গুরু সৌরভের পাঠশালায় বাধ্য ছাত্র (বাঁ দিক থেকে) অনুষ্টুপ মজুমদার, অরিন্দম দাস ও সন্দীপন দাস। মঙ্গলবার সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বোলারদের শায়েস্তা করতে হলে শুধু দক্ষতা নয়, দরকার কলিজার জোরও বাংলার রঞ্জি দলের ব্যাটসম্যানদের এমনই পরামর্শ দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার তাঁর ভিশন ২০২০-র শিবিরে বাংলা দলের ব্যাটসম্যানদের ডেকেছিলেন সৌরভ। অরিন্দম দাস, শুভময় দাস, অনুষ্টুপ মজুমদারের মতো সিনিয়ররা যেমন এসেছিলেন, তেমনই রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন দাস, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, বিবেক সিংহ-রাও এ দিন হাজির হয়েছিলেন গুরু সৌরভের পাঠশালায়। ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্তরে খেলে এলেও সাফল্যের পালক নেই এঁদের মুকুটে। কেন, তা সৌরভই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন ওঁদের। মহারাজের ক্লাসে থাকা এক ছাত্রের বয়ান অনুযায়ী, সৌরভ তাঁদের বলেন, “শুধু স্কিলই যথেষ্ট নয়। উঁচু স্তরের ক্রিকেটে সুযোগ পেতে হলে বা সেখানে টিকে থাকতে দরকার কলিজার জোরও।”
কলিজার জোর অর্থাৎ সাহস ও ম্যাচে প্রচণ্ড চাপের মুখে শক্ত হাতে সেই চাপ সামলানোর ক্ষমতা। ভাল ব্যাটসম্যানের এই গুণগুলোর কথাই বলছিলেন সৌরভ। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক যখন এই কথাগুলো বলছিলেন শুভময়দের, তখন সঙ্গে ছিলেন বাংলার কোচ অশোক মলহোত্রও। যিনি নিজেও রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার ক্রিকেটারদের প্রচুর সাহস জুগিয়েছেন। সেই মলহোত্র সৌরভের এই ক্লাসের পর বলেন, “সৌরভের কথাগুলো আমিও বহু বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ওরা মাঠে তা করার চেষ্টাও করেছে। এ বার সৌরভ বলার পর নিশ্চয়ই ওরা ব্যাপারটা আরও ভাল ভাবে উপলব্ধি করবে। সত্যি এ বার এই দিকগুলোয় জোর দেওয়া দরকার।”
বাংলা দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যান অনুষ্টুপ মজুমদারের কথায়, “দাদি টেম্পারমেন্ট, পেস বোলারদের সামলানোর জন্য ফুটওয়ার্ক, মেন্টাল টাফনেস এই ব্যাপারগুলো উন্নতির কথাই এ দিন বলছিল। বোলিং মেশিন নিয়ে প্র্যাকটিস করার কথাও বলেছে। টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো নিয়ে পরেও আলোচনা করবে বলেছে। আর অন্যান্য দিকগুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবে বলেছে। পরে যখন আমরা রঞ্জি ট্রফির প্রস্তুতি শুরু করব, তখন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা আবার বসব।”
এক সময় সৌরভের সতীর্থ হিসেবে খেলা বাংলার এক ক্রিকেটার, যিনি এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে সারা দিনই ছিলেন, তিনি বলেন, “নেট প্র্যাকটিসে বেশি সিরিয়াস হওয়ার কথাও বলছিল দাদি। নেটে আসতে দেরি করা চলবে না, ম্যাচের মতোই সিরিয়াস হয়ে নেটে ব্যাট করতে হবে, এই পরামর্শগুলোই দিয়েছে ও। নেটে পাঁচ বার বিট হলে নিজেই নিজেকে সারা মাঠে পাঁচ পাক দৌড়ে শাস্তি দেওয়ার পরামর্শও দেয় ব্যাটসম্যানদের। ওর বক্তব্য, এ ভাবেই নিজেদের তৈরি করতে হবে।”
দু’তিনজনকে আলাদা করে ডেকেও কথা বলেন সৌরভ। একজনকে বললেন, “তোর ফুটওয়ার্কটা ঠিক কর। না হলে সমস্যায় পড়বি।” আর একজনকে ডেকে বললেন, “এই টেম্পারমেন্ট নিয়ে বেশি দূর এগোতে পারবি না। আরও উপরে উঠতে হলে কিন্তু তোকে টেম্পারমেন্ট বাড়াতে হবে।” অন্য জনকে বললেন, “যখন ব্যাট করতে নামবি, তখন মনে করবি, ইউ আর ব্যাটিং ফর ইওর লাইফ।”
তবে সৌরভ আগের দিনের মতো নিজে নেটে ঢুকে ব্যাট করেননি এ দিন। আগের দিন যেমন ৮১ জনের মধ্যে থেকে ২০ জনকে বেছেছিলেন, এ দিন ৫৭ জনের মধ্যে থেকে বাছলেন ২৫ জনকে। এই ৪৫ জনের মধ্যে থেকেই বুধবার চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করবেন তিনি।