ওভারে একটা বাউন্ডারি বেরোলে চাপ তৈরি হবে কী করে

চলতি টেস্ট সিরিজে ভারতের অবস্থা দেখে আশ্চর্যই লাগছে। টিমটা যা খেলছে, তাতে ০-২ পিছিয়ে থেকে মেলবোর্ন টেস্টে নামার কথা নয়। নেমেও অস্ট্রেলিয়াকে আবার কিছুটা অ্যাডভান্টেজে রেখে দেওয়ারও কথা নয়। বুঝতে পারছি না, স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়াকে ধোনিরা এত মাথায় তুলছে কেন? এরা স্টিভ ওয়র অস্ট্রেলিয়া নয়। রিকি পন্টিংয়েরও নয়। এদের এত অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার দরকার কী? ভারতের ভাগ্য ভাল, অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ড দিনের শেষে আড়াইশোয় পাঁচ দেখাচ্ছে। যাঁরা বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশন দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই আমার মতকে সমর্থন করবেন যে, রানটা এক সময় সাড়ে তিনশো উঠবে বলে মনে হচ্ছিল! সন্দেহ নেই, লাঞ্চের পর ইশান্ত-শামিরা ভাল বল করেছে। কিন্তু ওদের বোলিংয়ে এমন কিছু ভুলত্রুটি দেখতে পাচ্ছি, যা টিমের পরপর ডোবার পিছনে অনেকটাই দায়ী।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share:

ফের জ্বলে উঠল স্মিথের ব্যাট। ছবি: গেটি ইমেজেস।

চলতি টেস্ট সিরিজে ভারতের অবস্থা দেখে আশ্চর্যই লাগছে। টিমটা যা খেলছে, তাতে ০-২ পিছিয়ে থেকে মেলবোর্ন টেস্টে নামার কথা নয়। নেমেও অস্ট্রেলিয়াকে আবার কিছুটা অ্যাডভান্টেজে রেখে দেওয়ারও কথা নয়। বুঝতে পারছি না, স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়াকে ধোনিরা এত মাথায় তুলছে কেন? এরা স্টিভ ওয়র অস্ট্রেলিয়া নয়। রিকি পন্টিংয়েরও নয়। এদের এত অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার দরকার কী?

Advertisement

ভারতের ভাগ্য ভাল, অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ড দিনের শেষে আড়াইশোয় পাঁচ দেখাচ্ছে। যাঁরা বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশন দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই আমার মতকে সমর্থন করবেন যে, রানটা এক সময় সাড়ে তিনশো উঠবে বলে মনে হচ্ছিল! সন্দেহ নেই, লাঞ্চের পর ইশান্ত-শামিরা ভাল বল করেছে। কিন্তু ওদের বোলিংয়ে এমন কিছু ভুলত্রুটি দেখতে পাচ্ছি, যা টিমের পরপর ডোবার পিছনে অনেকটাই দায়ী।

শামি-উমেশরা প্রায় ওভারপিছু একটা করে বাউন্ডারি বল দিয়ে যাচ্ছে। গড়ে ওভারে সাড়ে তিন থেকে চার বার করছে। তুমি টেস্ট খেলছ। এটা রঞ্জি ট্রফি নয় যে একটা বাউন্ডারি বল দিলে পার পেয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা অপেক্ষা করে থাকে একটা লুজ ডেলিভারির জন্য। পেলেই বাউন্ডারি। শামিদের দেখে মনে হচ্ছে না যে, ওরা সেটা বুঝতে পারছে। এ দিনই দেখলাম শামি একই ওভারে একটা ফ্লিক থেকে বাউন্ডারি খেল, আবার কভার ড্রাইভেও খেল। সবাই ধোনির ক্যাপ্টেন্সিকে গালাগাল করে। আমাকে বলবেন, একই ওভারে যদি একটা বল ফ্লিকে আর একটা কভার ড্রাইভে বাউন্ডারিতে যায়, ক্যাপ্টেন ফিল্ডটা রাখবে কোথায়?

Advertisement

অথচ বহু দিন পর ভারত একটা অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছে এমন একটা টিম নিয়ে, যেখানে আমাদের তিন পেসার ঘণ্টায় একশো চল্লিশ প্লাসে বল করতে পারে। কিন্তু তার ফায়দা না তুলে উমেশরা এত রান দিচ্ছে ওভারে যে, চাপটাই তৈরি হচ্ছে না ব্যাটসম্যানের উপর। ডেল স্টেইনকে দেখুন। চার-পাঁচ ওভারে একটা করে হয়তো লুজ দেবে। ওর গতি কিন্তু শামির মতোই। কিন্তু কখনও ওভারে একটা করে খাবে না। স্টেইনরা ব্যাটসম্যানকে বাধ্য করে প্রেশার কুকার পরিস্থিতিতে নিজেদের ফেলে দিতে। দু’টেস্টের পরেও আমাদের বোলিংয়ে যেটা দেখছি না।

সবচেয়ে খারাপ লাগছে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং লাইনআপ দেখলে। মোটে দু’জন ব্যাটসম্যান ওদের। ওপেনিংয়ে ডেভিড ওয়ার্নার আর মিডল অর্ডারে স্টিভ স্মিথ। ক্রিস রজার্স গত টেস্টটায় শুধু দু’ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করল। তার আগে কিছু করেনি। শেন ওয়াটসন— ও যদি আজ কিছু না করতে পারত, সিডনি টেস্টে বাদ পড়ে যেত। শুক্রবার ওয়ার্নার পারেনি। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা রজার্সকে আরও একটা হাফসেঞ্চুরি করে যেতে দিয়েছে। ওয়াটসনকে দিয়েছে। আর স্মিথ এখন ৭২ ব্যাটিং।

প্রস্তুতি, প্ল্যানিংয়েও কিছু সমস্যা নিঃসন্দেহে হচ্ছে। ভারতীয় মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, ওরা প্রথম থেকেই টেস্ট জেতার কথা ভাবছে। সিরিজ জেতার কথা ভাবছে। সেশন ধরে এগোচ্ছে না। যেটা করলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমি যখন ভারতীয় টিমের সঙ্গে ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিলাম, স্যান্ডি গর্ডন আমাদের এটাই বোঝাতেন যে, একটা সেশন যদি শেষ পর্যন্ত জিততে না-ও পারো, তা হলে অন্তত উনিশ-বিশ অবস্থায় রেখে আসবে। তাতে পরের সেশনে কামব্যাক সম্ভব। কিন্তু তফাত যেন পনেরো-কুড়ির না হয়। ভারতের সমস্যা হল, ওরা খারাপ খেলছে না। কিন্তু একটা সেশন যখন হারছে, তফাতটা পনেরো-কুড়িও নয়, পাঁচ-কুড়ির দাঁড়াচ্ছে! ব্যাটসম্যানদের মানসিকতাও অবাক করার মতো। অস্ট্রেলিয়ার নিয়ম হল, প্রথম তিরিশটা ওভার সামলে দিলে বাকিগুলোও সামলানো যায়। কারণ ইংল্যান্ডের মতো এখানে ল্যাটারাল মুভমেন্ট হয় না। ভারতীয়রা এটাও মাথায় রাখছে না। বুঝতে পারছে না, তিরিশ ওভার টিকে থাকলে অস্ট্রেলিয়ার হাতে একটাই অস্ত্র পড়ে থাকবে। শর্ট বোলিং। সেটা যে করে, তাকে এখনও চেনা মিচেল জনসনের মতো দেখাচ্ছে না। ব্রিসবেনের চতুর্থ দিনের পরেও এটা বলছি।

ছোট ছোট কিছু রোগ। যা সারিয়ে ফেলা খুব কঠিনও না। কিন্তু সারানো যাচ্ছে না। মেলবোর্নের উইকেট যা দেখছি, এটা ব্যাটসম্যানেরই থাকবে। অস্ট্রেলিয়াকে যদি সাড়ে তিনশোয় আটকানো যায়, ভারতের সুযোগ থাকবে টেস্টটা জেতার। শনিবার সকালের ভারতকে আগাম শুধু দু’টো কথা বলতে চাই।

এক, জনসন-স্টার্কদের টেলএন্ডার ভেবো না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসায় ও সব কনসেপ্ট উঠে গিয়েছে। একই কিলার ইন্সটিংক্ট দেখাও, যা দেখিয়ে থাকো টপ অর্ডারকে বল করার সময়।

আর দুই, নাথন লিয়ঁ। এমসিজি-র উইকেট যা, লিয়ঁ সাহায্য পাবে। কিন্তু ওকে আর সাকলিনের মর্যাদা দিও না। সচিন-সৌরভরা মুরলীধরনকে পর্যন্ত রেয়াত করেনি। সেখানে টেস্ট জেতার জন্য একটা লিয়ঁ সামলানো না গেলে, সত্যিই কিছু বলার থাকবে না।

অস্ট্রেলিয়া

প্রথম ইনিংস

রজার্স ক ধোনি বো শামি ৫৭

ওয়ার্নার ক ধবন বো যাদব ০

ওয়াটসন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৫২

স্মিথ ব্যাটিং ৭২

মার্শ ক ধোনি বো শামি ৩২

বার্নস ক ধোনি বো যাদব ১৩

হাডিন ব্যাটিং ২৩

অতিরিক্ত ১০

মোট ২৫৯-৫।

পতন: ০, ১১৫, ১১৫, ১৮৪, ২১৬।

বোলিং: ইশান্ত ২১-৬-৫৪-০, যাদব ২০-২-৬৯-২,

শামি ১৭-৪-৫৫-২, অশ্বিন ২৭-৭-৬০-১, বিজয় ৫-০-১৪-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন