আজ নাইট বনাম রয়্যালস

ওপেনিং থেকে সরে গিয়ে অপমান করেছি নিজের অধিনায়ক সত্তাকে

কেকেআরের অন্দরমহলের সব খবর নিয়ে পূর্ব ভারতে একমাত্র আনন্দবাজারে কলম ধরছেন নাইটদের ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীরপৃষ্ঠা সংখ্যা ৮, আমার সামনে আন্দ্রে আগাসির আত্মজীবনী খোলা। সেই জায়গাটা, যেখানে টেনিস কিংবদন্তি তাঁর খেলাটার সঙ্গে জীবনের তুলনা করেছেন। লিখেছেন, ‘টেনিসে জীবনেরই ভাষা রয়েছে অ্যাডভান্টেজ, সার্ভিস, ফল্ট, ব্রেক, লাভ। টেনিসের প্রাথমিক জিনিসগুলো সবই রোজকারের জীবনেরও অঙ্গ...।’ কী ভাবে প্রতিটা ম্যাচ একটা জীবনেরই মিনি সংস্করণ তার বর্ণনা দিয়েছেন আগাসি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮, আমার সামনে আন্দ্রে আগাসির আত্মজীবনী খোলা। সেই জায়গাটা, যেখানে টেনিস কিংবদন্তি তাঁর খেলাটার সঙ্গে জীবনের তুলনা করেছেন। লিখেছেন, ‘টেনিসে জীবনেরই ভাষা রয়েছে অ্যাডভান্টেজ, সার্ভিস, ফল্ট, ব্রেক, লাভ। টেনিসের প্রাথমিক জিনিসগুলো সবই রোজকারের জীবনেরও অঙ্গ...।’ কী ভাবে প্রতিটা ম্যাচ একটা জীবনেরই মিনি সংস্করণ তার বর্ণনা দিয়েছেন আগাসি। বলেছেন, কয়েকটা পয়েন্ট একটা গেম জেতায়। কয়েকটা গেম একটা সেট জেতায়। কয়েকটা সেট একটা ম্যাচ জেতায়। ঠিক যেমন জীবনেও কিছু সেকেন্ড মিলে একটা মিনিট তৈরি হয়। কিছু মিনিট মিলে একটা ঘণ্টা তৈরি হয়। কিছু ঘণ্টা মিলে একটা দিন তৈরি হয়। এবং দিনের শেষে আমাদের উপরই নির্ভর করে যে, সেই দিনটা আমাদের জীবনের অন্ধকারময় দিন হবে, না কি সেরা!

Advertisement

আমি যেটা খেলি সেই ক্রিকেটের বর্ণনায় আমার মতে এত অলঙ্কার, এত পয়েন্টের জায়গা নেই। তবে ক্রিকেটের চরিত্রটাও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খুব কাছাকাছিই। একটা ভুল হল তো সব শেষ। যেমনটা ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে হয়। জীবনেও তেমনই কোনও ভুলের খেসারত অনেক সুদূর প্রসারী হয়ে ওঠে। সফল জীবন গড়ে তোলার পিছনে ধৈর্য, সততা, বিনয় আর কঠিন পরিশ্রম থাকে। কঠিন পরিস্থিতিতে যেমন সন্ন্যাসিনীর মতো ধৈর্যের দরকার, তেমনই ক্রিকেটজীবনও গড়ে ওঠে ওই সব গুণাবলীতে ভর রেখে।

তবে আমরা, কলকাতা নাইট রাইডার্স একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ইতস্তত করেছি। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের সঙ্গে আমাদের শেষ ম্যাচে আমার ব্যাটিং অর্ডারে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি একটু দ্বিধায় ছিলাম। আমার মনে হয়, এর ফলে শুধু আমাকে ডাগআউটে নিজের সুযোগ আসার জন্য উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে তাই নয়, বরং বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এটা মণীশ পাণ্ডের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। যে কি না নিশ্চিত ভাবে তিন নম্বরে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার যাবতীয় দায় আমি নিচ্ছি। আমি দেখতে চেয়েছিলাম, ব্যাটিং অর্ডারে নীচের দিকে নেমে আমি নিজের ফর্ম ফিরে পাই কি না।

Advertisement

আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে বৃহত্তর ছবিটা ছিল, যদি আমি তিন নম্বরে নেমে বড় রান পেতাম আর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতাম, তা হলে নিশ্চিত ভাবে সেটা যেমন টিমের জন্য ভাল হত, তেমনই আমি পরের ম্যাচে আবার ওপেনিংয়ে ফিরে যেতে পারতাম। কিন্তু পাশাপাশি একটা সমান গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আমরা এড়িয়ে গিয়েছি ব্যাটিং অর্ডারের এই বদল দলের অন্য ব্যাটসম্যানরা কী চোখে দেখবে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর ফলে আমি নিজের মনের ভেতরে আমার ক্যাপ্টেন-সত্তার অবমাননা করেছি বলে মনে করি। আমার উচিত ছিল, চ্যালেঞ্জটাকে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করা। যেমন ওপেন করছিলাম, সে ভাবে ওপেনার হিসেবেই নিজের ফর্ম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করা। তবে দিনের শেষে ম্যাচটা আমাদেরই জেতা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদের উপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে ফেলেছিলাম।

টুর্নামেন্টটা দ্রুত আমিরশাহিতে আমাদের শেষ ম্যাচে এনে ফেলেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজস্থান রয়্যালসকে পছন্দ করার মতো অনেক কিছু আছে। শুরুতেই ওদের দলের সংস্কৃতির কথা বলা দরকার। এর মধ্যে এক দিন ইউটিউবে দেখছিলাম, রাহুল দ্রাবিড় ওদের টিমের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড শেন ওয়াটসনকে পরিয়ে দিচ্ছে। অনেকটা যেমন ফুটবল মাঠে দেখে আমরা অভ্যস্ত। আমার দেখে দারুণ লাগল যে, রাহুল ভাই, শেন আর ওদের গোটা ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ রাজস্থান রয়্যালসের শীর্ষপদে বদলটার গুরুত্ব কী সুন্দর ভাবে বুঝেছে! ক্রিকেট বলুন বা জীবন, আমি সব সময় ঐতিহ্যের ভীষণ রকম সমর্থক। আমার মতে, এ রকম ছোট ছোট ঘটনাগুলো রাজস্থান রয়্যালস হয়ে ওঠার পিছনে অনেক কিছু বলে দিচ্ছে।

এ বার আমি বলে ফেলি যে, আগের ম্যাচে ব্যাট করতে নামার সময় আমার বুক কেমন ধুকপুক করছিল! পালস্ বিট কতটা বেশি ছিল! সন্দীপ শর্মার প্রথম বলটা আমি স্রেফ দেখতে পাইনি। তবে বিশ্বাস করুন, মিচেল জনসনের বলে প্রথম রানটা নেওয়ার পরই আমি তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম...গোটা পৃথিবীকে বুঝে নেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম! কিন্তু আবার এক বার ব্যাপারটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না!

শুনছি, আমার রানগুলোকে (০, ০, ০, ১) নিয়ে সব শেষ যে জোকটা চলছে সেটা হল, আমি ‘বাইনারি কোডস্’ লিখছি। এলওএল (অট্টহাস্য)! এটা সত্যিই দারুণ মজার। এবং এর পর বলতেই হচ্ছে, ক্রিকেটে এ রকম জোকের মতো কিছু অলঙ্কার, কিছু পয়েন্ট আছে।

সিলি পয়েন্ট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন