পারথ থেকে কেনিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন শুক্রবারই দুপুর-দুপুর। যদিও নতুন ঠিকানা এএফসি লেপার্ডসের সঙ্গে এখনও চুক্তি পাকা নয়। কেনিয়ান দলের কর্তাদের কাছে দু’সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। চোদ্দো দিনের মধ্যে কি উলটপুরাণ হবে? ইস্টবেঙ্গলের জন্য দরজা এখনও খুলে রাখছেন না তো? অস্ট্রেলিয়া থেকে দীর্ঘ ই-মেল সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজারের কাছে অনেক রহস্যই ফাঁস করলেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।
প্রশ্ন: লম্বা ছুটি কাটালেন। স্কুলে গরমের বা ক্রিসমাসের ছুটিও এত লম্বা হয় না!
মর্গ্যান: তা হলে বলছেন, আমাকে দেখে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও হিংসা করছে?
প্র: অনেকটা সে রকমই...
মর্গ্যান: একেবারেই ভুল ধারণা। আমি সেই ডিসেম্বর থেকে আবার পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছি। ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার আগে যে ক্লাব আমাকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে এসেছিল, সেই সোরেন্টো এফসি-তে। ওরা আমার জায়গাটা বোঝে এবং কেনিয়াতে কোচিংয়ের নতুন ইনিংস শুরু করার ব্যাপারে খুব সাহায্য করেছে। যেমন ২০১০-এ ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার সময় করেছিল।
প্র: কেনিয়ায় যোগাযোগ হল কী করে?
মর্গ্যান: আমার এক খুব কাছের বন্ধুর মাধ্যমে এএফসি লেপার্ডস সম্পর্কে জানতে পারি। কেনিয়ার ওই ক্লাবে আমার সিভি পাঠানোর সঙ্গে-সঙ্গে ওরাও দেখলাম আগ্রহ দেখাল। তার পর ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথাবার্তা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। তবে আর কোনও জায়গায় আমি কোচিংয়ের সিভি জমা দিইনি।
প্র: কবে সরকারি ভাবে এএফসি লেপার্ডসের দায়িত্ব নিচ্ছেন?
মর্গ্যান: শুক্রবার দুপুরেই কেনিয়া উড়ে যাচ্ছি। তবে লেপার্ডস আমাকে প্রস্তাব দিলেও আমি ওদের কাছে আরও দু’সপ্তাহ সময় চেয়েছি। যেটা ওরা মেনেও নিয়েছে। আমি এখনও ওদের চুক্তিপত্রে সই করিনি।
প্র: তা হলে ভারতে আসার সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি?
মর্গ্যান: হতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। কে জানে ভবিষ্যতে ভারতীয় ফুটবলে কী হতে চলেছে।
প্র: ভারতকে মনে পড়ে? বিশেষ করে ইস্টবেঙ্গলকে?
মর্গ্যান: আমার জীবনের অন্যতম সেরা তিনটে বছর ইস্টবেঙ্গলে কাটিয়েছি। ওখানে আমার বিদায়বেলায় সমর্থকদের মধ্যে যে ভালবাসা দেখেছি, তা আমার হৃদয়ে চিরকালের জন্য গেঁথে রয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের সঙ্গে কাটানো সময়টাও কোনও দিন ভুলতে পারব না। আর ভুলতে পারব না কলকাতার চিকেন টিক্কা মশালা।
প্র: আর্মান্দো কোলাসোর সঙ্গে এখনও নতুন মরসুমের চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি ইস্টবেঙ্গলের। সমস্যা হচ্ছে। জানেন কি?
মর্গ্যান: জানি না। সেটা জানা আমার কাজও নয়।
প্র: ইস্টবেঙ্গল যদি আপনাকে এখন প্রস্তাব দেয় রাজি হবেন?
মর্গ্যান: আগে ওদের আমাকে প্রস্তাব দিতে হবে, তার পরে বলতে পারব।
প্র: দু’সপ্তাহ হাতে আছে তো?
মর্গ্যান: সেটাই তো বলছি, প্রস্তাব না পেলে কী ভাবে বলব। ইস্টবেঙ্গল আগ্রহ দেখালে, তার পর তো আমার চিন্তা-ভাবনার বিষয়।
প্র: এক জন পেশাদার কোচ হিসাবে আপনার কী মনে হয় না, ইস্টবেঙ্গলের চাকরির জন্য একটু বেশিই অপেক্ষা করে ফেলেছেন?
মর্গ্যান: কে বলল আমি ইস্টবেঙ্গলের জন্য অপেক্ষা করছি.... আমি অস্ট্রেলিয়ায় পুরোদমে কাজ করছি এবং আমার সামনে কেনিয়ায় কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করছে। শুধু তাই নয়, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে কলকাতা ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য মুখিয়ে আছি। এই মুহূর্তে আমার ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত।
প্র: তা হলে আপনি আটলেটিকো দ্য কলকাতা-র সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন?
মর্গ্যান: যতক্ষণ না চূড়ান্ত হচ্ছে, ততক্ষণ সরকারি ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে কথাবার্তা অনেক দূর এগিয়েছে। আমি আশাবাদী।
প্র: এক বছর আগে মে-তেই কলকাতায় আপনার শেষ সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, ‘আমাকে মনে রেখে কী হবে, ভুলে যাওয়াই ভাল।’ সে-ই আপনি আবার আইএসএল নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন? ইস্টবেঙ্গল নিয়ে ভাবছেন?
মর্গ্যান: সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতিও বদলায়। এক বছর আগে পরিস্থিতি আলাদা ছিল, এখন আলাদা। আমি পেশাদার কোচ। যেখানে ভাল প্রস্তাব পাব, সেখানেই কোচিং করাব। আর আমি তো বলিনি যে, ভারতে আর কখনও কোচিং করাব না। আমাকে শুধু ভুলে যেতে বলেছি। আর এগিয়ে যাওয়ার জন্য সেটা খুব জরুরি। এখনও বলছি, যা দিয়েছি সেটা অতীত। ভুলে যাওয়াই ভাল। নতুন সাফল্যের খোঁজ করতে হয়।