উপেক্ষা আর কত দিন

উচ্ছ্বসিত তবু ক্ষুব্ধ বঙ্গ ক্রিকেটমহল

তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে বিজয় হাজারে ট্রফি কোয়ার্টার ফাইনালে নামার দিন দুয়েক আগে অশোক দিন্দা হুঙ্কার দিয়েছিলেন, তিনি আর মহম্মদ শামি একসঙ্গে বল করা মানে বিপক্ষ চাপে থাকবে। সেটা যে স্রেফ ফাঁকা আওয়াজ ছিল না, মঙ্গলবারের ইডেনে প্রমাণ করে দিলেন দুই বঙ্গ পেসার। দিনের শেষে দুই পেসারের মিলিত বোলিং গড়টা এ রকম: ১৭.৫-৪-৩৮-৭!

Advertisement

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০২:৫৭
Share:

ইডেনে বিক্রম দিন্দা-লক্ষ্মীর। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে বিজয় হাজারে ট্রফি কোয়ার্টার ফাইনালে নামার দিন দুয়েক আগে অশোক দিন্দা হুঙ্কার দিয়েছিলেন, তিনি আর মহম্মদ শামি একসঙ্গে বল করা মানে বিপক্ষ চাপে থাকবে। সেটা যে স্রেফ ফাঁকা আওয়াজ ছিল না, মঙ্গলবারের ইডেনে প্রমাণ করে দিলেন দুই বঙ্গ পেসার। দিনের শেষে দুই পেসারের মিলিত বোলিং গড়টা এ রকম: ১৭.৫-৪-৩৮-৭!

Advertisement

যা দেখে বাংলা ক্রিকেটমহল এক দিকে উচ্ছ্বসিত, আবার একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ। উচ্ছ্বাসের কারণটা সহজবোধ্য। এত বছর পর এ রকম গনগনে পেস জুটি দেখে প্রভাবিত না হওয়াটাই বোধহয় অস্বাভাবিক। ক্ষোভটা অবশ্য জুটি নয়, তৈরি হয়েছে দিন্দাকে কেন্দ্র করে। আরও ভাল করে বললে, তাঁর প্রতি জাতীয় নির্বাচকদের উদাসীনতা কেন্দ্র করে। ইডেনে প্রেসিডেন্টস বক্সে বসা যে নির্বাচকেরা আবার এ দিন দিন্দার বিধ্বংসী বোলিংয়ের সাক্ষী থাকলেন! সাক্ষী থাকলেন জাতীয় দলে উপেক্ষিত বাংলার আরও তিন ক্রিকেটারের লড়াইয়ের। ঋদ্ধিমান সাহা, মনোজ তিওয়ারি এবং বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন বলে দিয়েছেন, জাতীয় দলের জন্য মনোজ-ঋদ্ধি-লক্ষ্মী-দিন্দাদের এ বার ভাবা যেতেই পারে। বাংলার রঞ্জিজয়ী দলের অন্যতম পেসার দত্তাত্রেয় মুখোপাধ্যায় আবার আলাদা করে সওয়াল করছেন দিন্দার হয়ে। ভুবনেশ্বর কুমারের চেয়ে বেঙ্গল এক্সপ্রেস কোথায় আরও বেশি উন্নত, জনৈক জাতীয় নির্বাচককে সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন বাংলার আর এক প্রাক্তন পেসার বরুণ বর্মন।

Advertisement

বহু দিন হল ইডেনে গিয়ে খেলা দেখে ছেড়ে দিয়েছেন দত্তাত্রেয়। টিভিতেও বাংলার ম্যাচ বিশেষ দেখা হয় না। মঙ্গলবার অবশ্য তিনিও টিভি খুলে বসে পড়েছিলেন বাংলার বোলিং দেখতে। পেস জুটি নিয়ে মুগ্ধতার পাশাপাশি যিনি শুনিয়ে রাখলেন, “দিন্দার প্রতি জাতীয় নির্বাচকেরা যে অবিচারটা করছেন, তার জবাব কিন্তু ও আজ দিয়ে দিল।” শামি-দিন্দা নিয়ে তিনি বলছেন, “বাংলার বোলারদের সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্সের মধ্যে থাকবে আজ দিন্দা-শামির বোলিং। দিন্দা বরাবরই বাংলার হয়ে ভাল বল করেছে। কিন্তু তামিলনাড়ুর মতো হেভিওয়েট টিমকে একশোর মধ্যে শেষ করে দেওয়াটা বিশাল ব্যাপার। ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, বাংলার জোরে বোলিংটা ভাল হাতেই আছে।” এখানেই না থেমে সঙ্গে সংযোজন, “শিশির ফ্যাক্টরের জন্য বল অনেক বেশি মুভ করে। আর মুভমেন্ট থাকলে ঠিক জায়গায় বল করা খুব কঠিন। সে রকম পিচে দিন্দা-শামি দারুণ নিয়ন্ত্রণ রেখে বল করল। আমরা যখন বোলিং শেখাই, তখন সব সময় বলি যে ভাল উইকেটে বল করা সবচেয়ে কঠিন। শামি-দিন্দা ঠিক সেটাই করে দেখাল আজ। ওরা যে ভাবে বোলিং শুরু করল, ওখানেই বিপক্ষকে শেষ।”


ইডেনে হাজির থাকা অন্যতম দুই নির্বাচক: বিনি ও রাঠৌর।

বরুণ বর্মন আরও আক্রমণাত্মক। বলছেন, “রাজিন্দর সিংহ হংসের (জাতীয় নির্বাচক) সঙ্গে কথা হল আজ। ওঁকে বলেছি, ভুবনেশ্বরের চেয়ে আমাদের দিন্দা অনেক বেশি ভাল। আমার দেখা বাঙালি বোলার বহু দিন পরে এমন বল করল। দেখুন, উইকেটে ঘাস থাকলেই উইকেট পাওয়া যায় না। বুদ্ধি দিয়ে বল করতে হয়। যেটা আজ শামি-দিন্দা করে গেল। শামি দু’দিকেই বল মুভ করিয়েছে। আর দিন্দা বিপক্ষকে শুইয়ে দিয়েছে স্রেফ পেসে। আর আউটসুইং করিয়ে।” এখানেই শেষ নয়। বরুণ আরও বলে দিচ্ছেন, “ছোটবেলায় সুব্রত গুহ, সমর চক্রবর্তীর বোলিং দেখেছি। আমার দেখা বোলারদের মধ্যে দিন্দা-শামি জুটিকে উঁচু জায়গায় রাখব। দুই বা তিন নম্বরে। আমার টিমে যদি এই দু’জনকে পেতাম, যে কোনও দলকে শুইয়ে দিতাম!”

দিন্দা-শামিদের প্রায় সমসাময়িক দুই বঙ্গ পেসার দল নির্বাচন বিতর্কে ঢুকতে চান না। তাঁদের গলায় শুধুই দিন্দা-শামি নিয়ে উচ্ছ্বাস। ক্লাবহাউসে অরিন্দম দাস, শুভময় দাসদের সঙ্গে ম্যাচ দেখা রণদেব বসু বলছিলেন, “বাংলার সর্বকালের অন্যতম সেরা পেস জুটি। আজ শামি সত্তর শতাংশ দিয়েছে, দিন্দা আশি শতাংশ। এই দু’জনের একশো শতাংশটা আজ বেরোলে তামিলনাড়ু ৭০-৮০ রানে অল আউট হয়ে যেত! তবে এই জুটিকে বাংলা কতটা পাবে, সেটাই বড় কথা।”

অসুস্থ শিবশঙ্কর পাল আবার মাঠে যেতে পারেননি। টিভিতে দেখেছেন তাঁর রঞ্জি টিমমেটদের যুদ্ধ। সন্ধেয় ফোনে বলছিলেন, “অনেক দিন ইডেন এ রকম পেস বোলিং দেখেনি। আসলে উল্টো দিক থেকে শামি বল করলে দিন্দা ওকে টপকে আরও ভাল বল করার বাড়তি মোটিভেশন পেয়ে যায়। যে ম্যাচটা জাতীয় নির্বাচকরা মাঠে বসে দেখছেন, লাইভ টিভিতে এত লোক দেখছে, সেখানে জাতীয় দলে থাকা বোলারকে ছাপিয়ে যাওয়ার তাগিদটা দিন্দাকে আরও তাতিয়ে দিয়েছিল মনে হয়। আর ওরা যে ভাবে বল করা শুরু করল, সেটা দেখে বাড়ির লোকদের বলেই দিয়েছিলাম, ১২৫-এর মধ্যে শেষ হয়ে যাবে তামিলনাড়ু।”

বাংলা পুরো মরসুমেই ভাল খেলছে। মঙ্গলবারও দারুণ খেলল। নির্বাচকেরা এখানেই আছেন। নিজের চোখেই দেখলেন বাংলার ছেলেদের পারফরম্যান্স। এ বার তো দিন্দা, লক্ষ্মী, মনোজ, ঋদ্ধিদের নিয়ে ভাবা উচিত।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

ঠাসা সূচি নিয়ে সমস্যা হয় না। বাড়িতে বসে থাকার চেয়ে ম্যাচ খেলা অনেক ভাল। বাংলার জন্য শুভেচ্ছা রইল। মিস করেঙ্গে টিমকো।
মহম্মদ শামি

শামি আর আমি একসঙ্গে বল করলে বিপক্ষ ভেবে পায় না, কাকে ছেড়ে কাকে সামলাবে! আমাদের জুটি সত্যিই দুর্দান্ত।
অশোক দিন্দা

লক্ষ্মীরতন শুক্ল

৫০ বলে ৩০ রান, ৮ ওভারে ৩০ রানে ১ উইকেট

অশোক দিন্দা

৯ ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন