ছবি: সুমন বল্লভ।
ম্যাচ নেই। শুধু তাঁদের দেখতেই গ্যালারি ভরিয়ে দিয়েছে হাজার পঞ্চাশ মানুষ। গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে অন্তত আরও হাজার দশেক। ক্লাবহাউসের সামনে বিশাল মঞ্চে ঝুলছে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা। গ্যালারির এখানে-ওখানে বিরাট নীল পোস্টার। টিম কেকেআরকে দ্বিতীয় বার আইপিএল ট্রফি জয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সিএবি।
সব দেখেশুনে যেন ঘোর লেগে গিয়েছিল পীযূষ চাওলার। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে চার দিকে তাকাচ্ছেন। আর তাঁকে একমনে কী সব বুঝিয়ে যাচ্ছেন ইউসুফ পাঠান। কী ব্যাপার? না, ইডেনে কেকেআরের জয়োৎসব যে উন্মাদনার কোন পারদ ছুঁতে পারে, সতীর্থকে সেটাই বলছেন দীর্ঘদেহী পাঠান। তাঁর বোঝানো শেষ হতে না হতেই পীযূষের স্বগতোক্তি, “ওফ! কী অসাধারণ পরিবেশ! কিছু টিমমেটের কাছে শুনেছিলাম ইডেনে এ রকম সেলিব্রেশন হয়। নিজের চোখে ব্যাপারটা দেখেও যেন ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পারছি না। সত্যি, এই অভিজ্ঞতাটা চিরকাল মনে রাখব!” পাশে দাঁড়ানো ইউসুফ হাসতে হাসতে বলছেন, “আরে, এটা তো আমার খুব চেনা পরিবেশ। দু’বছর আগেও এই জিনিস দেখেছি। তাই আলাদা করে কিছু মনে হচ্ছে না। তবে প্রথম বার যা দেখেছিলাম, চমকে যাওয়ার মতো।”
পাঠানের কথা শেষ হতে না হতে তাঁর উপর চোখ পড়ে গেল ঊষা উত্থুপের। মঞ্চে দাঁড়ানো ঊষা গান থামিয়ে প্রবল উৎসাহের সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলেন, “ইউসুফ ভাই! ইউসুফ ভাই!” ততক্ষণে ইডেনের গ্যালারিও জেনে গিয়েছে, পাঠানরা মাঠে পৌঁছে গিয়েছেন। ঘণ্টাতিনেকের অপেক্ষার ক্লান্তি ঝরিয়ে ইডেন ফেটে পড়ল প্রিয় নাইটদের নিয়ে। “খানা হ্যায়” বলে পাঠান সটান ড্রেসিংরুমে। তা হলে কি তিনি মঞ্চে উঠবেন না? নাহ, একটু পরেই পীযূষকে বগলদাবা করে নিয়ে সোজা স্টেজে ইউসুফ। যেখানে ‘ঢিংকা চিকা’-র সঙ্গে নাচলেনও দুই নাইট।
একে একে ড্রেসিংরুম থেকে তখন মাঠে আসছেন বাকি নাইটরা। ঠাসা গ্যালারির ছবি তুলতে তুলতে প্রথমেই বেরোলেন ডব্লিউ ভি রামন এবং বেঙ্কি মাইসোর। গৌতম গম্ভীরের হাসি উধাও কেন? দিল্লির ফ্লাইটের সময় এগিয়ে আসছে অথচ শাহরুখ খান এসে পৌঁছননি বলে অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে না, তাই নাইট-নেতা যেন একটু বিরক্ত। ট্রফিটা মণীশ পাণ্ডেকে দিয়ে বললেন, “তুমি যাও। আমি পরে আসছি।”
মণীশের হাবভাবে অবশ্য এতটুকু বিরক্তি নেই। ফাইনাল জেতানো ৯৪ রানের ইনিংস খেলার সময় এক বারও তাঁকে নড়বড়ে দেখায়নি। কিন্তু ইডেনের উচ্ছ্বাস যেন তাঁকে টলিয়ে দিয়েছে। ফাইনাল জেতানোর নায়ক মুগ্ধ বিস্ময়ে বলে ফেলেন, “কলকাতা যেন কোনও দিন না বদলায়!” একটু থেমে সংযোজন, “আমরা যখন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতি, তখন বেঙ্গালুরুতে অনেকটা এ রকম উচ্ছ্বাস দেখেছি। কিন্তু ইডেনে আজ যা দেখছি, তুলনা হয় না! আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে কোনও শহর যে এ রকম উন্মাদনা দেখাতে পারে, ভাবতেই পারিনি!”
সোনালি-বেগুনি জার্সিতে এ বছর শেষ বারের মতো ইডেনে বাকি যাঁরা পা দিলেন, তাঁরাও তো সমান বিহ্বল। কোচ ট্রেভর বেলিস যেমন মাঠে পা দিয়ে গ্যালারির দিকে এক ঝলক দেখে প্রথমেই বলে ফেললেন, “ওহ মাই গড! এ তো অবিশ্বাস্য!” মনবিন্দর বিসলা দু’বছর আগেকার মেগা শো-এ ছিলেন। তবু মঙ্গলবার ইডেনের সব কিছুতে তিনি সমান প্রভাবিত। ২০১২ ফাইনাল জয়ের নায়ক বলছিলেন, “এ বারের অনুষ্ঠানটা মনে হচ্ছে আরও বেশি জমজমাট। পীযূষের জন্য খুব ভাল লাগছে। গত বার আমি ইডেনের যে ভালবাসাটা পেয়েছিলাম, সেটা ও আজ পাচ্ছে। ইডেনের ভালবাসা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।” দুই বিদেশি প্যাট কামিন্স আর ক্রিস লিন তো মাঠের ভেতরের ব্যাপারস্যাপার দেখতে মোটেও আগ্রহী নন। বরং এক মনে গ্যালারির ভিডিও তুলে যাচ্ছেন। জাক কালিস বেরনোর সময় অস্ফুটে বলে গেলেন, “কোনও শব্দ নেই এই জিনিস বোঝানোর!”
...তোমাদের দলে নাও খেলায়: নাইটদের বিজয়োৎসবে জুহির সঙ্গে উল্লাসে মাতলেন
প্রসেনজিৎ। সঙ্গে টলিউডের অন্য তারকারা। মঙ্গলবার, ইডেনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
শাহরুখের সঙ্গে ইডেন পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় চারটে বাজিয়ে দিয়েছিলেন রবিন উথাপ্পা। ততক্ষণে জিপে করে মাঠ প্রদক্ষিণ, স্মারক দান সব শেষ। আইপিএল সেভেনে অরেঞ্জ ক্যাপের মালিকের আক্ষেপ, “আসতে দেরি হয়ে গেল বলে অনেক কিছু মিস করে গেলাম। তবে যেটুকু দেখলাম, সেটাও কম নয়। ফ্যানটাস্টিক!”