আর্মান্দো কি বিদায়ের পথে? ছবি: উৎপল সরকার
ফেড কাপে ইস্টবেঙ্গলের লজ্জার বিদায়ের পরের দিন ফুটবলারদের মনোবল বাড়াতে টিম হোটেল এলেনই না আর্মান্দো কোলাসো। থাকলেন তিরিশ কিলোমিটার দূরে আগেসাইনের বাড়িতে। ম্যানেজার অ্যালভিটো ডি’কুনহার কাছে বার দু’য়েক ফোন করে শুধু জানতে চেয়েছেন, ফেরার বিমান টিকিট পাওয়া গেল কি না। কোনও ফুটবলাককে ফোন করেননি। সংবাদমাধ্যমের কোনও ফোন ধরেননি।
গত রাতে শেষ বার টিম হোটেলে এসেছিলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ। বাড়ি ফেরার আগে ধোঁয়াশা ছড়িয়ে ফুটবলারদের বলে যান, “তোমাদের খেলায় আমি হতাশ। একবারও ভাবিনি এ ভাবে এগিয়ে থেকেও হেরে যাব। আমি তোমাদের সঙ্গে কলকাতায় যাচ্ছি ঠিক, তবে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে গোয়ায় আবার ফিরে আসার জন্য। আর তোমাদের কোচিং করাব না।”
সূত্রের খবর, দলের কোনও ফুটবলার কোচের এ সব মন্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। কারণ, ডেম্পোতে থাকার সময়ও নাটকীয় ভাবে এ রকম অনেকবার বলেছেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলে আসার পরেও চার-পাঁচবার বলেছেন। ফেড কাপেও সেই নাটক অব্যাহত। কিন্তু আজ রাত পর্যন্ত পদত্যাগ করেননি। ডেম্পোতে বহু দিন খেলা এক ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার হাসতে হাসতে বললেন, “দেখবেন, পদত্যাগ করব করব বলবে। কিন্তু কোনও দিন সেটা করবে না। চাপে পড়লেই এ সব বলে।”
ট্রেভর মর্গ্যান দু’বছর ফেড কাপ দেওয়ার পর আর্মান্দোর হাতে পড়ে ইস্টবেঙ্গলের দফারফা। কোচির পর গোয়াতেও গ্রুপ লিগ থেকেই বিদায়। দেশের সেরা টিম নিয়েও ব্যর্থ। কোটি কোটি লল-হলুদ সমর্থক হতাশ হলেও ক্লাবকর্তারা তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য কলকাতা থেকে ফোনে বললেন, “কোচ আর ফুটবলাররা ফিরলে তাদের সঙ্গে কথা বলব, ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলব। দেখি সবাই কী বলে।” কলকাতায় ক্লাব তাঁবুতে বসে সচিব কল্যাণ মজুমদারও কোচকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি আজ। আসলে টিমের যে হালই হোক, অন্যতম শীর্ষকর্তার আইনি কারণে ক্লাবে দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিকল্প লোক নেই ইস্টবেঙ্গলে।
এগারো দিন পরেই ফের গোয়ায় আসতে হবে আই লিগ খেলতে। প্রতিপক্ষ সেই ভিক্টোরিনো ফার্নান্ডেজের স্পের্টিং ক্লুব। এ রকম পরিস্থিতিতে বিশ্বের যে কোনও কোচই ফুটবলারদের মোটিভেট করার জন্য তাঁদের সঙ্গে সময় কাটান। মনোবল বাড়ান। উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু আর্মান্দো সে পথে হাঁটেনইনি। আর র্যান্টি-ডুডুরাও ফোন বন্ধ রেখে হোটেল থেকে বেরিয়ে ঘোরাঘুরি করলেন বন্ধুদের বাড়ি-বাড়ি।
আর্মান্দো বলেছিলেন, “আইএসএল খেলে ছেলেরা ক্লান্ত। যেটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে যাচ্ছে। ছেলেরা উঠলে আর নামতে পারছে না।” কোচ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁর এই ভাবনার সঙ্গে একমত নন ক্লাব সচিব। কল্যাণ এ দিন বলেছেন, “পেশাদারের আবার ক্লান্তি কীসের? আইএসএল খেলে টাকা পেয়েছে, এখন ক্লাব থেকে টাকা পাচ্ছে। ওরা তো জেনেই এসেছে টানা খেলতে হবে।” যা শুনে ফুটবলাররা অনেকেই ক্ষুব্ধ আর হতাশ।
এমনিতেই কোচের সঙ্গে মানসিক ভাবে মানাতে পারছেন না বেশির ভাগ ফুটবলার। এক-একজনের ক্ষোভ এক-এক রকম। এক পঞ্জাবি ফুটবলার টিম হোটেল থেকে ফোনে বললেন, “লোবো যতই খারাপ খেলুক, ওকে খেলিয়েই যাবেন কোচ। গোয়ার ছেলে যে। আর আমাকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। আমার আইএসএলে দারুণ খেলা গুরুত্বই পেল না।” আইএসএলে চুটিয়ে ভাল খেলা বাংলার দুই ফুটবলার বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গলে তো আমাদের স্ট্র্যাটেজি বোঝানোই হয় না। কী ভাবে খেলতে হবে সেটা তো কোচকে বলতে হবে। ডেম্পো ড্রেসিংরুমে ওদের কোচ পাপাস বিপক্ষের পুরো ম্যাচ নিজের ছেলেদের ভিডিও প্রেজেন্টেশন দিয়ে দেখান, বোঝান। আমাদের কোচ কোনও দিন বোর্ডে চক দিয়ে এঁকেও বোঝান না বিপক্ষের ভুলগুলো কোথায়? কী ভাবে আমরা এগোব? শুধু একটাই কথা, ‘এনজয় অ্যান্ড প্লে।”
এ দিনই পুণে এফসি-কে ৩-১ হারিয়ে সেমিফাইনালে গেল সালগাওকর। সেমিফাইনালে তারা খেলবে ডেম্পোর বিরুদ্ধে। স্পোর্টিংয়ের সামনে বেঙ্গালুরু। যার পর এক ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার বললেন, “টিমের সঙ্গে ভিডিও অ্যানালিস্ট আর বুদ্ধিমান কোচ থাকলে কী হয় দেখেছেন! সালগাওকরের পরিকাঠামো দারুণ আধুনিক। আমাদের কোচ সেই মান্ধাতার আমলে পড়ে আছেন।” তবে মিডিয়া দেখলে কোচের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেও সরাসরি কোটস দিতে চাইছেন না ইস্টবেঙ্গলের কোনও ফুটবলারই।
মোহনবাগান কাল দু’দফায় কলকাতা ফিরছে। ডুডু-মেহতাবরা কখন যাবেন তা রাত পর্যন্ত জানাতে পারেননি ম্যানেজার অ্যালভিটো। বললেন, “কোচ আজ আসেননি হোটেলে। ফোন করেছিলেন। উনি আমাদের সঙ্গেই কলকাতায় যাবেন বলছেন।” কিন্তু টিমের এই অবস্থায় আর্মান্দো তো এসে ফুটবলারদের সঙ্গে অন্তত কথা বলতেও পারতেন? অ্যালভিটোর মন্তব্য, “কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কলকাতায় গিয়ে সবাই মিলে বসব।”
অ্যালভিটো বুদ্ধিমান। জানেন টিমের পরিস্থিতি। কোচ-ফুটবলারদের মধ্যে সম্পর্ক। কোনও মন্তব্যে গেলেন না!