯-১, জাডেজা ৯.৫-০-৬২-০।