ফলো অনের পরে বাংলাকে টানছেন দুই ওপেনার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ঠিক তেরো মাসের ব্যবধান। প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি আর বিপক্ষ বদলে গেলেও ওঁরা পাল্টাননি। অরিন্দম দাস ও রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় সেই লড়াই-ই লড়ছেন।
দুই ওপেনারের লড়াই সে বার বাংলাকে এক বিশাল ইনিংসের ভিত গড়ে দিয়েছিল। তেরো মাস পর আবার লড়ছেন তাঁরা। কিন্তু দলকে ইনিংস হার থেকে বাঁচাতে। মুম্বইয়ের মুখ থেকে ছ’পয়েন্ট ছিনিয়ে নিজেদের ঘরে এক পয়েন্ট আনতে।
দিল্লির পালাম গ্রাউন্ডে সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে ২০১৩-র ২৮ নভেম্বর যে ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল ডন-রোহনকে (১২৯-এর পার্টনারশিপ), মঙ্গলবার ইডেনেও একই ভূমিকায় তাঁরা। কিন্তু এই লড়াই আরও কঠিন। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। দেওয়াল থেকে পিঠ তোলার জন্য। বুধবার ৭৫ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলার ব্যাটসম্যানরা সারা দিন উইকেটে পড়ে থাকতে না পারলে সরাসরি হার।
বিকেলে ক্লাবহাউস থেকে বেরোতে বেরোতে নির্বাচকদের প্রধান রাজু মুখোপাধ্যায় বললেন, “এই পার্টনারশিপটা ওরা এক দিন আগে খেললে কত ভাল হত বলুন তো।” তার একটু পরেই শুকনো মুখে ইডেন ছাড়লেন মুম্বই কোচ প্রবীণ আমরে। হাতের মুঠোয় আসা ছ’পয়েন্ট হাতছাড়া হওয়ার দুশ্চিন্তা তাঁর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট। বাংলার ব্যাটসম্যানরা বুধবার একই মেজাজে থাকলে হয়তো তিন পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে তাঁদের। ইনিংসে হারলে যে বাংলার ভাগ্যে কিছুই জুটত না, সেই বাংলা শিবিরে তাই এখন এক পয়েন্টের আশা।
চলতি রঞ্জি ট্রফি ম্যাচের তৃতীয় দিনের খেলা যখন বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগেই আলোর অভাবে বন্ধ হয়ে গেল, তখন ইডেনের হোম প্যাভিলিয়ন থেকে বেরিয়ে দুই ওপেনারের পিঠ চাপড়ে দিলেন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল। ‘দের আয়ে, পর দুরুস্ত আয়ে’। ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’— এই প্রবাদগুলো যে অবশেষে তাঁদের মনে পড়েছে, অভিনন্দনের বেশিরভাগটা বোধহয় সেই কারণেই। মুম্বইয়ের ৪১৪-র জবাবে ২১০-এ অল আউট হয়ে ফলো অন করা বাংলাকে ফের বেকায়দায় ফেলবে বলে ঠিক করেছিল মুম্বই। সোজাসাপ্টা ইনিংস জয়ের পরিকল্পনা। কিন্তু সেই নীল-নকশার দফা-রফা বাংলার ওপেনিং জুটির দাপটে। যে মুম্বই পেসাররা সোমবার ইডেন দাপিয়েছিলেন, সেই তাঁদেরই এ দিন বিকেলে হতাশায় ডুবতে দেখা গেল। দুপুরে একটা ভুল, অরিন্দমের (তখন ছয়ে) দেওয়া ক্যাচ গালিতে শ্রেয়স আইয়ারের ফস্কানো। তাতেই এই বিপত্তি। অরিন্দমের এক ডজন চারে সাজানো ৮০ ও রোহনের ৪৪-এ অক্সিজেন পেয়ে যায় বাংলা।
গত মরসুমে দিল্লির সেই ১২৯-এর পার্টনারশিপ ছাড়া জয়পুরে ডন-রোহনের ৯২, ইডেনে ৮৫ ও ৭০ এবং তার আগের মরসুমে মুম্বইয়ে ১১৬, এবং ২০০৯-এ ১৮৬-র জুগলবন্দির অভিজ্ঞতাও রয়েছে। সেই রসায়নই এ দিন ফের কাজে লাগল নিলেন এই ডান-বাঁহাতি কম্বোর। কয়েক দিন আগেই ভিভিএস লক্ষ্মণ এই দু’জনকে আলাদা করে ডেকে ক্লাস নিয়েছিলেন। সেটাই বোধহয় তাঁদের কাজে লাগল এ দিন।
দলের সেরা ব্যাটিং ভরসা মনোজ তিওয়ারি ডন-রোহন জুটি ছাড়াও ধন্যবাদ দিলেন সহজ হয়ে আসা উইকেটকেও। কোচ অশোক মলহোত্র অবশ্য বললেন, “শুধু উইকেটের কথা কেন বলব? আমার দুই ওপেনারের কৃতিত্বও কম নয়।” আগের দিন মনোজ তিওয়ারি ছাড়াও আর একজন বাংলার টপ অর্ডারকে দেখান ইডেনের উইকেটে কোনও জুজু নেই। তিনি তরুণ অভিমন্যূ ঈশ্বরন। এ দিন তিনি ৮৫-তে ফিরে যাওয়ার পরই বাংলা ফলো অন করে।
ঘরের মাঠে পরপর দুই ম্যাচে ফলো-অন করায় না কি অস্ট্রেলিয়ায় থাকা যুগ্মসচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বেশ চটেছেন। সিএবি সূত্রের খবর, নির্বাচকদের তিনি পরের ম্যাচে চার-পাঁচটি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মুম্বই ৪১৪ (আইয়ার ১৫৩, নায়ার ৬৫, লাড ৬৪, বীরপ্রতাপ ৩-১১৪, লক্ষ্মী ৩-৫৮)
বাংলা ২১০ (মনোজ ৬৩, ঈশ্বরন ৮৫, শার্দূল ৫-৫৯) এবং ১২৯ (অরিন্দম ৮০ ন.আ, রোহন ৪৪ ন.আ)।