কাভানি-দুঃস্বপ্নের সঙ্গে আজুরিদের ভয় দেখাচ্ছে ‘কাউন্ট ড্রাকুলা’ও

উরুগুয়ের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের মরণবাঁচন ম্যাচের রেফারির নাম শুনলে যে কোনও ইতালি সমর্থকের মেরুদণ্ডে শিরশিরানি লাগতে পারে! মঙ্গলবারের এই ম্যাচের রেফারির নাম ফিফার সরকারি খাতায় আছে মার্কো রডরিগেজ। কিন্তু তাঁর নিজের দেশ মেক্সিকোর ফুটবলমহলে রডরিগেজ বেশি পরিচিত তাঁর ডাকনামেই ‘চিকি ড্রাকুলা!’ তেল চুকচুকে লম্বা চুল উল্টো করে আঁচড়ানোর জন্য। যা রডরিগেজের প্রিয়তম হেয়ারস্টাইল। একে ‘অশুভ ড্রাকুলা’। তার উপর রড্রিগেজের পুরো নাম, যেটা তাঁর পাসপোর্টে একমাত্র স্প্যানিশ ভাষায় পাওয়া যায়, তার মাঝের নামটা হল ‘মোরেনো’।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:৫২
Share:

উরুগুয়ের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের মরণবাঁচন ম্যাচের রেফারির নাম শুনলে যে কোনও ইতালি সমর্থকের মেরুদণ্ডে শিরশিরানি লাগতে পারে! মঙ্গলবারের এই ম্যাচের রেফারির নাম ফিফার সরকারি খাতায় আছে মার্কো রডরিগেজ। কিন্তু তাঁর নিজের দেশ মেক্সিকোর ফুটবলমহলে রডরিগেজ বেশি পরিচিত তাঁর ডাকনামেই ‘চিকি ড্রাকুলা!’ তেল চুকচুকে লম্বা চুল উল্টো করে আঁচড়ানোর জন্য। যা রডরিগেজের প্রিয়তম হেয়ারস্টাইল। একে ‘অশুভ ড্রাকুলা’। তার উপর রড্রিগেজের পুরো নাম, যেটা তাঁর পাসপোর্টে একমাত্র স্প্যানিশ ভাষায় পাওয়া যায়, তার মাঝের নামটা হল ‘মোরেনো’। যা দেখেশুনে প্রান্দেলি-বুফোঁর শিবির আরও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লে অবাক হওয়ার নেই। কারণ, ২০০২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে যে ম্যাচ হেরে ইতালি টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছিল, সেই ম্যাচের রেফারির নাম ছিল ব্রিয়ন মোরেনো। যিনি কিনা সেই ম্যাচে তোত্তিকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বার করে দিয়েছিলেন। আর অতিরিক্ত সময়ে টমাসির ‘গোল্ডেন গোল’ অফসাইডের অজুহাতে বাতিল করেছিলেন।

Advertisement

না হলে, এমনিতে গ্রুপের শেষ ম্যাচের ফলাফলের ভিত্তিতে নক আউটে ওঠার পরিস্থিতিটা বিশ্বকাপে ইতালির কাছে নতুন কিছু নয়। ১৯৯৮-এর পর ইতালি বিশ্বকাপে কখনও গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি। সব সময়ই শেষ ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে নক আউটের টিকিট জোগাড়ের জন্য। অধিনায়ক বুঁফো হয়তো সে জন্যই বলেছেন, “এটাই সেই পরিস্থিতি যেখানে আমরা ইতালি টিম সবচেয়ে ভাল ভাবে জবাব দিই। ঠান্ডা মাথা আর গরম হৃদয় দিয়ে খেলি। আর সেই খেলাটা সেরাই হয়।” কিন্তু নাতালের প্রাক-ম্যাচ বাস্তব ছবিটা ইতালির পক্ষে ভাল নয়। প্রস্তুতি ম্যাচের চোটে মন্টোলিভো ব্রাজিল বিশ্বকাপেরই বাইরে চলে যাওয়ার পর রোমার মিডফিল্ডার ড্যানিয়েল ডি রোসির-ও বাকি বিশ্বকাপ-ভাগ্য অনিশ্চিত। কোস্টারিকা ম্যাচে তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। উরুগুয়ে ম্যাচে তো নেই-ই। কাল ইতালি জিতে বা ড্র করে শেষ ষোলোয় উঠলে সেখানেও ডি রোসিকে সম্ভবত পাওয়া যাবে না। ফলে পুরো মাঝমাঠের দায়িত্ব আরও বেশি করে ঘাড়ে চাপছে ৩৫ বছর বয়সী গেমমেকার আন্দ্রে পির্লোর কাঁধে। যাঁকে ইতালি কোচ প্রান্দেলির কোস্টারিকার কাছে ০-১ হারা ম্যাচে মনে হয়েছে, কিছুটা ক্লান্ত। আমাজনের প্রান্তিক শহর মানাউসের গরমে ইংল্যান্ড ম্যাচে যেখানে প্রান্দেলির ছেলেরা পুরো ম্যাচে ১১০৪৬৭ মিটার দৌড়েছিলেন, সেখানে রেকিফে কোস্টারিকা ম্যাচে ৯০ মিনিটে মাঠে অতিক্রম করেন মোট ১০৪৪৭৫ মিটার। ইতালীয় মিডফিল্ডার থিয়াগো মোতা এখনই অজুহাত দিয়ে রেখেছেন, “রেকিফের উত্তরে নাতাল সমুদ্রতীরবর্তী শহর হলেও সেখানেও প্রচণ্ড গরমে আমাদের খেলতে হবে। ব্রাজিলের আবহাওয়া ইতালির কাছে অবশ্যই একটা প্রতিকূলতা।” ইতালি শিবিরের একজন অবশ্য নাদালের সমুদ্রসৈকতে খোশমেজাজে আছেন। তিনি মারিও বালোতেলির ব্রাজিলের মাঠে পারফরম্যান্সের ওঠা-নামা থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনের গ্রাফ শুধুই উর্ধ্বমুখী। উরুগুয়ে-যুদ্ধের ক্যাচলাইন ইতালির শক্তিশালী ডিফেন্স বনাম সুয়ারেজ-কাভানি জুটির ছুরির মতো ধারালো অ্যাটাক। সেখানে সুয়ারেজদের একমাত্র জবাব হতে পারতেন ‘সুপার মারিও’। কিন্তু বালোতেলি নাতালের প্র্যাকটিসে যেমন প্রচুর ঘাম ঝরিয়েছেন, তেমনই দিনের বাকি সময়টা টিম হোটেল ছেড়ে তাঁকে সমুদ্রসৈকতে বাগদত্তা ফ্যানি নেগুশাকে নিয়ে প্রবল ব্যস্ত থাকতেও দেখা গিয়েছে। চলছে সেলিব্রিটি প্রেমিক-প্রেমিকার বিয়ে পাকা হওয়ার সেলিব্রেশন। সে জন্যই কিনা কে জানে, উরুগুয়ের বিরুদ্ধে বালোতেলির বদলে সিরো ইমমোবাইলকে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসাবে শুরু থেকেই ইতালি কোচ খেলাতে পারেন বলে জোর জল্পনা। তা ছাড়া সেরি আ-তে এ মরসুমে সর্বোচ্চ ২২ গোল করা তোরিনোর ইমমোবাইল ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৭ মিনিট খেললেন কেন, তা নিয়েও প্রান্দেলিকে ছেড়ে কথা বলছে না ইতালীয় মিডিয়া।

কিন্তু ইমমোবাইলও কি সুয়ারেজ-কাভানি জুটির জবাব হতে পারবেন? উরুগুয়ের আক্রমণ রোধে প্রান্দেলি তাঁর প্রিয় তিন ব্যাক সিস্টেমে ভরসা রাখছেন জুভেন্তাস ত্রয়ীর উপর। চিয়েলিনি-বোনুচি-বারজালির বাড়তি বোঝাপড়া সুয়ারেজ-ঝড় আটকাতে পারবে বলে বিশ্বাস প্রান্দেলির। তবে ইতালির বোধহয় বেশি ভয়ের কারণ হওয়া উচিত কাভানি। এক বছর আগে ব্রাজিলে কনফেডারেশনস কাপের তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচ উরুগুয়ের বিরুদ্ধে বুফোঁর টাইব্রেকারে তিনটে পেনাল্টি সেভে ইতালি কোনওক্রমে জিতলেও, নির্ধারিত সময়ে ২-২ স্কোরলাইনে বিপক্ষের দু’টো গোলই ছিল কাভানির। সে জন্যই হয়তো অধিনায়ক বুফোঁর মন্তব্যটাই মরণবাঁচন ম্যাচের আগে বল জোগাতে পারে আজুরিদের “ইতালির জার্সিতে এটা আমার দশ নম্বর টুর্নামেন্ট। মাত্র একটা ছাড়া কোনও টুর্নামেন্টে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচের আগে আমরা নক আউটে ওঠার টিকিট পাইনি। সেই একটা হল ব্রাজিলেই গতবারের কনফেডারেশনস্ কাপ। যেখানে আমরা শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হই। আর সেই ব্রাজিলের মাঠেই সেই উরুগুয়ের সঙ্গেই তো ম্যাচ!”

Advertisement

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন