এ বার অন্তত গম্ভীরকে ভাবা হোক

কুকের সিদ্ধান্ত ঠিক প্রমাণ করতেই যেন নেমেছে ভারত

প্রায় আড়াইশো রানে এগিয়ে থেকেও অ্যালিস্টার কুক ভারতকে ফলো-অন করাল না দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল, ভারতীয় ব্যাটিংকে কি এতটাই হালকা ভাবে নিচ্ছে ইংল্যান্ড? বুধবার খেলার শেষে বলতেই হচ্ছে, ভারতীয় ব্যাটিং বোধহয় এই মুহূর্তে কুকের চেয়ে বেশি ভাল কেউ বোঝে না! আর কুকের যে সিদ্ধান্তটা খুব বেশি রক্ষণাত্মক হিসেবে সমালোচিত হতে পারত, সেটাকেই সঠিক প্রমাণ করে দিল আমাদের ব্যাটসম্যানরা।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৫
Share:

বিরাট কোহলি। ক্যাচ উইকেটরক্ষককে।

প্রায় আড়াইশো রানে এগিয়ে থেকেও অ্যালিস্টার কুক ভারতকে ফলো-অন করাল না দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল, ভারতীয় ব্যাটিংকে কি এতটাই হালকা ভাবে নিচ্ছে ইংল্যান্ড? বুধবার খেলার শেষে বলতেই হচ্ছে, ভারতীয় ব্যাটিং বোধহয় এই মুহূর্তে কুকের চেয়ে বেশি ভাল কেউ বোঝে না! আর কুকের যে সিদ্ধান্তটা খুব বেশি রক্ষণাত্মক হিসেবে সমালোচিত হতে পারত, সেটাকেই সঠিক প্রমাণ করে দিল আমাদের ব্যাটসম্যানরা।

Advertisement

টিভিতে যা দেখছি, তাতে আমার মনে হয় না সাউদাম্পটনের এই পিচে পাঁচটা সেশন টিকে থাকতে পারত না ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ মুভমেন্ট নেই। হালকা স্পট থাকলেও প্রায় ফ্ল্যাট উইকেট। সেখানে দেড় দিন ব্যাট করা কিন্তু খুব কঠিন হত না ভারতের পক্ষে। তরুণ ব্যাটসম্যানদের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, ম্যাচটা ড্র করে ভারতকে একটা নৈতিক জয় উপহার দেওয়ার। মুরলী বিজয়, চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলি, শিখর ধবনের মতো প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কাজটা কি খুব কঠিন ছিল? বিশেষ করে কাল সকালে পিচে রোলিং করাটা যখন ভারতের হাতে। পিচ কতটা রোল হবে, কতক্ষণ রোল হবে, সেটা ভারতই ঠিক করত।

কিন্তু ভারতের টপ অর্ডারের ধস দেখে আবার নতুন করে সব কিছু ভাবতে হচ্ছে। প্রথম ধাক্কাটা অবশ্যই পূজারা আর বিজয়ের উইকেট। যে দু’জন ক্রিজে পড়ে থেকে ম্যাচটা বের করতে পারত, তারাই সবার আগে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেল। কিন্তু তার পরেও মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা ভারত বের করে নিয়ে যেতে পারবে। বিরাট কোহলি, অজিঙ্ক রাহানে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা আছে। প্রথম দিকে শিখর ধবনকে দেখেও বেশ ভাল লাগছিল। কিন্তু এখন আবার মনে হচ্ছে, ওর নেটে ফিরে যাওয়া উচিত। পরের টেস্টে ওর জায়গায় গৌতম গম্ভীরকে না দেখলে আমি বেশ অবাকই হবো। কোহলি আবার অফস্পিনারের হাতে উইকেট দিয়ে এল। তা-ও আবার পার্ট-টাইম স্পিনার! ইন্টারনেটে দেখছিলাম, শেষ সাতাশটা টেস্টে এই নিয়ে এগারো বার অফস্পিনারের হাতে আউট হল কোহলি। ভারতীয় ব্যাটসম্যানের কাছে যেটা খুবই আশ্চর্য করে দেওয়ার মতো পরিসংখ্যান।

Advertisement

বিপর্যয়ের পথে। সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

সব দেখেশুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি। ভারত কি ৪৪৪ তাড়া করার প্রায় অসম্ভব সংকল্প নিয়ে নেমেছে? না হলে এই ব্যাটিংয়ের কী ব্যাখ্যা হয়? ক্রিকেট আই-কিউ বলে তো একটা ব্যাপার আছে। যার মানে আর কিছুই না, অবস্থা বুঝে খেলা। আমার টিম কোন অবস্থায় আছে, সেই বুঝে ব্যাটিংটা করা। যখন দেড়টা দিন ক্রিজে টিকে থাকার দরকার ছিল, সেই পরিস্থিতিতে এ ভাবে ব্যাট করার মানে হয় না। অ্যাপ্লিকেশনের ছিটেফোঁটা নেই। ম্যাচ বের করার খিদে দেখলাম না। লড়াই করার ইচ্ছে দেখছি না। অদ্ভুত, নির্বিকার ব্যাটিং।

দিনের শেষে ভারতের এই অবস্থার জন্য দায়ী কিন্তু ভারতীয়রা নিজেই। আরও ভাল করে বললে, প্রথম ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটিং। কেন? ওই ইনিংসে প্রত্যেক ব্যাটসম্যান খুব ভাল শুরু করল, আর করে মাত্র কুড়ি-তিরিশ রানের মাথায় উইকেট দিয়ে ফিরে গেল। ধোনির হাফসেঞ্চুরি বাদ দিলে ভারতীয় স্কোরবোর্ডটা পুরোটাই প্রায় একই রকম। সেখানে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসটা দেখুন। যারা ভাল শুরু পেয়েছে, তারা সেটাকে বড় একটা ইনিংসে রূপান্তরিত করে তবেই ফিরেছে। আরে, ক্রিকেট খেলাটার শুরু থেকেই তো বলে আসা হচ্ছে যে, ভাল শুরু পেলে ক্রিজে পড়ে থাকো। থেকে একটা বড় ইনিংস খেলে আসো। এই মানসিকতাটাই ইংল্যান্ড আর ভারতের প্রথম ইনিংসে, আর পরে গোটা ম্যাচেই বড় পার্থক্য গড়ে দিল।

শেষ দিনের চ্যালেঞ্জ। সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

যাই হোক, রোহিত শর্মার সামনে সম্ভবত ওর টেস্ট কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় সুযোগ। এখন যদি ও না পারে, তা হলে কবে পারবে? এ রকম পরিস্থিতিতে বড় ইনিংস শুধু দেশকে বাঁচাবে তা নয়। এমন ইনিংসের মর্যাদা সেই ক্রিকেটারের কাছেও অপরিসীম। আমার সেঞ্চুরির চেয়ে যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পোর্ট এলিজাবেথে ম্যাচ-বাঁচানো ওই ৬৩ রানের দাম অনেক বেশি।

ইংল্যান্ড

প্রথম ইনিংস ৫৬৯-৭ (ডিঃ)

ভারত

প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৩২৩-৮)

ধোনি ক বাটলার বো অ্যান্ডারসন ৫০

শামি ক বাটলার বো অ্যান্ডারসন ৫

পঙ্কজ ন.আ ১

অতিরিক্ত ৩৮

মোট ৩৩০।

পতন: ৩২৯, ৩৩০।

বোলিং: অ্যান্ডারসন ২৬.১-১০-৫৩-৫, ব্রড ২৫-৭-৬৬-৩,

জর্ডন ১৭-৪-৫৯-০, ওকস ২০-৮-৬০-০, আলি ১৮-০-৬২-২।

ইংল্যান্ড

দ্বিতীয় ইনিংস

রবসন ক ধবন বো ভুবনেশ্বর ১৩

কুক ন.আ ৭০

ব্যালান্স ক পূজারা বো জাডেজা ৩৮

বেল বো জাডেজা ২৩

রুট বো জাডেজা ৫৬

অতিরিক্ত

মোট ২০৫-৪ (ডিঃ)

পতন: ২২, ৮০, ১০৬, ২০৫।

বোলিং: ভুবনেশ্বর ১০-০-৫৯-১, পঙ্কজ ১০-৪-৩৩-০, শামি ৪-০-২৪-০,

রোহিত ৫-০-৩২-০, জাডেজা ১০.৪-১-৫২-৩, বিজয় ১-০-১-০।

ভারত

দ্বিতীয় ইনিংস

বিজয় রান আউট ১২

ধবন ক জর্ডন বো রুট ৩৭

পূজারা ক জর্ডন বো আলি ২

বিরাট ক বাটলার বো আলি ২৮

রাহানে ব্যাটিং ১৮

রোহিত ব্যাটিং ৬

অতিরিক্ত

মোট ১১২-৪।

পতন: ২৬, ২৯, ৮০, ৮৯।

বোলিং: অ্যান্ডারসন ৮-৩-১৩-০, ব্রড ৯-৪-১৮-০, ওকস ৫-২-৭-০,

আলি ১২-২-৩৩-২, জর্ডন ৫-০-২২-০, রুট ২-০-৫-১, ব্যালান্স ১-০-৫-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন