ইস্টবেঙ্গলে ‘জোড়া ক্যাপ্টেন’ কাজ ভাগ করে নিলেন কর্তারা

সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার যত সিবিআইয়ের জালে জড়াচ্ছেন, ততই যেন ডামাডোল বেড়ে চলেছে ক্লাবে! পরিস্থিতি এখন এতটাই জটিল যে, দেবব্রতবাবুর মতো একা ক্লাবের ‘ক্যাপ্টেন’ হিসাবে এগিয়ে আসতে চাইছেন না কেউই। তাই আপাতত ‘জোড়া ক্যাপ্টেন’-ই ভরসা লাল-হলুদে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার যত সিবিআইয়ের জালে জড়াচ্ছেন, ততই যেন ডামাডোল বেড়ে চলেছে ক্লাবে! পরিস্থিতি এখন এতটাই জটিল যে, দেবব্রতবাবুর মতো একা ক্লাবের ‘ক্যাপ্টেন’ হিসাবে এগিয়ে আসতে চাইছেন না কেউই। তাই আপাতত ‘জোড়া ক্যাপ্টেন’-ই ভরসা লাল-হলুদে।

Advertisement

শুক্রবার ক্লাবের কর্মসমিতির সভায় ঠিক হয়, দৈনন্দিন কাজকর্ম সামলাবেন সচিব কল্যাণ মজুমদার। আর্মান্দো কোলাসোর টিমের দেখাশোনা করবেন ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য। তবে এতেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না কর্তারা। কার্যকরী কমিটির সদস্যদেরও ক্লাবের এই দুঃসময়ে জড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে নানা কাজে। ক্লাবে বাড়তি সময় দিতে বলা হয়েছে সবাইকে। ফুটবল সচিব ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকলে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত লোকজন নিয়মিত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মাঠে আসবেন। কারণ প্রায় সব সদস্যই মনে করছেন, কোচ এবং ফুটবলার সামলানোই এখন প্রধান কাজ।

ক্লাব প্রেসিডেন্ট প্রণব দাশগুপ্ত ছাড়া সবাই উপস্থিত ছিলেন এ দিনের সভায়। ডাকা হয়েছিল কমিটিতে না থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু সদস্যকেও। প্রেসিডেন্ট প্রণববাবু ফোনে জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থ। কিন্তু কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত কতটা কাজে দেবে, সেটা নিয়ে ক্লাবের অন্দরে অনেকেই সন্দিহান! আসলে সিবিআই নিয়ে মিডিয়া বা সংবাদপত্রে একের পর এক যে খবর বেরোচ্ছে তাতে ক্লাবের অনেকেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এ দিন বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে গিয়ে দেখা গেল ফিসফাস আর গুঞ্জন চলছে বিভিন্ন জায়গায়। ক্লাব লনে বা বাইরের রাস্তায় ছোট ছোট জটলা। শাসক গোষ্ঠীর অনেকেরই আশা ছিল, তাদের গ্রেফতার হওয়া শীর্ষকর্তা দ্রুতই জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু সে-ই আশা যত বিলীন হচ্ছে, ততই যেন বাড়ছে হতাশা!

Advertisement

আর এই সুযোগে ছন্নছাড়া বিরোধী গোষ্ঠী যে যার মতো করে আক্রমণ শুরু করেছে শাসক গোষ্ঠীকে। তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে ‘নতুন ক্যাপ্টেন’ সচিব কল্যাণের মন্তব্য। নিতুর সদস্যপদ বাতিলের দাবিতে ক্লাব সদস্যের কেউ-কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, “যদি সুদীপ্ত সেনের আজীবন সদস্যপদ বাতিল হতে পারে, তা হলে নিতুর নয় কেন?” কল্যাণবাবুর অবশ্য প্রতিক্রিয়া, “আম আর আমড়ার মধ্যে পার্থক্য আছে।” যা শুনে ক্লাবের প্রাক্তন সচিব আইনজীবী পার্থ সেনগুপ্ত বললেন, “এক কোটি সমর্থকের কথা উনি ভাবলেন না। এক তরফা সিদ্ধান্ত নিলেন। কর্তাদের চামড়া মোটা হতে পারে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সবার চামড়া মোটা হতে হবে, তার কোনও মানে নেই। যদি ওরা শর্তহীন ভাবে নিতুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, তা হলে এই মামলায় সবাইকেই ধরা উচিত।” আর বিরোধী গোষ্ঠীর আর এক কর্তা সুপ্রকাশ গড়গড়ি বললেন, “নিতু জড়িয়েছে। আমাদের ক্লাব তো জড়ায়নি। তাই এ ব্যাপারে ক্লাব সচিবের কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়। এতে ক্লাবের গায়ে কলঙ্ক লাগছে।” বিরোধীরা এই সুযোগে বাজার ধরার চেষ্টা করলেও তাঁরা এতটাই ছন্নছাড়া যে এককাট্টা হতে পারছেন না। কারণ সামনে কোনও নির্বাচনের সুযোগ নেই। তবে শোনা যাচ্ছে, জনস্বার্থ মামলা করার কথা ভাবছেন কেউ কেউ।

এ দিকে সকাল থেকেই দেবব্রতবাবুকে জেরা করার নানা খবর বেরোতে থাকে। তাতে শীর্ষকর্তা গোয়ার হোটেল ব্যবসায় লগ্নি করেছেন এবং একাধিক বার গোয়া গিয়েছেন, এই খবর বেরিয়ে পড়ে। সেই অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয় ময়দান। গুঞ্জন ছড়ায় গোয়ার ছেলে টিমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর অ্যালভিটো ডি’কুনহার নাম নিয়েও।

ইস্টবেঙ্গল সচিবের অবশ্য দাবি, “আমাদের গোয়াতে প্রায়ই ম্যাচ খেলতে যেতে হয়। এমনকী ম্যাচের আগে হোটেল বুকিং এবং বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা করতে দু’চার দিন আগে থেকেই যেতে হয়। এতে তো কোনও অস্বাভাবিক কিছু আমি দেখছি না। আর গোয়া তো ট্রামের টিকিট নিয়ে যাওয়া যাবে না। প্লেনের বোর্ডিং পাস লাগে। মাসে একাধিক বার নিতু গোয়া গেলে সেই পাসগুলো নিশ্চয়ই থাকবে? গল্পে অনেক কিছুই হয়। আগে প্রমাণ হোক, তার পর দেখা যাবে!”

এ বিষয়ে অ্যালভিটোকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, “আমার জানা নেই গোয়ায় এ রকম কোনও হোটেল নিতুদার আছে বলে। আর যদি নিতুদার হোটেল থাকত, তা হলে টিম তো ওখানেই উঠত। টাকাও কম লাগত, সুবিধাও বেশি পেতাম।”

ক্লাবের এই চূড়ান্ত ডামাডোলের মধ্যেই আজ শনিবার ময়দানে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে পড়ছেন নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপার লিও বার্তোস। খেলা এরিয়ানের সঙ্গে। খেলায় ‘নিতুদা’-র প্রভাব পড়বে কি না তা সময় বলবে। তবে এরই মধ্যে আবার কোচ আর্মান্দো কোলাসো বলে দিলেন, “আমাকে বললে আমি পুরো ফুটবল টিমের দেখভালের দায়িত্ব নিতে পারি।”

কর্তাদের অবশ্য এ সব নিয়ে ভাবার সময় নেই। এক দিকে ক্লাবের শীর্ষকর্তার জন্য আইনজীবী ঠিক করতে হচ্ছে। অন্য দিকে ক্লাবের ফুটবল টিম চালানোর কথা ভাবতে হচ্ছে। সে জন্যই সম্ভবত ক্লাব সচিব বলে দিয়েছেন, “এটা পরে বিবেচনা করে দেখব।” কথা শুনলেই বোঝা যায়, কর্পোরেটের প্রাক্তন কর্তাও এখন একা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

শনিবারে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

ইস্টবেঙ্গল: এরিয়ান (যুবভারতী ৪-০০)

কালীঘাট এমএস: সাদার্ন সমিতি (কল্যাণী)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন