স্যাম রবসনকে ফিরিয়ে ইশান্ত। ছবি: রয়টার্স।
ভারত ৪৫৭
ইংল্যান্ড ৩৫২-৯
আগের দিন শামি-ভুবিদের ১১১ রানের পার্টনারশিপের পর ওদের এবং ইশান্তের দুরন্ত বোলিং— দেখেশুনে মনে হচ্ছে ভারতীয় দলটা একটা সংকল্প নিয়ে ট্রেন্ট ব্রিজে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছে।
সংকল্পটা ভাল ক্রিকেট খেলার। হারি-জিতি, ভাল ক্রিকেট খেলব। আর এমন মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামলে তা এমন একটা মোড়ে এনে দেয়, যা দলকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যায়। শুক্রবার প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলার পর ধোনিরা সেই মোড়েই দাঁড়িয়ে। শুক্রবার ইংল্যান্ড ফলো অন বাঁচিয়ে ১০৫ রানে পিছিয়ে থাকলেও ভারত কিন্তু জয়ের দিকে ঝুঁকে। মনে রাখবেন, খেলার এখনও দু’দিন বাকি। শনিবার সকালেই শেষ উইকেটটা ফেলে দিয়ে ইংল্যান্ডের উপর আরও তিনশো চাপিয়ে দিয়ে শেষ দিন দান ছেড়ে দিতে পারলে কিন্তু ভারত এই টেস্ট জিততে পারে। এখন মনে হচ্ছে অশ্বিনকে দলে রাখলেই ভাল হত। শেষ দিন হয়তো ও-ই তুরুপের তাস হয়ে উঠত। স্টুয়ার্ট বিনির উপর ভরসা রেখে ধোনি যে ঠিক কাজ করছে না, তা আগেই মনে হয়েছিল। বিনি টি টোয়েন্টি বা পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ঠিক আছে, টেস্টে নয়।
ভারতের সাড়ে চারশোর উপর ইনিংসের জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য দুই টেল এন্ডারের। শামি যে অত ভাল ব্যাট করতে পারে, বিশ্বাস করুন, তা আমিও ভাবতে পারিনি। ভুবিও অবাক করল। অতক্ষণ ধরে ব্যাটিংয়ের পর টানা বোলিং করে যাওয়াটা কঠিন। অবশ্য বৃহস্পতিবার ১৭ ওভারের বেশি বল করতে না হওয়ায় সুবিধাই পেয়েছে ভারতীয় পেসাররা। শুক্রবার মাঠে নামার আগে ওরা ‘রিকভারি’-র সময়টা পেয়ে যায়। তবু প্রথম দু’ঘন্টা যে ভাবে ব্যাট করে গেল দুই ইংরেজ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান রবসন ও ব্যালান্স, তাতে পোসারদের হতাশ হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। তবু লাঞ্চের পর ইশান্তের (৩-১০৯) জ্বলে ওঠাটাই টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়।
প্যাভিলিয়নে ফিরছেন ভুবনেশ্বরের তৃতীয়
শিকার স্টুয়ার্ট ব্রড। শুক্রবার ট্রেন্ট ব্রিজে। ছবি: এপি।
দারুণ বোলিং করেছে ইশান্ত। তার আগেই টিভিতে ওয়াসিম আক্রমের মুখে ওদের সমালোচনা শুনছিলাম। ওয়াসিম বলছিল, শামির পেস কমে গিয়েছে। ইশান্তও ঠিকমতো বলটা উইকেটে হিট করাতে পারছে না। পেসাররা বলটাকে ঠিকমতো রিভার্স সুইংয়ের উপযোগী করে তুলতে পারছে না। জানি না ওয়াসিম-এর এই বক্তব্যগুলো ওরাও শুনতে পেয়েছে কি না। তবে লাঞ্চের পর যেন পাকিস্তানি স্পিডস্টারের প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিল ভারতীয় পেসাররা।
লাঞ্চে ১৩১-১ থেকে লাঞ্চের পর প্রথম ড্রিঙ্কসে ১৭২-৪। মাঝের এই ধসটা ইশান্তের নামানো। রবসনকে (৫৯) এলবিডব্লু-র ফাঁদে ফেলে যেমন ভাবে ১২৫-এর পার্টনারশিপ ভেঙে দিল দিল্লির পেসার, তেমন ভাবেই ব্যালান্স (৭১) ও বেলকেও (২৫) ফিরিয়ে দিয়ে ভারতকে লড়াইয়ের জায়গায় এনে দিল ও। ৪৫৭-র জবাব দিতে নামা দল ১৭২-৪ হয়ে গেলে তো চাপে পড়বেই। তা ছাড়া এই টেস্টে ইংল্যান্ড সমর্থক ছাড়া আর কোনও হোম অ্যাডভান্টেজ পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। উইকেটের দিক থেকে তো একেবারেই নয়। ট্রেন্ট ব্রিজে এ রকম উইকেট দেখে কিছুটা অবাক হচ্ছি ঠিকই। আবার এও মনে হচ্ছে যে, এখন সারা বিশ্বেই এ রকম পাটা উইকেট তৈরি করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও তো একই রকম উইকেট দেখা গিয়েছে। তাই বিস্মিত হচ্ছি না। তা ছাড়া ইংল্যান্ডের এই দলটাও আহামরি নয়। বিপক্ষ শিবিরে আতঙ্ক সৃষ্টি করার মতো কিছুই নেই। বোলারদের শাসন করার মতো যে ব্যাটসম্যান রয়েছে, সেই কুক একেবারেই ফর্মে নেই। ইংল্যান্ডকে ওদের ঘরের মাঠে হারানোর এমন সুযোগ ছাড়া উচিত হবে না।
লাঞ্চের পর থেকেই রিভার্স সুইং পাচ্ছিল আমাদের পেসাররা। এই ব্যাপারে ইংরেজদের চেয়ে ভারতের পেসারদের এগিয়ে রাখতেই হচ্ছে। রিভার্স সুইংটা কিন্তু ওরা অনেক ভাল করেছে। শুরুতে ইশান্ত যে কাজটা করল, শেষ দিকে ভুবনেশ্বর কুমার (৪-৬১) সেটাই করল। মাঝে শামি (২-৯৮)। ২০২-৭ হয়ে যাওয়ার পর জো রুট (৭৮ অপরাজিত) ও স্টুয়ার্ট ব্রড (৪৭) উইকেটে না দাঁড়াতে পারলে (৭৮ রানের পার্টনারশিপ) চাপটা আরও বাড়ত।
তবু বলব, ভারত এখনও এই টেস্ট জেতার জায়গায় রয়েছে।