কুড়ি ওভারে ২৬১।
৬৪ বলে দেড়শো।
পঞ্চাশ ওভারে ৪০৮!
স্ট্যাট্সগুলো নিজের চোখে দেখেও যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। আর কলামটা লিখতে গিয়ে কী বলব, বুঝতেও পারছি না। বিশ্বাস করুন, একটা টিম পঞ্চাশ ওভারে চারশো তুলে দিচ্ছে, এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতোই অবিশ্বাস্য। সকাল-সকাল এবি ডে’ভিলিয়ার্সের তাণ্ডব দেখে উঠেছি। এখন বিকেল পেরোতে চলল, তবু সেটা হজম করতে পারছি না!
কী করব বলুন? আমরা যখন ক্রিকেটটা খেলতাম, তখন আড়াইশো তুলতে পারলেই মনে হত, ব্যস, ম্যাচ আমরাই জিতছি। আর এখন! রোহিত শর্মা একাই ২৬৪ তুলে দিচ্ছে। ক্রিস গেইল দেড়শোটা বলও না খেলে ডাবল সেঞ্চুরি করছে। আমার মতো লোকের কাছে এগুলো বিশ্বাস করা একটু কঠিন তো হবেই। অবশ্য এই ঘোরের মধ্যেও একটা আফসোস উঁকি মারছে— আমি যদি এখন ব্যাট-প্যাড পরে মাঠে নেমে পড়তে পারতাম!
যাক গে, টিভিতে এ রকম ইনিংস দেখতে দেখতে আমার এ সব মনে হতে পারে। এটা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে একটু ইয়ার্কি করলেই বা কী। কিন্তু হাসিঠাট্টার মধ্যে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না— এখনকার বোলারদের অবস্থা। আইসিসি এই যে সব নিয়ম চালু করেছে, তাতে ক্রিকেট আর ব্যাট-বলের খেলা নেই। আস্তে আস্তে পুরোটাই ব্যাটের ভেলকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র চারজন ফিল্ডার সার্কেলের বাইরে নিয়ে কোন স্পিনার বল করতে চাইবে বলুন? একে তো ব্যাটগুলো আধুনিক হতে হতে ক্রমশ ভয়ঙ্কর হচ্ছে। তার উপর নিয়মের ধাক্কা। বেচারা বোলারদের কীই বা করার থাকবে এর পর? আজ জেসন হোল্ডারকে দেখে তো রীতিমতো দুঃখ হচ্ছিল। এক সময় ওর গড় দেখলাম পাঁচ ওভারে ৯। সেখান থেকে ম্যাচের শেষে দশ ওভারে ১০৪! পরে দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহির ছেলেটা ভাল বল করল। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনও দিনই লেগ স্পিন সে ভাবে সামলাতে পারেনি। এটা জানি বলেই বারবার বলে আসছি, ভারতীয় টিমে একজন লেগ স্পিনার দরকার ছিল।
তবে এত কিছু বললাম বলে ভাববেন না এবির ইনিংসটাকে ছোট করতে চাইছি। ও বিশ্বমানের প্লেয়ার। কোথায় একটা পড়েছিলাম, ভারতের কাছে নাকানিচোবানি খেয়ে এবি বলেছিল, ও চায় নিজের ঘরে বসে নিজের মনে একটু দুঃখ করতে। তখন জয়ের আনন্দে ওর কথার আসল মানেটা ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা বুঝতে পেরেছিলেন কি না জানি না। তবে আমার মনে হয়েছিল, চ্যাম্পিয়নরা এ ভাবেই নিজেদের মোটিভেট করে। হেরেছি, ঠিক আছে। এক বেলা সেটা নিয়ে না হয় দুঃখ করব। কিন্তু পরের দিন থেকে আবার নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাটাও বাদ দেব না।
এবির মতো প্লেয়ার আসলে সব সময় সেরা হতে চায়। নিজের খেলাটাকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চায়। ওর গেম রিডিং অতুলনীয়। আর আজকের ইনিংসটার কথা মনে করে দেখুন, অক্রিকেটীয় শট প্রায় নেই-ই। দেখে কে বলবে, সিডনির পিচটা স্লো, টু-পেস্ড ছিল! এবি আজ মাঝেমধ্যে ভিভের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। লয়েডের মধ্যেও এই বোলার খুন করার ‘প্রতিভা’ দেখেছি। কিন্তু ওই যে বললাম, তখনকার দিনে এ সব স্কোরের কথা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না।
লেখাটা অবশ্য এবিকে দিয়ে শেষ করব না। করব, আইসিসির কাছে একটা আন্তরিক আবেদন রেখে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সীমিত ওভারের ক্রিকেটের নিয়ম নিয়ে নতুন করে ভেবে দেখার আবেদন। দেখুন, মাঠে যাওয়ার সময় আমি নিশ্চয়ই চাইব দুর্দান্ত ব্যাটিং দেখতে। কিন্তু একই সঙ্গে চাইব ভাল বোলিংও। আইসিসি বোধহয় ভুলে যাচ্ছে, এ ভাবে চলতে থাকলে ক্রিকেটের স্পিরিটটাই শেষ হয়ে যাবে। কারণ এ সব দেখার পর অনেক তরুণ বোলারই তো বোলিং ছেড়ে দিতে চাইবে।
কোনও বাচ্চা ছেলে যদি আমাকে এসে বলে স্যর, বোলার হয়ে কী হবে? তার চেয়ে ব্যাটিংয়েই মন দিই, তখন তাকে আমি কী উত্তর দেব?
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০৮-৫ (এবি ১৬২*, গেইল ২-২১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫১ (হোল্ডার ৫৬, তাহির ৫-৪৫)।