ফকল্যান্ড বিতর্ক উস্কে দিল আর্জেন্তিনা

এ বার আমাদের ক্ষমতা বোঝানোর পালা, চ্যালেঞ্জ এলএম টেনের

আটাত্তরে দেশের মাটিতে পাসারেলা, কেম্পেসদের বিশ্বকাপ জয় নিয়ে ব্রাজিলীয় মিডিয়ার কটাক্ষ কি লিওনেল মেসির কানে তুলে দিয়েছেন মারাদোনার দেশের ফুটবল সমর্থকরা? নাকি ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের দখল নিয়ে প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে আর্জেন্তাইন কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়া ড্রেসিংরুমেই একপ্রস্ত ভোকাল টনিক বিশ্বকাপের আগেই দিয়ে রেখেছেন?

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বুয়েনস আইরেস শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০৪:১৪
Share:

কোপাকাবানা বিচের লাগোয়া রাজপথে মেসির পুতুল। ছবি: উৎপল সরকার।

আটাত্তরে দেশের মাটিতে পাসারেলা, কেম্পেসদের বিশ্বকাপ জয় নিয়ে ব্রাজিলীয় মিডিয়ার কটাক্ষ কি লিওনেল মেসির কানে তুলে দিয়েছেন মারাদোনার দেশের ফুটবল সমর্থকরা?

Advertisement

নাকি ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের দখল নিয়ে প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে আর্জেন্তাইন কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়া ড্রেসিংরুমেই একপ্রস্ত ভোকাল টনিক বিশ্বকাপের আগেই দিয়ে রেখেছেন?

বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক চার দিন আগে প্রস্তুতি ম্যাচে স্লোভেনিয়াকে ২-০ হারিয়ে মেসি, আগেরেদের কথাবার্তায় যে তারই ইঙ্গিত!

Advertisement

রিকোর্দো আলভারেজ এবং অধিনায়ক মেসির গোলে শনিবারই স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে জিতেছেন সাবেয়া। দ্বিতীয়ার্ধে দলের প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখে নিতে মেসি, দি’মারিয়া, আগেরোদের নামিয়েছিলেন আর্জেন্তিনা কোচ। সেই ম্যাচ জেতার পরে ব্রাজিলে পা রাখার আগে হঠাৎই বিস্ফোরক মেসি। বলেছেন, “এ বারের বিশ্বকাপ কেরিয়ারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কারণ বিশ্বকাপটা ব্রাজিলের মাটিতে। দলের সবাই মুখিয়ে রয়েছে ভাল কিছু করতে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে শেষ দশটা ম্যাচের যে দু’টোতে মাঠে নেমেছি তাতে হেরে ফিরিনি। তাই বিশ্বকাপেও আশা রাখছি। এ বার আমাদের ক্ষমতা বোঝানোর পালা।” আলবিসেলেস্তে (জাতীয় দলকে এ নামেই ডেকে থাকেন আর্জেন্তিনার সমর্থকরা) অধিনায়ক সঙ্গে এটাও বলতে ভোলেননি, “জানি, বিশ্বকাপ জিততে গেলে সামনে কঠিন লড়াই। তাই ধাপে ধাপে এগোতে হবে আমাদের। আর ভাল কিছু করার বিশ্বাস সাবেয়া সকলের মনে গেঁথে দিয়েছেন। সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা এককাট্টা।”

মেসির দাপটের দিনে ম্যাচ খেলতে নামার আগে
ফকল্যান্ড-ফেস্টুন নিয়ে আর্জেন্তিনা। ছবি: রয়টার্স।

কিন্তু আক্রমণাত্মক আলবিসেলেস্তে ব্রিগেডের এই বিশ্বকাপ সংকল্পে ব্রাজিলীয়রা গা ভাসাবে কেন? সেটাই আবার বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে নেইমারদের দেশে। ব্রাজিলে পা দিয়েই মেসিরা শিবির করবেন সিদাদে দো গালোতে। যা ব্রাজিলের অন্যতম বিখ্যাত ক্লাব আটলেটিকো মিনেইরোর আঁতুরঘর। সেখানকার রাজপথে বিমানবন্দর থেকে আর্জেন্তিনার শিবির পর্যন্ত আবার নীল-সাদা বড় বড় সব তোরণ। যার গায়ে লেখা, “আনন্দে ভরা এই জায়গাতেই স্বাগত ভবিষ্যতের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।” বিশ্বকাপ শুরুর আগে মেসিদের ‘ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেওয়া নিয়েই যত শোরগোল। কেউ বলছেন এটা ব্রাজিলীয় আয়োজকদের এক ঢিলে দুই পাখি মারার নতুন খেলা। বিশ্বকাপের আগেই আর্জেন্তিনাকে অতিথি পরায়ণতা দেখানোর সঙ্গে আত্মতুষ্ট করে দেওয়াও যাবে। আবার কেউ বলছেন, ভবিষ্যৎ বলতে পরের বিশ্বকাপ বলা হচ্ছে, ২০১৪ নয়।

কিন্তু লা মালভিনাস সান আর্জেন্তিনাস ফেস্টুন? স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরুর আগে বুয়েনস আইরেসের এস্তাদিও ইউনিকো স্টেডিয়ামে এটাই যে মেলে ধরল গোটা আলবিসেলেস্তে ব্রিগেড। স্প্যানিশ ওই শব্দগুলোর অর্থ - ফকল্যান্ড আর্জেন্তিনার। আর্জেন্তিনার জনতা ফকল্যান্ডকে মালভিনাস বলেই ডেকে থাকে। আর্জেন্তিনার দক্ষিণ উপকুলের লাগোয়া আটলান্টিক মহাসাগরে এই দ্বীপপুঞ্জের দখল সেই ১৮৩৩ সাল থেকেই ব্রিটিশদের হাতে। যা নিয়ে আর্জেন্তিনা-ইংল্যান্ডের বৈরিতা বিশ্ব রাজনীতিতে কারও অজানা নয়। ১৯৮২ সালে যে কারণে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল দু’দেশ। যাতে মারা গিয়েছিলেন ২৩৫ জন আর্জেন্তাইন সেনা। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সেনা পাঠানো নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল গোটা আর্জেন্তিনা। চার বছর পর ১৯৮৬-র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ‘ঐশ্বরিক গোল’ করার পর ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনাও বলেছিলেন, “বিলার্দো মাঠে নামার আগে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ফকল্যান্ডে ব্রিটিশ সেনাদের গুলিতে আর্জেন্তিনার শহিদ বীর যোদ্ধাদের অন্তিম সংগ্রাম। ব্রিটিশ বোমায় নিহত আর্জেন্তিনার শিশুদের মুখগুলো। দ্বিতীয় গোলটা করার সময় প্রয়াত সেনা এবং শিশুদের মুখগুলো ভাসছিল।” এ বারও হঠাৎ ফকল্যান্ড প্রসঙ্গ খেলার মাঠে উঠে আসায় শুরু হয়েছে হাজারো জল্পনা সাবেয়া কি তা হলে মেসিদের তাতাতে বিলার্দো মডেল ধার করলেন? নাকি মিডিয়ার বন্ধুদের পরামর্শে এই ফেস্টুনের আমদানি? শোনা যাচ্ছে বিশ্বকাপে প্রতি খেলার আগে এই ফেস্টুন মাঠে নিয়ে নামতে পারেন মেসিরা। কারণ সাম্প্রতিক কালে সব ম্যাচের আগেই এই ফেস্টুন ড্রেসিংরুম থেকে হাজির হয়ে যাচ্ছে মাঠের ভিতর। বিশ্বকাপে এখন এই ফেস্টুন নিয়ে মাঠে নামার ব্যাপারে ফিফা আর্জেন্তিনাকে অনুমতি দেয় কি না এখন সেটাই দেখার।

সাবেয়া যদিও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বরং খুশি তাঁর জমানায় এ পর্যন্ত আর্জেন্তিনার ২৫ টি ম্যাচের মধ্যে ২১ বার মেসির পা থেকে গোল আসায়। একই সঙ্গে আশ্বস্ত মাসচেরানোর ডিস্ট্রিবিউশন এবং আক্রমণে মেসি-মারিয়া-আগেরো ত্রিভুজের সাইক্লোনে। বলকান দলটির বিরুদ্ধে গোলে সের্জিও রোমেরোর ফর্মও আস্থা দিয়েছে মারাদোনার দেশের কোচকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন