আইপিএল-আকাশে নতুন তারা

ইব্রার স্করপিয়ন কিকের মতো ভুলতে পারব না লিনের এই ক্যাচও

প্রত্যেকটা টুর্নামেন্টের এক একটা সিগনেচার মার্ক থাকে। যা দিয়ে ওই টুর্নামেন্টকে আলাদা করে মনে করা যায়। আইপিএল সেভেন মনে হয় আজ রাতে তার সিগনেচার মার্কটা পেয়ে গেল! ক্যাচই ম্যাচ জেতায়— ক্রিকেটের এই প্রবাদবাক্যটা বহু দিন ধরে শুনে আসছি। ’৮৩-র বিশ্বকাপ ফাইনাল বললে বলবিন্দর সাঁধুর অমর ডেলিভারি, মোহিন্দর অমরনাথের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ের কথা মনে পড়ে। কিন্তু ভিভ রিচার্ডসের ওই ক্যাচ অবিশ্বাস্য ভাবে কপিল দেব সে দিন না নিলে শেষ পর্যন্ত ভারত চ্যাম্পিয়ন হত কি না কে জানে!

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০২
Share:

প্রত্যেকটা টুর্নামেন্টের এক একটা সিগনেচার মার্ক থাকে। যা দিয়ে ওই টুর্নামেন্টকে আলাদা করে মনে করা যায়। আইপিএল সেভেন মনে হয় আজ রাতে তার সিগনেচার মার্কটা পেয়ে গেল!

Advertisement

ক্যাচই ম্যাচ জেতায়— ক্রিকেটের এই প্রবাদবাক্যটা বহু দিন ধরে শুনে আসছি। ’৮৩-র বিশ্বকাপ ফাইনাল বললে বলবিন্দর সাঁধুর অমর ডেলিভারি, মোহিন্দর অমরনাথের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ের কথা মনে পড়ে। কিন্তু ভিভ রিচার্ডসের ওই ক্যাচ অবিশ্বাস্য ভাবে কপিল দেব সে দিন না নিলে শেষ পর্যন্ত ভারত চ্যাম্পিয়ন হত কি না কে জানে! ’৯২ বিশ্বকাপে ইমরানের পাকিস্তান যেমন একটা বিস্ময় ছিল, ঠিক ততটাই বিস্ময়কর ছিল জন্টি রোডসের করা ওই অবিশ্বাস্য রান আউট। কেকেআর আইপিএল সেভেন জিতবে কি না, জানি না। এখনও এগারোটা ম্যাচ বাকি। কিন্তু নাইটরা যদি ছিটকেও যায় টুর্নামেন্ট থেকে, আইপিএল সেভেনকে মনে রাখার কারণ কিন্তু নাইটরাই দিয়ে গেল।

একটা অবিশ্বাস্য ক্যাচে।

Advertisement

ক্রিস লিন— ছেলেটা বিগ ব্যাশে মারাত্মক খেলে জানতাম। ভাল ফিল্ডার, সেটাও জানতাম। কিন্তু ক্রিকেট মাঠে যে ও জিমন্যাস্টিকস দেখাতে পারে, সত্যি জানতাম না!

সবচেয়ে আশ্চর্যের হচ্ছে, ও তার আগে বডি-ব্যালান্স হারিয়ে পড়ে গিয়েছিল। পা হড়কে গিয়েছিল লিনের। আমি শুধু ওর ওই মুহূর্তে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করতে চাই। ডে’ভিলিয়ার্সের বলটা ওর দিকে যখন আসছে, লিনের পা ততক্ষণে স্লিপ করছে। ঝট করে দেখলাম পা ভাঁজ করে বসে পিছন দিকে শরীরটা ছুড়ে ক্যাচটা ধরে সামনের দিকে আবার শরীরটা ঠেলে দিল! ডে’ভিলিয়ার্স ফেরার সময় দেখছিলাম যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ওটা ছয় নয়, ক্যাচ হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে এ রকম ক্যাচ কাউকে নিতে দেখিনি। বিদেশি ফুটবলে জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ অবিশ্বাস্য সব গোল করে। স্করপিয়ন কিক, প্রপেলার কিক মেরে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়। লিনের কৃতিত্বও সেই পর্যায়ের।

ওই একটা ক্যাচ, স্রেফ ওই একটা মুহূর্ত নাইটদের ম্যাচটা জিতিয়ে দিয়ে চলে গেল। যুবরাজের ঠুকঠুক করে ৩৪ বলে ৩১ নয়। মোক্ষম সময়ে নারিনের বলে বিরাট কোহলির বোল্ড হয়ে যাওয়াও নয়।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

কেকেআরের আরও কয়েকটা প্লাস পয়েন্ট দেখলাম। বাকি দলগুলোর দিকে তাকালে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। কেকেআরের সে সব তেমন নেই। কিন্তু টিমটার এমন কিছু প্লাস পয়েন্ট আছে, যা এখানে দরকার। মাথায় রাখতে হবে এ দিন ওদের সিক্সথ বোলার ছিল না। কিন্তু তার পরেও বিরাট-ডে’ভিলিয়ার্স-যুবরাজের আরসিবি ব্যাটিংকে আটকে রাখল দেড়শোর কমে। কেকেআরের একটা জাক কালিস আছে যে ওপেন করতে নেমে চল্লিশ করে দেবে। আবার বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২৬ দিয়ে দু’টো-একটা উইকেটও নেবে। গম্ভীর জানে, কোনও ব্যাটসম্যানের যদি শর্ট পিচড ডেলিভারি খেলার বদনাম থাকে, সঙ্গে সঙ্গে ও একটা মর্নি মর্কেলকে আনতে পারবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ডেথ ওভার বোলিং নিয়ে কেকেআরকে ভাবতে হচ্ছে না। গম্ভীর জানে, নারিনকে প্রথমে একটা ওভার করিয়ে শেষের পাঁচ ওভারের তিনটে করাতে পারবে। কারণ মাঝের ওভারগুলোয় প্রতিপক্ষকে আটকে রাখার বোলিংও ওর আছে। ডেথে নারিনের সঙ্গে থাকবে একটা বিনয় কুমার। শেষ ওভারে ৯ কেন, ২০ থাকলেও ডে’ভিলিয়ার্সের সামনে সেটা কম লাগে। সেখানে আজ বিনয় দিল সাত!

আর ব্যাটিং ফর্ম যা-ই হোক, আজকের পর মনে হচ্ছে ক্যাপ্টেন গম্ভীরের ফর্ম ঠিকই আছে। আজ দু’টো ফাটকা খেলেছিল গম্ভীর। ব্যাটিং অর্ডারে ইউসুফ পাঠানকে তুলে আনা। এই ফাটকাটা খাটেনি। দ্বিতীয়ক্রিস লিনকে নামিয়ে দেওয়া। ফলাফল কী, সবাই দেখতেই পাচ্ছেন। ব্যাট হাতে ৩১ বলে ৪৫। তার পর ওই ক্যাচ। শুধু একটা ব্যাপার। গম্ভীর নিজে যদি তিন নম্বরে নিজেকে নামিয়ে আনে, খুব ভুল হবে না। কেকেআর যে বছর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়, সে বার তো তিনেই নামত গম্ভীর। মিডল অর্ডারও ভরসা পেত। আশা করব, এ সব ফাইন টিউনগুলো শনিবারের ম্যাচের আগে করে ফেলবে কেকেআর। সবচেয়ে বড় কথা, প্রত্যেক টিমের একটা সময়ে মোমেন্টাম শিফট লাগে। যখন সে বিশ্বাস করতে শুরু করে, এই ম্যাচ যখন জিতেছি, যে কোনও ম্যাচ এ বার জিতব।

ক্রিস লিনের একটা অবিশ্বাস্য ক্যাচ সেটা কেকেআরকে দিয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন